কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে হঠাৎ পর্যটকের ঢল নেমেছে। গত দুই দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) সৈকত ভ্রমণ করেন দুই লাখের বেশি মানুষ। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে পর্যটক টানতে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোতে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। হোটেল মালিকেরা বলেন, আগামী ২৩ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। রোজার সময় সৈকতে পর্যটকের সমাগম তেমন থাকে না। এ কারণে ৯৫ শতাংশ হোটেল মোটেল বন্ধ রাখা হয়। বন্ধের সময়ে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চালানো হয়। পর্যটকের রাত যাপনের জন্য সৈকত ও শহরতলিতে পাঁচ শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস আছে; দৈনিক ধারণক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার। কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, টানা ১০ থেকে ১৫ দিন কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের সমাগম তেমন ছিল না। তখন দৈনিক ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যটক এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ পর্যটকের ঢল নেমেছে। ওই দিন অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক সৈকত নামেন। গত শুক্রবার ও গত শনিবার দুই দিনে আসেন আরও অন্তত দুই লাখ। আজ রোববার বিকেল থেকে পর্যটকেরা গন্তব্যে ফিরতে শুরু করবেন, তখন সংখ্যাও কমতে থাকবে। তবে মার্চে পবিত্র রমজান শুরু আগপর্যন্ত দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটকের সৈকত ভ্রমণ চলতে থাকবে।
হোটেল মালিকেরা বলেন, পর্যটক টানতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে কক্ষ ভাড়ার ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ক্ষেত্রে ছাড় ৩০ শতাংশ। তাতে পর্যটকেরা ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছেন। গতকাল বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে পর্যটকের ঢল। সেখানে কথা হয় ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী নুরুল আজিমের সঙ্গে। তাঁর পাশে স্ত্রী ও এক মেয়ে। তিনি বলেন, অন্যান্য জায়গার তুলনায় কক্সবাজারের হোটেল ভাড়া ও রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম অনেক বেশি। এ কারণে বহু পর্যটক ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে বাড়ি ফিরে যান। গত শুক্রবার সকালে তিনি পরিবার নিয়ে ওঠেন কলাতলী এলাকার একটি হোটেলে। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাবল সিটের রুমের ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকের চাপ বাড়লে হোটেল মালিকেরা বিশেষ ছাড়ের কথা বেমালুম ভুলে যান। পর্যটক কমে গেলে ছাড় দিয়ে পর্যটক টানার প্রতিযোগিতা শুরু করেন। এসব দেখার কেউ নেই।
পর্যটকের কারণে ব্যবসা বাণিজ্য চাঙা হলেও বিনোদনসহ পর্যটকের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর চিন্তা কারও নেই জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, একজন পর্যটক মাঝারি মানের হোটেলে দুই রাত তিন দিন অবস্থান করলে হোটেল ভাড়া, খাওয়াদাওয়া-যাতায়াতের বিপরীতে মাথাপিছু খরচ হয় গড়ে ১০ হাজার টাকা করে। মাথাপিছু খরচ ১০ হাজার টাকা ধরলে ২ লাখ মানুষের বিপরীতে ব্যবসা হয়েছে ২০০ কোটি টাকার। কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বলেন, শহরে রেস্তোরাঁ আছে পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে তাদের সমিতির আওতাধীন ১২০টি রেস্তোরাঁতে খাবারের তালিকা টাঙানো থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখে খাবারের অর্ডার করেন। কিন্তু অবশিষ্ট রেস্তোরাঁগুলো ইচ্ছেমতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব রেস্তোরাঁর নিবন্ধনও নেই।