সৌদি আরব প্রথম আরব-চীন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করল গত ৯ ডিসেম্বর ২০২২, যা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের জন্য বেইজিংয়ের নতুন দৃষ্টিভঙ্গিও একটি বিরল ঘটনা। এই শীর্ষ সম্মেলন সমস্ত আরব রাষ্ট্র ও চীনকে একত্রিত করেছে। অনেক পর্যবেক্ষকই চীনের শি জিনপিংয়ের সাফল্যের কথা বলেছেন ও ছয় মাস আগে বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য, রিয়াদ সফরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। তখন বাইডেন ইসরাইলের পক্ষে লবিং করে সৌদি আরব সফর করেছিলেন।
দীর্ঘ দিন ধরে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, চীনা কূটনীতি কেবল মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সফল হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের কথা বলতে গেলে, বেইজিংয়ের এই অঞ্চলে তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পশ্চিমারা শত বছর ধরে তথ্য-উপাত্ত ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে যে ছক ও পরিকল্পনা করেছে বেইজিং তা পারবে কেন? তারা মনে করেন, আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্কোন্নয়নও চীনের পক্ষে সম্ভব নয়, কৌশলগত বন্ধনের সম্ভাবনাও নেই। এমন একটি কাটছাঁট সিদ্ধান্ত ইদানীং সমাপ্ত হয়েছে। চীনের বিষয়ে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়েও আরো বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন বলে মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন। ড. মাহাথির যুক্তরাষ্ট্রের একজন বড় সমালোচক। বিশেষত ইসরাইলকে সহায়তা করার জন্য তার এই সমালোচনা। তবে তিনি বাইডেনের প্রশংসা করে বলেন, তার সময় অনেক সম্পর্কের উন্নতি হবে যা ট্রাম্পের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে, জো বাইডেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি তার নাতনী নাওমিকে নিয়ে দুপুরের খাবারের জন্যে ‘চাওগান’ রেস্টুরেন্টে ঢোকেন। চীনের এই রেস্টুরেন্টটি পর্যটকদের কাছে প্রিয়। শি জিনপিং তখন চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বলতে গেলে তিনি সর্বক্ষণ বইডেনকে সঙ্গ দিয়েছেন, বাইডেনের হাসিমাখা ছবি অনেকবার চীনা পত্রিকায় ছাপা হয়। বাইডেন ২০১১ সালে ছয় দিনের চীন সফরে ছিলেন। ওবামা প্রশাসন লম্বা সফরের ব্যবস্থা করে যাতে শির সাথে বাইডেন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করতে পারেন। এই সফরে দু’ব্যক্তিত্ব ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটান বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। ছয় দিনের সফরে তিন দিন জো বাইডেন রাজধানীতে কাটান এবং শির সাথে দফায় দফায় কথা বলেন। পুরো সফরেই শি জিনপিং কাউন্টারপার্ট হিসেবে বাইডেনকে সময় দিয়েছিলেন। চীনের পত্র-পত্রিকায় তাদেরকে ‘দুই বন্ধু’ উল্লেখ করেও নিবন্ধ ও ছবি ছাপা হয়। আজ সময়ের পরিবর্তনে দু’জন দুপ্রান্তে। এখন কেউ কাউকে বন্ধু বলেন না।
শি জিনপিংয়ের মধ্যপ্রাচ্যে সফর ও সৌদি আরবের নেতৃত্বের সাথে খোলাখুলি বৈঠক অনেক বিম্বিত প্রতিফলনকে মুছে দিয়েছে। আরব বিশ্বের অবিসংবাদিত আঞ্চলিক নেতা, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চীন-আরব রাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলন ও চীন-উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি রিয়াদ ভ্রমণ করেন। ধনী আরব বিশ্বে প্রভাব সম্প্রসারণ ও প্রতিযোগিতামূলক সংগ্রামের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পশ্চিমাদের বিশাল প্রাচীর ভেঙে চীন প্রবেশ করতে পারছিল না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল। বাইডেনও গুরুত্বপূর্ণ সফরে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন কিন্তু প্রিন্স সালমানের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। বিশ্বের মোড়লদের প্রচুর কালো সোনা দরকার। তাই সৌদি আরব ও তেল সংস্থাগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করা পররাষ্ট্রনীতির একটি বিশেষ দিক। কিছু অমিল হলেই সবাই এই সোনায় হাত দেয়; ফলে এই অঞ্চল বহু দশক ধরে বিরোধ ও সশস্ত্র সঙ্ঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে।
কিছু কিছু বিশ্লেষক অনেক দিন ধরে বলে আসছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অপরিশোধিত তেল দখলের লড়াই। এমনকি ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে আমেরিকান নৌঘাঁটিতে জাপানি বিমানের ব্যাপক আক্রমণ, যে প্রশান্ত মহাসাগরে যুদ্ধের সূচনা করেছিল, সেটিও তেলের কারণের সাথে যুক্ত। ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের তেলসমৃদ্ধ দ্বীপগুলো দখল করার জাপানের আকাঙ্ক্ষা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশকে যুদ্ধ বলয়ে টেনে আনে।
