গ্রেপ্তারের দুই বছর পর মুক্তি পেয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান। এ সময়ে তাকে জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। একটি ধর্ষণ নিয়ে রিপোর্ট করার উদ্দেশে যাত্রা করার পর ২০২০ সালের অক্টোবরে উত্তর প্রদেশে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ওই সময় সেখানে দলিত সম্প্রদায়ের একজন যুবতীকে ধর্ষণ করা হয়। এতে তিনি মারা যান। অভিযোগ আছে, ওই যুবতীকে উচ্চবর্ণের বা উচ্চ জাতের চার ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে ভারজতজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়। এ নিয়ে রিপোর্ট করতে বের হলে সিদ্দিক কাপ্পানের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ও সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এই সাংবাদিক অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
ঘটনার দিন সাংবাদিক সিদ্দিকের সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন একই গাড়িতে।
তাদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে। সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। এর মধ্যে একটিতে সেপ্টেম্বরে তাকে জামিন দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ডিসেম্বরে তাকে দ্বিতীয় মামলায় জামিন মঞ্জুর করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক মাস সময় লেগে যায়। ফলে বৃহস্পতিবার তিনি লক্ষ্ণৌ শহরের জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, একই সঙ্গে সাংবাদিকতাও চালিয়ে যাবো। অলস বসে থাকবো না। সর্বোপরি, আমি একজন সাংবাদিক।
সিদ্দিক কাপ্পান দক্ষিণের কেরালা রাজ্যের। সেখান থেকে উত্তর প্রদেশের হাথ্রাস জেলায় যাওয়ার পথে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় তিনি মালয়াম ভাষার নিউজ পোর্টাল আজিমুখামে কাজ করছিলেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তিনি। পরিবার অভিযোগ করে, তার ডায়াবেটিস আছে। কিন্তু তাকে ঠিকমতো ওষুধ দেয় না কর্তৃপক্ষ। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ। তারা অভিযোগ করেছে, কেরালাভিত্তিক মুসলিমদের একটি উগ্র গ্রুপ পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার (পিএফআই) সদস্য সাংবাদিক সিদ্দিক ও তার সফরসঙ্গীরা। সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগে গত বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে পিএফআই’কে। কিন্তু সিদ্দিক কাপ্পানের আইনজীবী এবং কেরালাভিত্তিক সাংবাদিক ইউনিয়ন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০২১ সালে তার আইনজীবী বলেছিলেন, প্রাথমিকভাবে তার মক্কেলের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু দু’দিন পরে পুলিশ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সন্ত্রাস বিরোধী কঠোর আইনের বিধানের অধীনে অভিযোগ আনে। সমালোচকরা বলেন, এই আইনে মামলার ফলে তার জামিন পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত করে আর্থিক অনিয়ম। তারা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে প্রিভেনশন অব মানিলন্ডারিং অ্যাক্টের অধীনে আরও একটি অভিযোগ আনে। এতে তারা অভিযোগ করে যে, দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ার জন্য তিনি পিএফআইয়ের কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন।