বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

মাদক : মধুর মোড়কে বিষ

এস এম আরিফুল কাদের:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩

মানুষের চিন্তা, বোধ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিজের চার পাশের পরিবেশ থেকে প্রভাব গ্রহণের যোগ্যতা আছে। উপযুক্ত পরিবেশ ভালো কাজে যেমন কৃতিত্ব প্রদর্শনে ভূমিকা রাখে, তেমন ভুল শিক্ষা, অসৎ সঙ্গ, অনাদর আর নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে ব্যর্থ সিদ্ধান্তের দরুন জড়িয়ে পড়ে নানাবিধ অপরাধে। তন্মধ্যে মাদকাসক্তি সর্বাগ্রে। নানাবিধ সমস্যা থেকে কিছু সময়ের জন্য শান্তি পেতে কিংবা পরিবেশগত কারণে একজন মানুষ মাদকাসক্ত হয়। মাদক গ্রহণের ফলে চোখের সামনে কল্পিত বস্তু ভেসে ওঠে আর সঞ্চারিত হয় অপরাধ বিষয়ে ভয়াবহ আতঙ্ক। তাই তারা কল্পিত বিষয়াবলিকে বাস্তব ভেবে আওড়াতে থাকে। ফলে স্বাদ পেতে বারবার গ্রহণে অস্থির হয়ে পড়ে। বস্তুত এ স্বাদ মস্তিষ্কসৃষ্ট ও কল্পিত একটি বস্তু, যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় হ্যালুসিনেশন বলে। মাদক সেবন বহুকাল ধরে ছিল এবং আছে। আগের তুলনায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাদককে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু পবিত্র কুরআনের ভাষায় মাদক তৈরির মূল উপাদানকে ‘জাক্কুম’ বলা যেতে পারে। ইংরেজিতে এটিকে ‘ক্যাকটাস, ল্যাটিন ভাষার ‘ক্যাকটস’ থেকে এসেছে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এটিকে ‘এলএসডি’ নাম দেয়া হয়েছে। জাক্কুম, ক্যাকটাস কিংবা এলএসডির মূল রাসায়নিক উপাদান ১২টি ছাড়িয়ে গেছে। এর রাসায়নিক উপাদান স্নায়ু শীতলকারক; কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের পর অন্যান্য অ্যালকোহল থেকে আলাদা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও আফিম নামের আরেক মাদকে রয়েছে ১৭টি রাসায়নিক উপাদান, যা মানুষের ইমার্জেন্সি কিছু অসুস্থতায় ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ‘ধুতরা’ যা সিগারেটে তামাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাময়িক স্বস্তির আড়ালে সেবনকারীর হয় তীব্রতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা। পাশাপাশি জর্দাও তামাক থেকে প্রস্তুত হয়। যার দু’টি ধরন রয়েছে। তামাকজাত ও মিষ্টি। তামাকজাত জর্দা নেশা তৈরি করে। যার কারণে নেশার বস্তু হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। মিষ্টি জর্দা; মিষ্টিপানের স্বাদকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। নারিকেল তেল শিল্পের উচ্ছিষ্ট অংশ নারিকেলের আঁশ দিয়ে তৈরি এই জর্দাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এখানেও মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম রঙ, স্যাকারিন, সুগন্ধি ও অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। জর্দায় অ্যালকালয়েড ও নিকোটিন অধিক মাত্রার বিষাক্ত। যা মুুুুখের ক্যান্সারের ঝুঁঁকি বাড়ায়। আফিম বা ধুতরা থেকে তৈরি মাদকজাত দ্রব্যও বিশ্ব মনস্তত্ত্ববিদ বিশ্বনবী সা: নিষিদ্ধ করেছেন। কেননা, উপরে মাদক লেখার অনুপস্থিতে ভেতরে নেশার আশঙ্কা থাকতে পারে। আর নেশা সৃষ্টিকারী যেকোনো জিনিস ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক হারাম। হাদিসে এসেছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যা কিছু নেশাগ্রস্ত করে তা-ই মাদক। আর যা নেশা তৈরি করে তা-ই হারাম।’ (সহিহ মুসলিম-৫১১৪) আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-কে ‘বিতা’ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বললেন, ‘সর্বপ্রকার নেশাজাতীয় পানীয় হারাম।’ (সহিহ বুখারি-৫৫৮৫)
