ওয়াসার এমডি তাকসিম এম খান ইচ্ছাকৃতভাবে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া রায় প্রতিপালন করছেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। তাই বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ বন্ধে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাস্তবায়ন না করায় ওয়াসার এমডিকে সতর্ক করেছেন আদালত। পাশাপাশি আগামী এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রকৃত রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। এছাড়াও মামলার পরবর্তি শুনানির জন্য আগামী ১৮ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
আদালতে রিটকারিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম এবং ওয়াসার এমডির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা।
এর আগে ঢাকার শ্যামপুরের শিল্প এলাকার পরিচালিত বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে বর্জ্য নিঃসরণে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ বন্ধে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১০ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১১ সালে হাইকোর্ট তার রায়ে ওয়াসার এমডিকে ছয় মাসের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীতে কারখানার বর্জ্য নিঃসরণ লাইন বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় একটি সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশের পর ওয়াসার এমডি তাকসিম এম খান আদালতে হাজির হয়ে রায় বাস্তবায়নের জন্য আদালতে প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীতে গত ১৮ আগস্ট এবং ৭ সেপ্টেম্বর দুটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হলেও রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় তা গ্রহণ না করে সময় দেন হাইকোর্ট।
এদিকে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) শুনানিতে ওয়াসার এমডির পক্ষে আরও একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ না করে ওয়াসার এমডিকে সতর্ক করেন এবং বারবার সময় নিয়ে রায় বাস্তবায়ন করায় তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, ওয়াসার এমডি ইচ্ছাকৃতভাবে রায় প্রতিপালন করছেন না এবং বারবার প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে সময় ক্ষেপন করছেন।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, রায়ের পরে ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও টালবাহানা করে রায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যার কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ বন্ধ হচ্ছে না এবং ওয়াসা তাদের দায়িত্ব বার বার পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও একই আদালতে ২০১৪ সালে দায়ের হওয়া আরেকটি রিটের আদেশে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ পরিবেশ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের পরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কেরানিগঞ্জ থানার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাশে নদী ও নদী তীরে ময়লা/আবর্জনা/বর্জ্য ফেলা ও স্তূপ করা বন্ধের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে যে ময়লা আবর্জনা/বর্জ্য ফেলা হয়েছে তা অপসারণ করে ১৫ দিনের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়াও মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করে দেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ইটিপি স্থাপন ছাড়াই পরিচালিত কারখানা বন্ধের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে ওই আদেশ দেন।