মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৪ অপরাহ্ন

ইখলাস মু’মিনের প্রসাধনী

আল আমিন মুহাম্মাদ:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত যত্ন করে শুধু ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এই ইবাদতের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে শুধু ইবাদতের দ্বারাই কি এই সাফল্য অর্জন হবে? না! কস্মিনকালেও না।
প্রয়োজন ইবাদতের মধ্যে একনিষ্ঠতা বা ইখলাস। মু’মিনের জীবনে ইখলাসের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে রাসূল! আপনি বলুন, আমি একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।’ (সূরা জুমার-১১) ইখলাস শব্দটি আরবি ভাষা থেকে আগত। এর আভিধানিক অর্থ, একনিষ্ঠতা, স্বচ্ছতা, খাঁটি ইত্যাদি। ইখলাসের পরিচয় দিতে আল্লামা জুরজানি রহ: বলেন, মানবাত্মার পরিচ্ছন্নতায় বিঘ্ন ঘটায় এ ধরনের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা থেকে অন্তর খালি করাই ইখলাস বা একনিষ্ঠতা। আর এর মূলকথা হচ্ছে- প্রতিটি বস্তুর ক্ষেত্রে এ কথা চিন্তা করা, তার সাথে কোনো-না-কোনো বস্তুর সংমিশ্রণ থাকতে পারে, তবে যখন কোনো বস্তু অন্য কিছুর সংমিশ্রণ থেকে মুক্ত হয়, তখন তাকে খাঁটি বস্তু বলা হয়। আর এ খাঁটি করার কাজটি সম্পাদন করার নাম হচ্ছে ইখলাস। (মাদারেজুস সালেকিন)
মু’মিন তার জীবনকে আল্লাহর আনুগত্যে সাজাতে ইখলাসকে খুব শক্তভাবে হৃদয়ের গভীরে ধারণ করতে হয়। কেননা, সে ইখলাস ব্যতীত যত ইবাদত-বন্দেগি করবে তার কোনো কাজেই আসবে না। ফুটো কলসে পানি ঢালার মতো বোকামি হবে। আল্লাহর রাস্তায় যত কঠিন পরিশ্রম ও কোটি কোটি টাকা দান করুক না কেন, ইখলাস ছাড়া সবই বৃথা। রাসূলে করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘যে আমল বা ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইখলাসের সাথে করা হয় না; আল্লাহ তায়ালা সে আমল কবুল করবেন না।’ (নাসায়ি) আবার ইখলাসকে অবহেলা করলেও হতে হবে বড় ক্ষতির সম্মুখীন। ইবনে মাজাহ শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা যখন সব মানুষকে একত্র করবেন, তখন একজন ঘোষণাকারী এ মর্মে ঘোষণা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত কাজে অন্য কাউকে তাঁর সাথে শরিক করেছে; সে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেই শরিকের কাছ থেকে প্রতিদান বুঝে নেয়। কেননা, আল্লাহ তায়ালা সবধরনের অংশীদার ও অংশীদারত্ব থেকে মুক্ত।’ একজন মু’মিন যখন নিজেকে মুখলিস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, সে তখন ইখলাসের অনেকগুলো উপকারিতা ও গুরুত্বপূর্ণ বরকত লাভ করবে যা তার পরকালীন জীবনের পাথেয় হবে।
১. তার আমল কবুল হবে। হজরত আবু উমামা আল বাহেলি রা: বর্ণনা করেন- হজরত রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, আল্লাহ তায়ালা শুধু ওই আমল কবুল করবেন, যে আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা হবে এবং যে আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা উদ্দেশ্য হবে।’ (নাসায়ি)
২. সাওয়াব স্থির হবে। হজরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো খরচ করবে, তার ওপর তোমাকে সাওয়াব দেয়া হবে।’ (বুখারি)
৩. ছোট আমল বড় আমলে পরিণত হবে। আল্লামা ইবনুল মোবারক রহ: বলেন, অনেক ছোট আমল আছে। এ আমলের নিয়ত তাকে বড় করে দেয়, আবার অনেক বড় আমল আছে, নিয়ত তাকে ছোট করে দেয়। (জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম)
৪. গুনাহ মাফ হবে। ইখলাস গুনাহ মাপের বড় একটি কারণ। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ: বলেন, একপ্রকার আমল এমন আছে, যখন কোনো মানুষ আমলটি পরিপূর্ণ ইখলাস ও আল্লাহর আনুগত্যের সাথে করে, আল্লাহ তায়ালা এ আমলের দ্বারা তার কবিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।
মু’মিন ব্যক্তি যখন ইখলাসসহ আমল করতে থাকে, তখন অনেকগুলো ইহকালীন অসাধারণ গুণ অর্জন করে থাকে, যা তাকে সুন্দর, স্বতন্ত্র, রহমতপূর্ণ জীবন লাভে সহায়তা করে।
১. মুখলিস নিজের প্রসিদ্ধি লাভ, সুনাম ও প্রশংসা পাওয়া কিংবা নিজের গুণাগুণ বর্ণনা করাকে পছন্দ করেন না।
২. দ্বীনের জন্য আমল করতে পছন্দ করেন।
৩. নেক আমলের প্রতিযোগিতা করেন।
৪. আমলের বিনিময় শুধু আল্লাহর কাছেই চান।
৫. আমল-ইবাদতসহ সব কাজে ধৈর্যধারণ করেন।
৬. কোনো অভিযোগ-অজুহাত পছন্দ করেন না।
৭. নিজের আমলকে গোপন রাখতে ভালোবাসেন, গোপনে আমল করেন।
ইসলামী শরিয়তের সব দিক ও শাখায় আল্লাহর হুকুম পালনে এবং তার নৈকট্য অর্জনে একনিষ্ঠতার কোনো বিকল্প নেই। নবী-রাসূলদের দাওয়াতের মূলমন্ত্রও ছিল এই ইখলাস। ইখলাস হলো সচেতনময় অন্তরের আমল, ইবাদতের প্রাণ, মু’মিন জীবনের বরকতময় প্রসাধনী। প্রত্যেকের উচিত হবে জীবনের ছোট-বড় সব বন্দেগিকে ইখলাসময় করে তোলা। লেখক : শিশুসাহিত্যিক ও ইসলামী গবেষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com