চা বাগানের ভাষা-সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, কেনিয়ার ভাষা-সংস্কৃতি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে প্রথম আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ম আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব থেকে বক্তারা চা বাগানে বসবাসরত সকল চা জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে গেজেটভুক্ত করা, চা বাগানের ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য “সংস্কৃতি একাডেমি” প্রতিষ্ঠা ও চা বাগানের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়। গত রোববার দুপুরে উপজেলার শমসেরনগর চা বাগানের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ রফিকুর রহমান। শমসেরনগর, আলীনগর ও চাতলাপুর চা বাগানের (ফাঁড়িসহ) চা শ্রমিকবৃন্দ এ উৎসবের আয়োজন করেন। প্রথম আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব-২০২৩ উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীনের সভাপতিত্বে ও চা ছাত্র নেতা মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় উৎসবের আলোচনা পর্বে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ভারত সরকারের রাজ্যসভার সাংসদ আবীর রঞ্জন বিশ্বাস, নেপালের কাঠমুন্ডু বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পূর্ণা বি. নেপালী, ভারতের আসাম সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের অভিযন্তা বিবেকানন্দ মোহন্ত, কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের এজিএম (মার্কেটিং) ড. অনুুপ ভক্ত, পশ্চিমবঙ্গের বেথুয়াডহরি কলেজের অধ্যাপক ড. রঞ্জন ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দূর্যোগ, ত্রাণ ও ভূমি অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান রঞ্জিত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বভারতীয় নমঃশূভ্র ও উদ্বাস্ত উন্নয়ন পরিষদের পর্যবেক্ষক ভোলানাথ বিশ্বাস, ভারতের সেন্ট মেরিজ কলেজের অধ্যাপক প্রদীপ অধিকারী, সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি, কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত, লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ, কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নৃপেন পাল, মনু-দলই ভ্যালি কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী, সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা প্রমুখ। অনুষ্ঠানের ২য় অধিবেশনে বিকালে মুক্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন ভারতের মুম্বাইয়ের বিশিষ্ঠ শিল্পী ড. রাজেশ বৈঠে। রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ১ম আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব উপলক্ষে সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন বাগান থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চা শ্রমিকেরা রঙবেরঙের পোশাক পরে ব্যনার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে এসেছেন। চা জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব নৃত্য, লাঠি খেলাসহ নানান রকমের উৎসবে মেতে উঠেন। চাতলাপুর চা বাগানের চা শ্রমিক রাজু বলেন, প্রতিবছর যাতে আমাদের চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসব পালন করা হয়। আমাদের মাঝে বিভিন্ন জাতি আছে এবং তাদের সবার পৃথক পৃথক মাতৃভাষা রয়েছে। আয়োজক কমিটির আহবায়ক কানিহাটি চা বাগানের চা শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন বলেন, ১ম আন্তর্জাতিক চা জনগোষ্ঠী ভাষা ও সংস্কৃতি উৎসবে চা বাগানে বসবাসরত সকল চা জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে গেজেটভুক্ত করা, চা বাগানের ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য “সংস্কৃতি একাডেমি” প্রতিষ্ঠা ও চা বাগানের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবী জানান তিনি।