নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডাকাহার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তবুও যুগের পর যুগ বেতন ভাতা না পেয়েও স্থানীয় শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসছেন ৪জন শিক্ষক। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা মিল্টন বলেন ডাকাহার গ্রামে প্রায় দেড় হাজার মানুষের বসবাস। ডাকাহারসহ আশেপাশের শিশুদের মাঝে অনেক দূরবর্তি বিদ্যালয়ে না গিয়ে নিজের এলাকার একটি বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণের লক্ষ্যে ১৯৯৯সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আব্দুল আজিজসহ একাধিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে ৩৬শতাংশ জমির উপর এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। স্থাপনকালে মাত্র ৪টি মাটির কক্ষ তৈরি করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তিতে স্থানীয় মানুষদের ও শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তায় আরো দুটি ইটের কক্ষ নির্মাণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে স্থানীয় শিশুরা দুরের বিদ্যালয়ে না গিয়ে এই বিদ্যালয়েই পাঠগ্রহণ করে আসছে। পরবর্তিতে অনেক চেস্টার পর ২০১৩সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের তালিকাভুক্ত হলেও রাজনৈতিক কারণে ২০১৪সালে গ্রামের কতিপয় ব্যক্তিদের ইন্ধনে তৎকালীন সাংসদের নেতৃত্বে জাতীয়করনের তালিকা থেকে বিদ্যালয়টির নাম কেটে দেওয়া হয়। এরপরও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেয়ে আসছিলো। কিন্তু সেই উপবৃত্তিও গত দুইবছর যাবত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কপালে জুটছে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ের পাশে মালিপুকুর ও চৌধুরী পুকুরপাড়ে নির্মিত আশ্রয়নের বাড়িগুলোতে শতাধিক পরিবার বসবাস করছে। ডাকাহার গ্রামসহ এই আশ্রয়নের বাসিন্দাদের প্রায় ৬০জন শিক্ষার্থী বর্তমানে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে পাঠগ্রহণ করছে। যেখানে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার দলবল নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আধুনিকায়ন করছেন, শিশুদের ঝড়ে পড়া রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশে এই বিদ্যালয়টি সকল কিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের প্রতি দ্রুত সুদৃষ্টি প্রদান করতে এলাকাবাসীর পক্ষে আমি শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পাপিয়া খাতুন বলেন একদিন বেতনভাতা পাবো এমন আশা বুকে ধারণ করে বছরের পর বছর বেগার দিয়ে আসছি। হয়তোবা একদিন মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি আমাদের এই বিদ্যালয়ে পড়বে এই স্বপ্ন প্রতিদিনই দেখে আসছি। একদিন প্রত্যন্ত এই গ্রামাঞ্চলের অবহেলিত শিশুরা আধুনিকমানের বিদ্যালয়ের মনোরম শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠগ্রহণ করতে পারবে এমনই স্বপ্নের কথা প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের শুনিয়ে আসছি। হয়তোবা দ্রুতই আমাদেরসহ এই এলাকাবাসীদের স্বপ্ন পূরণ হবে আর আমরাও সম্মানিত হবো। উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকলেও শিক্ষকরা জাতীয়করনের সকল সুবিধা ভোগ করে আসছেন অথচ আমরা বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের ঝড়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে আসছি। আমি শতভাগ আশাবাদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই অসহায়ত্বের বিষয়টি দ্রুত আমলে নিবেন এবং আমাদেরসহ পুরো বিদ্যালয়টিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে আলোর দিকে নিয়ে যাবেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাদির-উজ-জামান বলেন আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। দ্রুত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বিদ্যালয়টির আধুনিকায়নসহ অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত ভাবে জানাবো। পরবর্তিতে তারাই আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।