রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষার চাষ। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষার দাম তুলানা মূলক বেশী পাওয়ায় এ উপজেলার কৃষকরা সরিষার চাষের প্রতি দিন দিন ঝুকছে। এছাড়াও আবহাওয়া রবি ফসল চাষের উপযোগী হওয়ায় এবছর বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষার চাষ। সরিষা মানুষের জীবনের জন্য অতি জরুরি না হলেও কিছু কিছু কাজে মানুষ সরিষার ব্যবহার সরাসরি করে থাকে। সরিষার ব্যবহার সরাসরি কম হলেও অন্য দিকে এর ব্যবহার ব্যাপক, সরিষা থেকে উৎপাদিত তেল মানুষের জীবনে নিত্য দিনের ব্যবহারে আবশ্যক। দৈনিক রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে সরিষার তেল। মানুষের চাহিদার কারণে সরিষার তেলের দাম অন্য অন্য তেলের তুলনায় বেশি, ফলে সরিষার দামও বেশি। কৃষক এ ফসলের দাম বেশি পাচ্ছে, যার ফলে কৃষকেরা দিন দিন সরিষা চাষের প্রতি ঝোকছে। বশেষজ্ঞরা এখন বলছে বেশি বেশি সরিষার তেল ব্যবহার করতে। আমরা যে তেলে রান্না করি তাতে স্যাচুরেটেড এবং আনস্যাচুরেটেড, দু ধরনের ফ্যাট থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য খারাপ হলেও, আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট কিন্তু শরীরের উপকার করে। সেই হিসেবে শরীরের ভালোর জন্য সরিষা তেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘানি থেকে আনা সরিষার তেল স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্যে খুবই ভালো। সরিষার তেলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ত্বকের যতেœও সরিষা তেল অতুলনীয়, সরিষা তেল জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, এ ছাড়া এটি ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতেও সহায়ক, সরিষা তেলের ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যোর কারণে তা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে, গোদাগাড়ী উপজেলায় চলছে পাকা ফসল ঘরে তোলার ধুম। এ উপজেলার কৃষকেরা পাকা সরিষা কাটা-মাড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা কেউ টলি করে কেউ আবার মাহিন্দ্রা করে কাটা সরিষা মাড়ায় করার স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আগের সময়ের কৃষকেরা পাকা ফসল ঘরে তুলতে ব্যবহার করতো গরু-মহিষ, ঘোড়াসহ নানানরকমের প্রাণীর গাড়ী। এছাড়াও ব্যবহার হতো শ্রমিকের মাথা। বর্তমান যুগ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগ, যার ফলে কৃষিতেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার আমাদের দেশে ব্যাপক। ফলে মাথায় করে কাটা ফসল ঘরে না তুলে ব্যবহার করছে মেশিনারিজ গাড়ি। এছাড়াও মাড়ায় করার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। উপজেলার চর আমতলা খাসমহলের সরিষা চাষি মোঃ শরিফুল ইসলাম (দিলন) বলেন, সরিষা চাষ লাভজনক অল্প সময়ে অল্প খরচে সরিষার আবাদ (চাষ) টা হয়। তাছাড়া দেশি সরিষার ফলন ৫ থেকে ৭ মুন আর বিদেশি সরিষার ফলন আরো বেশি এবং এর দামও এখন বেশি পাচ্ছি। পিরিজ পুর গ্রামের কৃষক মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, গতবছর আমার কোন সরিষা ছিলোনা এ বছর আড়াই বিঘা চাষ করেছি কারণ ফলন বেশি এবং খাটুনিও কম আর এক জমিতে একই ধারণের ফসল বারবার করলে ফসলও ভালো হয়না। উপজেলার চর আষাড়িয়া দহ ইউনিয়নে এ বছর সরিষা চাষ হয়েছে ১৭৫৫ হেক্টর আর গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিলো ১০১৫ হেক্টর। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এবছর সরিষা চাষ হয়েছে মোট ১৬৮৫০ হেক্টর যা গত বছর ছিল মোট ৭৪২০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষা চাষ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। গোদাগাড়ী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃমামুন-উর-রশীদ বলেন, এ উপজেলার কৃষকেরা সবসময় চায় লাভবান ফসল চাষ করতে, কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকেরা এবছর ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করেছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সরিষার দামও অন্য ফসলের তুলনায় বেশি এবং দিন দিন এর চাহিদাও বাড়ছে, তাছাড়া আমাদের দেশ আমদানি নির্ভরশীল দেশ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের আমদানি কমেছে ফলে ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে, এ সংকট কমাতে কৃষককে সরিষা চাষের প্রতি উদবৃদ্ধ করি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, অন্য অন্য বছরের চেয়ে এবছর সরিষার ফলন বেশি হচ্ছে। তাছাড়া এবছর পোকা-মাকড়ের আক্রমনও কম, নাই বললেই চলে এবং এ উপজেলায় অন্য বছরের চেয়ে এবছর সরিষা চাষ হয়েছেও বেশি। আশা করি এবছর কৃষক সরিষার ভালো দাম পাবে।