সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা, সোনা নয় তত খাঁটি, বলো যত খাঁটি তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি রে আমার জন্মভূমির মাটি। এ মাটি এত যে খাটি যেখানে যা কিছু রোপন করা হয় তাই ফলে।এমনি চিত্র ফুটে উঠেছে নীলফামারী জলঢাকা তিস্তার বুকে। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা রূপালি বালুচর এখন ঢাকা পড়েছে সবুজের চাদরে। মাঠ জুড়ে সবুজ সমারোহ সূর্যের কিরণে বালু চিক চিক করছে আর এই বালুর চরে ফলানো মিষ্টি কুমড়া যেন আপন মনে হাসছে। এক সময় গরু-ছাগলের বিচরণ ভূমি ছিল তিস্তা নদীর এসমস্ত চর। তবে বর্তমানে সেই চরের জমি আর ফাঁকা পরে নেই। এসব বালুর চর এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদের মাধ্যমে। আর এসব চরে মিষ্টি কুমরা চাষ কৃষকদের বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরে জমিনে জলঢাকা উপজেলার গুলমুন্ডা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৃষক তরিকুল ইসলামের(৪৫) সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে খরস্রোত থাকলেও বর্তমানে তিস্তার বুকে জেগে ওঠেছে অসংখ্য বালুচর। বর্ষায় নদীর দুকূল উপচিয়ে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয় ফসলি জমি বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষার বিদায় বেলায় ধু ধু বালুচরে পরিণত হয় তিস্তা নদী।আর এসব চরে বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুর চরেই ফসল বপন করেন। তিস্তার ধু ধু বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্ট সাধ্য। পেটে দু’মুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসল চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের এ সমস্ত কৃষকেরা। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টি কুমড়ার ফলন বেশ ভালো হয়।এছাড়া তিস্তার চরে মৌসুমে একবার আবাদ করা যায়। ভাল ফলন, খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এখানকার কৃষকেরা দিন দিন মিষ্টি কুমরা চাষে ঝুকে পড়ছে। একসময় চর এলাকার কৃষকদের কষ্টে দিন কাটাতে হতো। এখন তাদের ভাগ্যর পরিবর্তন এসেছে। প্রতি বছর মিষ্টি কুমরা চাষে বাড়ছে ফলে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। উপজেলার গুলমুন্ডা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের কৃষক নাজমুল হুদা(২৫) শহিদুল ইসলাম(৫০) এর সাথে কথা বলে আরে জানা যায়, তারা তিনজন মিলে ৩ বিঘা মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপন করেন।প্রথমে বালুচরে বালু সরিয়ে গর্ত করতে হয়।পরে সেই বালুর গর্তে অন্যস্থান থেকে আনা পলিমাটি দিয়ে গর্ত পূরণ করে দিতে হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে ৩-৪টি করে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। এরপর চারা গাছ বড় হলে পানি সেঁচ আর একটু পরিচর্যা করলে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। বালুচরে গাছ বপন করে মাচা দিতে হয় না। প্রতিটি গাছে প্রায় ৮-১০টি করে কুমড়া আসে। প্রতিটি কুমড়া ৩-৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতেই ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। তবে আমরা এবার প্রথম মিষ্টি কুমড়া রোপন করেছি। মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে।এখনও বিক্রি শুরু করেনি। বিক্রি করলে বুঝতে পারবো খরচ বাদ দিয়ে কত টাকা লাভ হবে।জলঢাকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর আগে চর এলাকাগুলো চারণ ভূমি হওয়ায় মানুষ চলাচলে অনুপযোগী ছিল। বর্তমান সময়ে কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ, সরকারি সহযোগিতা পেয়ে চরগুলোতে সোনার ফসল ফলানোর প্রচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ফসল আবাদের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।