বিনয় মানুষের এক মহা গুণ। বিনয়ী আল্লাহর প্রিয়। মানুষসহ অন্য মাখলুকেরও প্রিয়। বিনয়ীর সঙ্গেই সবাই ওঠা-বসা করতে চায়। অহংকারীর সঙ্গে কেউ চলতে চায় না। তাকে কেউ ভালোও বাসে না। আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.)-কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর মনের হতেন তাহলে এরা সকলে আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ত…।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯) সুতরাং কোনো কম্পানির মালিক, অফিসার বা ওপরস্থ কর্মকর্তা যদি অধীনস্থদের প্রতি বিনয়ী হোন তাহলে তারা তাঁকে ভালোবাসবে। কোনো শিক্ষক যদি ছাত্রদের সঙ্গে আচরণে বিনয়ী হোন তাহলে তারা তাঁকে ভালোবাসবে। কোনো পরিবারের কর্তা যদি বিনয়ী হোন তাহলে পরিবারের সবাই তাঁকে ভালোবাসবে। কোনো সরকার যদি জনগণের প্রতি বিনয়ী হয় তাহলে তারাও সরকারকে ভালোবাসবে। বিপদের মুহূর্তে সরে পড়বে না। প্রয়োজনে নিজের সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করবে।
বিনয় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণ:বিনয় ও নম্রতা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্যতম গুণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘রাহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে…।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩) এবং মহান আল্লাহ নিজেই অহংকার করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতসমও হতে পারবে না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)
শাসক হিসেবে নবীজি (সা.)-এর বিনয়:শাসক হিসেবে নবীজি (সা.) বিনয়ী ছিলেন। অন্য শাসকদের মতো তাঁর ভয়ে সবাই কাঁপতে থাকুক—তিনি তা পছন্দ করতেন না। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, এক লোক নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে কথা বলতে এলো। তখন ভয়ে সে কাঁপছিল। নবীজি (সা.) বলেন, শান্ত হও। আমি কোনো রাজা-বাদশা নই। আমি একজন সাধারণ নারীর সন্তান। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১২)
বেদুঈনদের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর বিনয়:অনেক সময় কোনো কোনো বেদুঈন এসে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বসত। নবীজি (সা.) সেগুলো হাসিমুখে সহ্য করতেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে চলছিলাম। তাঁর গায়ে ছিল মোটা পাড়ের নাজরানি চাদর। হঠাৎ এক বেদুঈন এসে প্রচ- জোরে চাদর টান দিল। আমি দেখলাম, জোরে টান দেওয়ার কারণে নবীজির কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। অতঃপর বেদুঈন লোকটি বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ আপনার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিন।’ আল্লাহর রাসুল তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন এবং তাকে কিছু দেওয়ার আদেশ দিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৪৯)
পরিবারের সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর বিনয়:অনেকে নিজ পরিবারের সঙ্গেও এমন ভাব দেখায় যে আমি অমুক অফিসার, তমুক জমিদার, হাজার মানুষের বস ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের নবীজি (সা.) এমন ছিলেন না। ঘরে এলেও তিনি সাধারণভাবে বিনয়ের সঙ্গে থাকতেন। ঘরের কাজে সহযোগিতা করতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, নবীজি (সা.) ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি উত্তরে বললেন, ‘ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারের কাজে সহযোগিতা করতেন। আর নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য চলে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)
বিনয়ী সবার চোখে বড়:মাটির মানুষকে সব সময় থাকতে হবে মাটির মতো বিনয়ী। বিনয় হলো মাথার মুকুট। যা শোভা-সৌন্দর্য বাড়িয়ে অন্যদের চোখে তাকে করে তোলে শ্রদ্ধাশীল ও মর্যাদাবান। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর জন্য যে বিনয়ী হয় আল্লাহ তাকে সমুন্নত করেন। তখন সে নিজের চোখে তুচ্ছ হলেও মানুষের চোখে অনেক বড় বিবেচিত হয়।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৭৭৯০)
বিনয়ী জুলুমের স্বীকার হলে: বিনয়ী বিনয়ের কারণে দলিত হলে ও জুলুমের স্বীকার হলে শক্ত হওয়ার অনুমতি আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ আমার কাছে এ মর্মে অহি পাঠিয়েছেন যে তোমরা বিনয়ী হও যতক্ষণ না একে অপরের ওপর জুলুম করে এবং অহংকার করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৯৫) লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা