শীতে চুলকানির সমস্যার সম্মুখীন হন কমবেশি সবাই। তবে এর কারণ কী, কখনো ভেবে দেখেছেন? আসলে শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে চুলকানির পাশাপাশি চর্মরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। শীতকালীন চুলকানি বা উইন্টার ইচ হলো এক ধরনের ডার্মাটাইটিস বা ত্বকের জ্বালা। শীতে এই সমস্যা কমবেশি সবার ত্বকেই দেখা দেয়। বিশেষ করে ঠান্ডায় বাইরে বের হওয়ার পর ত্বকে শুষ্কতা, খসখসে ভাব বা লাল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনি শীতকালীন চুলকানি অনুভব করছেন।
নারী-পুরুষের মধ্যে কার চুলকানি বেশি? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘প্রুরিটাস হিমেলিস’। ত্বকের এই রোগ সাধারণত শীতল তাপমাত্রার কারণে দেখা দেয়। এক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য স্থানের তুলনায় পায়ে চুলকানি বেশি হয়। যদিও এই সমস্যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবার ঠিকও হয়ে যায়, তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
তবে শীতের চুলকানি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করতে পারেন ঘরে বসেই। তার আগে জেনে নিন শীতের চুলকানির লক্ষণগুলো সম্পর্কে- শীতের চুলকানি হাত, পা, মুখ বা মাথার ত্বক ছাড়া শরীরের যে কোনো অংশকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে পায়ের উরু, হাঁটুর গর্ত, কনুই ও গোড়ালিতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার সমস্যা বাড়ায়।
রাতে ও কাপড় পরিবর্তনের সময় আক্রান্ত স্থানগুলোতে জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে। যদিও শীতের চুলকানিকে ‘শীতকালীন ফুসকুড়ি’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। শীতের চুলকানির লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- চুলকানি, ত্বকের শুষ্কতা, লালচেভাব, ত্বক ফাটা, রক্তপাত ইত্যাদি।
শীতের চুলকানি বা উইন্টার ইচিং এর কারণ কী?
ঠান্ডা আবহাওয়া: বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাস ত্বকের উপরের স্তরের আর্দ্রতা চুষে নেয়। ফলে ত্বক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর থেকেই ফুসকুড়ি, ত্বকের জ্বালাপোড়ার সমস্যা হয়। যাকে বলা হয় উইন্টার ইচ।
গরম পানির ব্যবহার: আবার অত্যধিক পানি ব্যবহারের কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে করে গরম পানির ব্যবহার ত্বকের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অত্যধিক গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর হয়ে যায়। ফলে শুষ্কতা ও লালচেভাবের সৃষ্টি হয়। তাই শীতে নিয়মিত গরম পানিতে গোসলের অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
সাবানের রাসায়নিক: কিছু সাবানে রাসায়নিক থাকে, যা আপনার ত্ববের জ্বালাভাব ও শুষ্কতা বাড়ায়। গরম পানির সঙ্গে যদি এসব রাসায়নিক মিশ্রিত সাবান ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের শুষ্কতা আরও বেড়ে যাবে।
তাপ: ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেকেই রুম হিটার ব্যবহার করেন। এতে ঘরের পরিবেশ বেশ গরম হয়ে যায়। এটি স্বস্তিকর হলেও এর ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা বাড়ে। এর থেকে হতে পারে উইন্টার ইচ।
এই সমস্যা সমাধানে করণীয়: বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ওভার-দ্য-কাউন্টার ত্বকের শুষ্কতা রোধের চিকিৎসা করে। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো। এছাড়া শীতকালীন চুলকানির চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি বিকল্প উপায় আছে। জেনে নিন কী কী- ১. গোসলের সময় হালকা গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে ওই পানিতে গোসল করুন। ২. গোসলে সাবান ব্যবহারের বদলে হালকা ক্লিনজার বা সাবানমুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন, যা ত্বকের তেল শুষে নেবে না। ৩. গোসলের পর ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন। ত্বকের শুষ্কতা বা চুলকানি রোধে ভালোমানের লোশন ব্যবহার করুন। ৪. ঘন, সুগন্ধমুক্ত ক্রিম ব্যবহার করবেন না। ৫. চুলকানি-দমনকারী ক্রিমগুলো এড়িয়ে চলুন। এতে থাকা রাসায়নিক শীতের চুলকানিকে আরও খারাপ করতে পারে।
এর পরিবর্তে চুলকানি উপশম করতে ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে একটি ওভার-দ্য-কাউন্টার হাইড্রোকর্টিসোন ১% ক্রিম ব্যবহার করুন। ৬. ত্বকের যে স্থানে বেশি চুলকানি অনুভব করবেন সেখানে ঠান্ডা, ভেজা কাপড় বা বরফের প্যাক ব্যবহার করুন। ৭. পোশাক নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। সিল্ক ও সুতির মতো হালকা ওজনের পোশাক পরুন। ফ্ল্যানেল ও উলের পোশাক পরলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব বাড়তে পারে। ৮. ঠান্ডা আবহাওয়া ও শুষ্ক বাতাসের মধ্যে বাইরে যাওয়ার সময় গ্লাভস, স্কার্ফ, টুপি ও গরম কাপড় ব্যবহার করুন ত্বকের সুরক্ষায়। ৯. শীতকালেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। ১০. ওমেগা ৩, ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার খান। ও ১১. প্রচুর পানি পান করুন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন? আপনার চুলকানির লক্ষণ গুরুতর হলে কিংবা ত্বকে ক্ষতের সৃষ্টি হলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আপনার আক্রান্ত স্থান দেখলেই চিকিৎসক বুঝতে পারবেন এটি সাধারণ উইন্টার ইচ নাকি একজিমা, সোরিয়াসিস। সূত্র: অ্যাডভান্সডেন্টডেনভার