হিজাব মুসলিম নারীর অধিকার। তবে বর্তমানে এই অধিকার থেকে বি ত বিশ্বের অনেক দেশের নারীরা। হিজাব পরা নিয়ে আমাদের পাশের ভারতেও তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। গর্জে উঠেছিল ভারতের মুসলিম মেয়েরা। মুসকান নামের এক মুসলিম মেয়ের প্রতিবাদী কণ্ঠে বিশ্ব শুনেছিল আল্লাহু আকবারের ধ্বনি। ফ্রান্সেও হিজাব নিয়ে তর্কবির্তক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। এমনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অমানবিকভাবে হিজাব নিয়ে রয়েছে নানান নেতিবাচক কাহিনী। একই সাথে আমাদের দেশেও হিজাব নিয়ে বির্তক অবিরত চলছেই।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করলেও সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র; কিন্তু বাংলাদেশের মতো মুসলিম রাষ্ট্রে আজো হিজাব বিতর্ক হয়, এটি খুবই লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে গত বছরের ৪ অক্টোবর বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির অঙ্গনে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানান, ‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা যাবে না।’ কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো- মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই বেশি আঘাত দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের হিজাব বোরকা নিকাব পরা নিয়ে এ দেশে হয়রানি করা হয়।
একজন মুসলিম নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ। আল কুরআনে সূরা আহজাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনা নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের অংশবিশেষ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।’ এ আয়াত থেকেই বোঝা যায়, ইসলামে পর্দার কত গুরুত্ব। আর পর্দা করতে গেলে অবশ্যই হিজাব নিকাব বোরকার গুরুত্ব অপরিসীম, যা ছাড়া এ যুগে আদৌ পর্দার কথা চিন্তা করা যায় না। আর এই হিজাব নিকাব নিয়ে যদি শুনতে হয় কটুকথা, যদি হিজাব পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে এ দেশের নারী শিক্ষার্থীরা, হিজাব পরলে চাকরি না হয়, হিজাব নিকাব পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস করা না যায়, তবে এটি মুসলিম নারীদের জন্য এক ধরনের হয়রানি। আর হিজাব নিয়ে মুসলিম নারীকে হয়রানি করা কি অপরাধ নয়?
সম্প্রতি বাংলাদেশে হিজাব পরার অধিকার নিশ্চিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও প্রতিবাদে নেমেছিলেন। এই দৃশ্য খুবই লজ্জাজনক, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরও হিজাব পরা নিয়ে আন্দোলন করতে হয়। তবে তৃণমূল পর্যায়ে আরো কত যুদ্ধ করতে হয় তা হিজাবি নারীরাই জানেন।
একজন মুসলিম নারী যে পেশায় থাকুক না কেন, তাকে পর্দা করতে নিষেধ করার মতো অধিকার কারো নেই। বাংলাদেশে লক্ষণীয়- নার্সিং শিক্ষায় অনেক কলেজেই এখনো হিজাব নিষিদ্ধ; কিন্তু সেখানে শত শত মুসলিম নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা পর্দা করতে চান। একজন মুসলিম নারী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি নিজেও অনেকবার হিজাব পরা নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। একজন নার্সিং শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা মেডিক্যালে ক্লিনিক্যাল প্র্যাক্টিসে নিকাব পরে যাওয়ার পর সেখানের একজন নার্সিং সুপারভাইজার সরাসরি বলেন, পর্দা করলে নার্সিংয়ে কেন এসেছ? এমনকি একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নার্সও নিকাব পরা নিয়ে কটাক্ষ করেন। কিন্তু লক্ষ করা যায়, তিনি নিজেই কপালে সাদা তিলক ও তাদের ধর্মীয় একধরনের মালা গলায় পরেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বোঝা যায়, বাংলাদেশে অন্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ধর্ম পালনে বেশি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন, যদিও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটি মুসলিম রাষ্ট্র। পরিলক্ষিত, মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিমরাই যদি ধর্ম পালনের অধিকার না পায়, তাহলে রাষ্ট্রের জন্য এর চেয়ে অপমানজনক আর কী হতে পারে? রাষ্ট্রকে এ ধরনের অপমান থেকে মুক্তি দিতে ও হিজাব নিকাব নিয়ে মুসলিম নারীদের হয়রানি থেকে পরিত্রাণ দিতে শিগগিরই প্রাশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। লেখক : শিক্ষার্থী, ইবনে সিনা নার্সিং ইনস্টিটিউট, কল্যাণপুর, ঢাকা