জেলার চাষিরা আলু ও সরিষার পর এখন টমেটো ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে এবং সার-কীটনাশকের সংকট না থাকায় এবার গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন তারা। আগাম আলু উঠিয়ে চাষিরা টমেটোর চারা রোপণ করেছিলেন। এখন টমেটো ক্ষেতে বাঁশের বাতা ও সুতা দিয়ে গাছ যাতে ঝড়-বৃষ্টি এবং ভারে নুয়ে না পড়ে সে জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কৃষক এবং কৃষি বিভাগ বলছে, কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে জেলায় এবার গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলন হবে। সেইসঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দেশের যে কোনো প্রান্তে টমেটো সহজে পাঠাতে পারবেন। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ী লাভবান হবেন। ব্যবসায়ীরা এখনই টমেটো চাষিদের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ হাজার ১৪২ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ হয়েছে। এখনো চারা রোপণ চলছে। এবার টমেটো চাষ আরও বাড়তে পারে। দিনাজপুরে টমেটো চাষ শুরু হয়েছে মাঘ মাসের ১৫ তারিখ থেকে। ফলন পাওয়া যায় চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ থেকে। তবে অনেকে স্বল্প পরিসরে আগাম টমেটো চাষ করে থাকেন।
জেলা সদর, চিরিরবন্দর, বিরলসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপকহারে গ্রীষ্মকালীন ভিকোমা, প্রভেনশিপ, রানি, রাজা কুমার ও বিপুল প্লাস টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। তবে এবার সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বিপুল প্লাস জাতের টমেটো।
চিরিরবন্দর উপজেলার মাদারগঞ্জ আরজিগলাহার গ্রামের কৃষক মধুসূদন রায় (৪০) জানান, তিনি এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বিপুল প্লাস জাতের টমেটোর চারা রোপণ করেছেন। গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। তিনি এখন টমেটো গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তিনি বলেন, ‘জমিতে টমেটো চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে ৪০০ মণ টমেটো হবে। টমেটো যদি ১০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে পারেন, তাহলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। এতে তার লাভ হবে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করলে লাভ কিছুটা কম হবে। টমেটো চাষে সাধারণত লোকসান গুনতে হয় না। যতি কোনো দুর্যোগ না হয়।’
একই কথা বলেন সদর উপজেলার চক দেওতৈড় গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘৬০ শতাংশ জমিতে বিপুল প্লাস টমেটোর চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত টমেটো গাছ খুবই সুন্দর হয়েছে। কিছু গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। যদি ফলন ভালো হয় এবং দাম ভালো পাই, তাহলে বেশ লাভবান হবো। দাম পেলে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে টমেটোর উৎপাদন বেড়েছে। টমেটো চাষ করে যাতে কৃষকরা কোনো সমস্যার মধ্যে না পড়েন; সেজন্য সব সময় মনিটরিং করা হচ্ছে। কৃষক ধান, আলু ও সরিষার ভালো দাম পেয়েছেন। আশা করছি টমেটোয়ও এবার দাম ভালো পাবেন।