এটি আশ্চর্যজনক নয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সম্প্রসারণকে এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করার চেষ্টা করেছিল যে, তেল যেকোনো দেশের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান নিয়ামক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই মূল্যবান সম্পদ যথেষ্ট ছিল না। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বিদেশী বাজারে তার তেলের প্রায় ৬০ শতাংশ কিনেছিল।
মার্কিন তেল ও গ্যাস শিল্পে শেল এই ইস্যুতে গুরুতর সমন্বয় সাধন করেছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিশ্ব বাজারে তেলের বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে ওঠার পরে বা পারস্য উপসাগরে মার্কিন নির্ভরতা হ্রাসের পরে। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমর্থন হ্রাস করতে শুরু করেন। এর ফলে ধীরে ধীরে প্রথমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এবং পরে জো বাইডেনের আমলে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কমতে শুরু করে।
চীনা দক্ষতার সাথে এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘নতুন যুগে চীন-আরব সহযোগিতা’ শীর্ষক বিশাল প্রতিবেদনে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে জোর দেয়া হয়েছে, চীন ও আরব রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে সার্বভৌমত্বের নীতির প্রতি শ্রদ্ধা, অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা ও ক্ষমতার রাজনীতি এবং আধিপত্যবাদ প্রতিরোধের অনুরূপ অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে কার্যত কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করা গেছে।
এটি উল্লেখ করা উচিত, চীন বেশ দীর্ঘ সময় নিয়ে আস্তেধীরে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ ধারণার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আর তাই, আরব দেশগুলোর সাথে একত্রে আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রতিহত করার ওপর বেইজিংয়ের বিশেষ জোর আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে চীনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করেছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনের ওপর সাম্প্রতিক তীব্র আক্রমণ এবং আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের নানাবিধ নির্দেশনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উন্মুক্ত প্রত্যাখ্যান, চীনের এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।
এ পরিস্থিতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যপ্রাচ্য সফর ও সর্বশেষ চীন-আরব যোগাযোগ স্পষ্টতই প্রমাণ করে, চীন দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে আসতে চেয়েছে এবং এসেছে। অচিরেই বাস্তবায়নের জন্য বেইজিং যে যৌথ প্রকল্প প্রস্তাব করেছে তা কেবল আর্থিক ও বাণিজ্য সহযোগিতাই নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্বও এর মধ্যে রয়েছে। যেমন- সৌদি আরব বেশ কয়েকটি বড় চীনা উচ্চ-প্রযুক্তি সংস্থার জন্য তার বাজার উন্মুক্ত করছে, বিশেষত হুয়াওয়ে, যা সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাপ ও সীমাবদ্ধতার ভেতর রয়েছে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এ ধরনের উন্মুক্ততা বেইজিং ও পারস্য উপসাগরের দেশগুলোর, বিশেষ করে রিয়াদের মধ্যে উচ্চ স্তরের বিশ্বাস কাজ করছে।
আরো উল্লেখযোগ্য হলো- বেইজিং ও রিয়াদের যৌথ নিরাপত্তা আলোচনা, যা দীর্ঘদিন ধরে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মিথস্ক্রিয়ায় চলমান ছিল। ছোটখাটো থেকে বড় বড় ঘটনা এই বন্ধনে আঘাত করেছে। কিছু দিন আগে সৌদি কয়েক শ’ নৌ-ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ শিবির থেকে ওয়াশিংটন বের করে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তা নতুন মোড় নিতে চলেছে। বেইজিং মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, প্রথমবারের মতো চীনের সীমানার বাইরেও এই ধরনের গ্যারান্টি দিতে তারা প্রস্তুত।
সৌদি আরব ছাড়াও ধুঁকে ধুঁকে চলা ইরাক চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহ ও প্রস্তুতি দেখিয়েছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি প্রথম চীন-আরব রাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রিয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় উভয় দেশের নেতারা শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতা ও টেকসই অংশীদারিত্বের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসার মত প্রকাশ করেছেন এবং উপায় নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা করেছেন।
