রোহিঙ্গাদের জন্য ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নতুন মানবিক সহায়তা ঘোষণা করলো যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ সহায়তার কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস। তার বক্তব্য দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তিনি জানান, এই অর্থ বাংলাদেশসহ এ অ লের অন্য দেশগুলোতে থাকা রোহিঙ্গাদের কল্যানে ব্যয় করা হবে।
নেড প্রাইস বলেন, নতুন এই সহায়তার ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে অব্যাহতভাবে দেশটি সহায়তা পাঠিয়ে আসছে। ওই সময়ই মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। নেড প্রাইস বলেন, নতুন এই তহবিল মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তের দুই পাশে অবস্থান করা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জীবন রক্ষায় আমাদের অংশীদারদের সহায়তা করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরেন। বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ, জাতিগত নির্মূল এবং গণহত্যা থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়তে হয়েছিল এই রোহিঙ্গাদের। তাদের কারণে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশেরই ৫ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নতুন সহায়তায় তাদেরকেও সুবিধা দেয়া হবে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের মহানুভবতার কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নেড প্রাইস বলেন, আমরা এই সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এই মানবিক সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশ সরকার, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরের জনগণের সাথে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যাব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবের প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকতে হবে।
বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই শরণার্থী সংকট সাম্প্রতিক ইতিহাসে সৃষ্ট সবচেয়ে বড়, দ্রুততম বৃদ্ধি পাওয়া সংকটগুলোর একটি। রোহিঙ্গারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল তারা। প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে বিস্তীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর এই নিধনযজ্ঞ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের একটি সৃষ্টি করেছে। এদিকে মঙ্গলবার রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
মুখপাত্র হিসেবে নেডের পদত্যাগ, থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে: দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে চলতি (মার্চ) মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র থেকে পদত্যাগ করছেন বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানান দেশ বিষয়ে দেশটির অবস্থান স্পষ্ট করা নেড প্রাইস। তবে, পদত্যাগ করলেও এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্টে সরাসরি কাজ করবেন তিনি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং দেশটির সেক্রেটারি অব স্টেট তথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন।
ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ২০২১ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখ মুখপাত্র হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন নেড। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই, তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের দৈনিক সংবাদ সম্মেলন পুনরায় চালু করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের নিয়মিতভাবেই আমাদের নীতির বিষয়ে কঠিন সব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ২০০ টিরও বেশি ব্রিফিং এ তিনি সাংবাদিক, সহকর্মী এবং অন্যদের প্রতি সম্মান রেখে কাজ করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা ও প্রচারে নেড যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সহায়তা করেছেন এবং অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্র যে স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত ধারণার পক্ষে সমর্থন করে তার একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন। তিনি চলে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার এই অবদানে স্টেট ডিপার্টমেন্ট উপকৃত হবে।
“ব্যক্তিগত পর্যায়ে, আমি ক্রমাগতভাবে নেডের পরামর্শ থেকে উপকৃত হয়েছি, যেমনটি এই ডিপার্টমেন্টের অনেক সদস্যই হয়েছেন। সৌভাগ্যবশত, আমি এটি পেতেই থাকবো কারণ নেড স্টেট ডিপার্টমেন্টে সরাসরি আমার সাথে কাজ করবেন”, ব্লিঙ্কেন যোগ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে নেড প্রাইস প্রায়ই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মুখ ও কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তিনি অসাধারণ পেশাদারিত্ব এবং সততার সাথে কাজ করেছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আমি নেডকে তার অসাধারণ সেবার জন্য ধন্যবাদ জানাই।এদিকে, একইদিন এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে নেড প্রাইস বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক সাহায্যের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত ২৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তার কথা ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ালো প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নেড প্রাইস অসংখ্যবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন।