বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

‘৩০০বিঘায় সরিষার গ্রাম’

নীলফামারী প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

‘আগে আমরা চার পাঁচজন সরিষা আবাদ করতাম। এখন অনেক মানুষ সরিষা। প্রায় দেড়’শ জনের মত। আরও যারা আছেন এখন তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন সরিষা আবাদে।বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কাচারি পাড়ার হারুন উর রশিদের। তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। গতবার যেখানে করেছিলেন তিন বিঘা জমিতে। কৃষক হারুন বলেন, সরিষাতে খরচ চার হাজার টাকার মত বিঘা প্রতি। ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। পাশাপাশি সরিষার টাকা দিয়ে বোরো আবাদ উঠি যায়। সরিষার কোন কিছু ফেলানি যায় না, গাছ খড়ি এবং খৈল গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অনেক লাভ সরিষাত। আরেক কৃষক আলমগীর ইসলাম বলেন, আমন ও বোরো দুটি ধানই আমরা আবাদ করতাম বছরে। এখন তিনটি ফসল ফলাচ্ছি বছরে। আমন এবং বোরোর মাঝ খানের তিন মাস জমি পতিত থাকতো। কোন আবাদ করতাম না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সময়ে সরিষা করছি। সরিষায় খরচ কম। সেচ দিতে হয় না। সার কিটনাশকও তেমন প্রয়োজন হয় না। সরিষা এখন আমাদের পুরোগ্রাম ছড়িয়ে পড়েছে। এবার যারা আবাদ করেন নি তারাও আগামীতে সরিষা আবাদ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আব্দুস ছামাদ নামে আরেক কৃষক বলেন, সরিষা গ্রামের চিত্র বদলে দিয়েছেন। এলাকা পরিদর্শনে আসছেন কর্মকর্তাগন। অনেকে আসছেন ছবি তুলতে। আর ১৫দিন পরই সরিষা কাটাই মাড়াই শুরু হবে। গতবার আবাদ একটু কম হলেও এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারও ভালো। সরেজমিনে কাচারি পাড়া এলাকা গিয়ে দেখা গেছে, ১৪০জন কৃষক ৩০০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। দুই বিঘা থেকে শুরু করে পাঁচ বিঘা পর্যন্ত সরিষা লাগিয়েছেন জমিতে। সরকারী প্রণোদনা কর্মসুচীর আওতায় অনেকে পেয়েছেন সার ও বীজ। কৃষি বিভাগের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরিষা করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে সরিষা চাষে উদ্ব্দ্ধু করা হয় কৃষকদের। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, বিঘা প্রতি ৫মন উৎপাদন হবে সরিষা। যেখানে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হবে। বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা খরচ হয় একজন কৃষকের। বিপরিতে একজন কৃষকের ধানে বিঘা প্রতি লাভ আসে তিন হাজার টাকার মত। কাচারী পাড়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রশিদুল ইসলাম জানান, কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করে এবং পরামর্শ দিয়ে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এরফলে আস্তে আস্তে চাষীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন ১৪০জন কৃষক সরিষা করছেন। এই গ্রাম এখন ‘সরিষা গ্রাম’ পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে সরিষা আবাদের কোন বিকল্প নেই এবং কোন জমি পতিত রাখা যাবে না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন আহবানে সাড়া দিয়ে আমরা সফল হয়েছি নীলফামারীতে। কুন্দপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইউনিয়নের প্রতি পাড়া মহল্লায় আবাদ হয়েছে সরিষার। সরকারের প্রণোদনা সফল হয়েছে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দিন দিন চাষীর সংখ্যা আরো বাড়বে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে এগিয়ে এসেছেন এই এলাকার কৃষকরা। এখন আর পতিত থাকছে না কোন জমি। আগামী তিন বছরের মধ্যে সরকারের দেয়া ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ভাগ পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে শতকরা ১৪ভাগ উৎপাদন হচ্ছে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭৭৭ হেক্টর জমিতে ৯১০০ মেট্রিক টন সরিষায় ৩৬লাখ ৪০ হাজার লিটার তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com