রিয়াদে অনুষ্ঠিত প্রথম চীন-আরব শীর্ষ সম্মেলনের সময়, স্থানীয় কর্মকর্তারা ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ও এর জনগণের সমস্যা শেষ করতে অর্থনৈতিক এবং মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য চীনের কাছে সাহায্যের অনুরোধ করেছিলেন। এটি স্পষ্টতই বেইজিংয়ের আঞ্চলিক কর্তৃত্বের স্বীকৃতিকেই প্রমাণ করে না; বরং চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নতি ও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করে। তবে এটিও সঠিক যে, ইয়েমেনে কার্যক্রমে চীনকে শিয়াইজম ও ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারেস্টের মোকাবেলা করতে হবে।
যদিও ওয়াশিংটনে, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগের সমন্বয়কারী জন কার্বির একটি অত্যন্ত স্পষ্ট বিবৃতিতে, বেইজিংয়ের মধ্য প্রাচ্যের নীতির তীব্রতা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছিল, তবুও রিয়াদে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার দিকটি আরব বিশ্বে বেইজিংয়ের কর্তৃত্ব ও প্রভাবের নিঃশর্ত পরিবৃদ্ধির প্রমাণ করে। শুধু চীনই নয়, পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলো সম্প্রতি আত্মবিশ্বাসের সাথে পারস্পরিক পুনর্মিলনের জন্য তাদের পদক্ষেপ আরো জোরদার করার দিকে অগ্রসর হয়েছে, সহযোগিতার জন্য নতুন অংশীদারদের সন্ধান করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে কেবল অর্থনৈতিকভাবে নয়, রাজনৈতিক ও সামরিকভাবেও সঙ্ঘাত তীব্রতর করেছে। তথাকথিত ‘আরব ন্যাটো’ হালে পানি পায়নি। ওয়াশিংটন নিজেই পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে বুঝতে বাধ্য করছে যে, শিগগিরই বা পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একতরফা অবস্থান ছাড়াই তাদের একটি স্বাধীন নীতি অনুসরণ করতে হবে। হোয়াইট হাউজের নির্দেশনা বা প্রেসক্রিপশন সবসময় কার্যকর নাও থাকতে পারে।
এখন আরব দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল বাজারে প্রবেশাধিকার দরকার। তাদের অবকাঠামো ও পরিবহন রুটগুলো আরো বিকশিত করতে হবে জরুরিভাবে। চীন আজ এমন একটি স্থিতিশীল এবং সত্যিকারের সীমাহীন বাজারের জন্য পরিচিত, যা ইতোমধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরিতে সমগ্র বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে, এটি কেবল আরব বিশ্বের সাথে বেইজিংয়ের সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্রেই অবদান রাখে না; বরং এই অঞ্চল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত করার ক্ষেত্রেও কাজ করবে। আমরা দেখেছি, গত ১৭ বছরে চীন ও আরব বিশ্বের মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। এই সহযোগিতা আরো বিকশিত ও প্রসারিত হতে থাকবে।
দশকের পর দশক ধরে অপমানের পর, আরবরা তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে; তাদের নিজেদের এবং তাদের অঞ্চলের জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারা ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেদের ডি-ফ্যাক্টো মাল্টিপোলার বিশ্বের একটি স্বাধীন মেরু হিসেবে দেখে যা আমাদের চোখের সামনে আবির্ভূত হচ্ছে। আরব বিশ্বের স্বার্থ, শক্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তারা অনেক বেশি বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারী। দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতার সাথে, আরবরা বিশ্বের পুরো অংশের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। অন্যান্য জাতির সাথে আরব সম্পর্কের বিস্তৃতি ও গভীরতা আরবদের উন্নয়ন কৌশল এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে অবদান রাখার জন্য বিদেশী দেশগুলোর ক্ষমতা ও ইচ্ছায় নির্ধারিত হয়। আরব দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে, তাদের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন উৎপাদন উন্নত করতে, অবকাঠামো নির্মাণ করতে এবং তাদের দ্রুত বর্ধনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীকে চাকরির সুযোগ দিতে আগ্রহী। তদুপরি, তারা তাদের নিজস্ব অধিকারে একটি স্বাধীন মেরু হিসেবে বিবেচিত ও সম্মানিত হতে চায়। এমতাবস্থায় বৈশ্বিক প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে এবং চীনের সাথে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে নিতে হবে।
আরব-চীন সম্পর্ক খুব কৌশলগত এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আরবরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরিষ্কার দৃষ্টিসম্পন্ন; তারা ইতোমধ্যে তাদের কৌশলগত দিক নির্ধারণ করেছে। তারা পুরোপুরি বুঝতে পারে, বর্তমান শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যরা তাদের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে যা-ই ভাবুক না কেন, আরবরা কৌশলগতভাবে স্বায়ত্তশাসিত থাকার জন্য এবং বৃহৎ ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের ক্ষমতার সব কিছু করবে। তারা কাউকে তাদের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক লাভের জন্য একটি বন্ধনী বা যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার