শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

পঞ্চগড়ের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয় : মির্জা ফখরুল

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। পঞ্চগড় জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঘটনা এবং ঘটনা-পরম্পরার গভীরে গেলে স্পষ্ট যে এটা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত ঘটনা।
গতকাল রোববার বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। পঞ্চগড় জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি-ঘরে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে কেন্দ্রীয় বিএনপি গঠিত পরিদর্শন এবং তদন্ত টিমের রিপোর্ট জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গের ওপর হামলা, তাদের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুটপাট, নিরীহ দুই ব্যক্তির নিহত হওয়া, শতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনা ন্যাক্কারজনক, দুঃখজনক ও অমানবিক। অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। এই ঘটনা এবং ঘটনা-পরম্পরার গভীরে গেলে এটা স্পষ্ট যে এটা কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিত ঘটনা। নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিশেষ করে শাসকদলের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি বৃহৎ জনপ্রিয় দল বিএনপি’র ওপর দোষ চাপিয়ে, আওয়ামী লীগ তাদের পূর্বের খেলা নতুন করে শুরু করে বিএনপিকে আতঙ্কের মধ্যে রাখার নীল নকশা আঁকছে।
তিনি বলেন, পুলিশ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ২০টি মামলা দিয়েছে, ১২ হাজারেরও বেশি আসামি করেছে এবং এ পর্যন্ত ১৮৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এমনকি পঞ্চগড় থেকে অনেক দূরের উপজেলার নেতাকর্মীদেরও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটক করেছে, অভিযান চালিয়ে হয়রানি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউ নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। প্রকৃত ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে পুলিশসহ সকলেই তা জানে, অথচ গ্রেফতার করা হচ্ছে নির্বিচারে বিএনপি নেতাকর্মীদের। পুলিশ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এতে বুঝা যায় পুলিশ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে পূর্বের ন্যায় উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে সারা দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিএনপি’র ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় নেমেছে। কিন্তু জনগণ সবই বোঝে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সময় মতো কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়ত এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটত না। পূর্বপরিকল্পিত বিধায় পুলিশ এই ঘটনার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে যাতে আহমদিয়াদের ঘর-বাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটের সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের পূর্বানুমতি নিয়েই তাদের বার্ষিক জলসার দিন ও স্থান নির্ধারণ করে। এ জলসার বিরোধিতা করে কিছু ধর্মীয় সংগঠনের স্থানীয় লোকজন মিছিল মিটিং করে, যা প্রশাসনের গোচরীভূত ছিল। জলসা বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনও করেছিল কিছু সংগঠন। এর পরও পুলিশ নিরাপত্তামূলক কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শত শত লোক একত্রিত হয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নীরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের চোখের সামনেই এসব তা-ব চালানো হয়। কিন্তু পুলিশ তখন কোনো বাধা না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এ বিষয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ বশির চৌধুরি বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে তা-ব চালায়। কিন্তু বিজিবি ও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি; যা আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তিন ঘণ্টা পর অ্যাকশন শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; ততক্ষণে সব শেষ।’ এদিকে স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তারা শেষ পর্যন্ত ওপরের নির্দেশে অত্র কমিটির সাথে দেখা করতে অপারগতা প্রকাশ করা দুঃখজনক। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে কথা বলার সুযোগ হলে এ বিষয়ে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার যে প্রশ্ন উঠেছে সে বিষয়ে তাদের মতামত জানা যেত।”
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের খবর ও ছবিতে দেখা গেছে, হামলার আগে ওই এলাকার নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়ি চিহ্নিত করতে লাল-সাদা কাপড় টাঙানো হয়েছিল, যাতে দুর্বৃত্তরা সহজেই টার্গেট বাড়ি শনাক্ত করে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করতে পারে। সেই পতাকা বা কাপড়চোপড় দুই-তিন দিন পর্যন্ত ঝুলতে দেখা যায়। এমন আলামত থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় এ ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তদুপরি আহমদিয়াদের প্রতিনিধি আহমদ তবশির চৌধুরীও বলেছেন, “যারা এসব কাজ করেছে, তাদের প্রশিক্ষিত মনে হয়েছে। হামলায় গ্রিল কাটা ও দেয়াল ভাঙারও যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, কারা এই ‘প্রশিক্ষিত’ গোষ্ঠী। দীর্ঘ সময়ের ধরে পরিকল্পনা করল, অথচ কেউ কিছু জানতেই পারল না। এটা প্রশাসন বা সরকারের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিনি আরো বলেন, ‘উপস্থিত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ভিকটিমরা প্রকাশ্যই বলেছে, আওয়ামী লীগের লোকজন বিশেষ করে পঞ্চগড় সদরের সংসদ সদস্য ও বর্তমান রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্ব ও সক্রিয় অংশগ্রহণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে ক্ষতিগ্রস্তরা চিৎকার করে তাকে বলেন যে ঘটনায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী আব্দুর রহমান ও তার ছেলে মোতাহার মন্ত্রীর আশেপাশেই উপস্থিত আছে। এই হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচার করা না হলে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। রেলমন্ত্রীর কোনো সদুত্তর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তার সামনেই নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন এবং হাউমাউ করে কাদা শুরু করেন।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, মন্ত্রীর পাশে থাকা কারা কারা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন, নাম ধরে ধরে তাদের দেখিয়েও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কমিটির তদন্তেও তাদের নাম উঠে এসেছে। যারা এ সাম্প্রদায়িক হামলার নেতৃত্ব দিলেন, তাদের নিয়েই মন্ত্রী গেলেন ক্ষতিগ্রস্তদের এলাকা পরিদর্শনে। কতটা অসহায় হলে তারা আত্মহত্যা করার কথা বলেন। নাম উল্লেখ করে মামলা করা হলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। এতে স্পষ্টই বোঝা যায় এ ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জানা যায় ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ পঞ্চগড় সদরে এই জলসা বন্ধ করার দাবিতে একটি ধর্মীয় সমাবেশ হয়। সেটির পোস্টারে অতিথিদের নামের তালিকায় জেলা, পৌরসভা, উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতারা এবং উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের নাম রয়েছে। অতিথির তালিকায় থাকলেও অনেকেই অবশ্য সেই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন। কিছু লোকের উগ্রবাদী আচরণের কাছে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এমন দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে যেতে পারে, সেটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এদেশের মানুষ ঠিকই জানে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বর্তমানে কাদের ওপর যখন তখন চড়াও হন, আর কাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিও চরম ভূমিকা পালন করেছে বলে অনেকেই মনে করেন। রাষ্ট্র সরকার ও ক্ষমতাপুষ্ট লোকজনের পৃষ্ঠপোষকতায়ই এত সহজ ও সফলভাবে এহেন অমানবিক হামলার ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com