বোনের প্রতি ভাইয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসার কাছে হার মানলো সকল প্রতিবন্ধকতা। ভাইয়ের জন্য বোনের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-ভক্তি, মায়া-মমতার শত শত বিরল দৃষ্টান্ত দেখা যায়। কিন্তু বোনের জন্য ভাইয়ের কিডনি দানের মতো নজিরবিহীন ঘটনা জেলার মধ্যে এই প্রথম। বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসার নজিরবিহীন বিরল দৃষ্টান্ত গড়লেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার হাফিজ আব্দুর রাহিম। বড় বোনকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়েছেন তিনি। এদিকে ছোট ভাইয়ের দেওয়া কিডনি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন বড় বোন ফাহমিদা বুশরা ঝুমু। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গাংকুল গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়ার ছেলে আব্দুর রাহিম(২২), মেয়ে ফাহমিদা বুশরা ঝুমু(২৫)। মজনু মিয়ার মেয়ে ফাহমিদা বুশরা ঝুমু কয়েক বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানোর পরও তিনি সুস্থ না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ফাহমিদা বুশরা ঝুমুকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানান বুশরার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে বাঁচানোর জন্য কিডনি লাগবে। এ কথা শোনার পর ছোট ভাই পাথারিয়া গাংকুল মনসুরিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত, হাফিজ আব্দুর রাহিম তার পরিবারের সদস্যদের জানান- তিনি তার বড় বোনকে একটি কিডনি দেবেন। পরে গত শুক্রবার (৩ মার্চ ) বিকেল ৩টায় ঢাকার সিকেডি হাসপাতালে এই কিডনি ট্রান্সফার করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপনের এই অপারেশন চলে। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার অপারেশনের পর ছোট ভাইয়ের কিডনি বড় বোনের দেহে প্রতিস্থাপন করা সফল হয়। অপারেশনের সময় তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, ও চিকিৎসা সহায়তা তহবিল গঠনের টিমসহ আত্মীয় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। হাফিজ আব্দুর রাহিমের আত্মীয় ও চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের সদস্য মাষ্টার তোফায়েল আহমেদ লায়েক জানান, আব্দুর রাহিম নিবিড় পারিবারিক বন্ধনে বেড়ে ওঠেছেন। তাদের একে অন্যের প্রতি গভীর মায়া-মমতা রয়েছে। কোনো রকম আপত্তি ছাড়াই রাহিম তার বড় বোনকে একটি কিডনি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে, জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে। ভাই-বোন দুইজনই এখন সুস্থ আছে। তারা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ফাহমিদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের সদস্য ও গ্রাম আদালত সহকারী ফয়ছল রানা জানান, ভাই বোনের প্রতি সীমাহীন আস্থা ও ভালোবাসা থাকার কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে, যা এখনকার যুগে দুষ্প্রাপ্য। ফাহমিদা চিকিৎসা সহায়তা তহবিলের প্রধান আহ্বায়ক ও ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন বলেন, তাদের ভাই-বোনদের মধ্যে বন্ধন অনেক গাঢ়। ছোট থেকে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। তাদের পরিবারের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অক্ষুণ্ণ রয়েছে। ছোট ভাই হাফিজ আব্দুর রাহিম এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ভাই বোনের মঙ্গল কামনায় সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। হাফেজ আব্দুর রাহিমের এই আত্মত্যাগের নজীরবিহীন বাস্তব ঘটনাটি বর্তমান সমাজের সকল ভাই-বোনদের জন্য অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।