মাদক বা মাদকজাত দ্রব্যে সাময়িক প্রশান্তি আছে বটে; কিন্তু ক্ষতির দিকটি ভয়ঙ্কর ও অনেক বেশি। আর সেটিই যুগ যুগ ধরে রাখঢাক ছাড়াই নিজের জায়গা করে নিয়েছে। অথচ এটি সেবনে যুবসমাজ ধ্বংসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছতে চলছে। এসব মাদকাসক্তকে পূর্ণাঙ্গ সুস্থ করে তুলতে কিংবা কিছু রোগের চিকিৎসায় সিডেটিভ ড্রাগ দিতে দেখা যায়। কিন্তু ঘুরেফিরে মাদকের মূল উপাদানের রাসায়নিক রূপ মাত্র। চিকিৎসাবিদরা যদিও এ বিষয়ে একমত যে, এসব ঘুমের ওষুধে মূলত কোনো চিকিৎসা হয় না; বরং বাস্তবে এটি রোগের সাময়িক উপশমে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ পরিচর্যায় রোগী ভাসাভাসা সুস্থ হয়ে ওঠে, হয়তো মাদকের অভ্যাস আপাতত ছেড়েও দেয়। তবে বিপত্তি বাধে ওই সময়- যখন সমাজের বিভিন্ন উৎসবে দেদার মাদক সেবন করতে দেখে। বিভিন্ন প্রশ্নে ঘুরপাক খেয়ে আবারো সেবনের সম্ভাবনা থাকে বেশির ভাগ। এসব রিকোভার্ডদের পুনরায় পূর্ণাঙ্গ তৃপ্তি ও সন্তুষ্টির সন্ধানে দৌড়ঝাঁপ করতে থাকে চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে। আর এ কারণেই মানবজাতিকে যাবতীয় নেশা মুক্ত করতে মাদকের নাম রাসায়নিকভাবে পাল্টানোও মানুষের জন্য নিষেধ করেছেন মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মাদুর রাসূলল্লাহ সা:। কেননা, এটি ঘৃণিত খাবার। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত- আবু তালহা রা: নবী সা:-কে কয়েকটি ইয়াতিম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, তারা উত্তরাধিকার সূত্রে মদ পেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তা ঢেলে ফেলে দাও’। আবু তালহা রা: বললেন, আমি কি একে সিরকায় (ভিনেগার) রূপান্তরিত করতে পারব না? বিশ্বনবী সা: বললেন, ‘না’। (সুনানে আবু দাউদ-৩৬৭৫) একজন সামান্যতম ধর্মীয় জ্ঞান থাকা ব্যক্তি মাদক বা সিডেটিভ ড্রাগে আসক্ত হতে পারে না। পরিস্থিতির স্বীকারে এ ঘৃণ্য পথে পা দেয় সে। সমাজকে মাদক মুক্ত করতে শুধু আধুনিক চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বা নিজের অর্থ বিসর্জন দিয়ে কখনো সম্ভব হবে না। প্রয়োজন হবে বেশ কিছু পদক্ষেপ-
ধর্মীয় জ্ঞান ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের যুক্তির মাধ্যমে মাদক সম্পর্কে ঘৃণা জন্মানো। যেকোনো কারণে মানসিক বিপর্যস্তকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে ধাপে ধাপে তা থেকে সরিয়ে এনে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক চিকিৎসার মাধ্যমে হতাশামুক্ত করা। যা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। প্রয়োজন মোতাবেক ইলেকট্র্রিক ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে রাখা। বেকারদের কর্মসংস্থান, সর্বদা কাজে ব্যস্ততা, সুযোগে সফরের অভ্যাস করা এবং একাকিত্বের বদভ্যাস দূর করা। সর্বোপরি মাদকে আসক্তের সম্ভাবনাময় যাবতীয় স্থান কাল পাত্র পরিত্যাগ করা ও করতে উৎসাহিত করা।
মাদক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মাদকজাত দ্রব্য মানুষকে মৃত্যুর আগে মৃত্যু কামনায় অস্থির করে তোলে। এটি সেবকদের শারীরিক প্রতিবন্ধীর চেয়ে মানুষ বেশি ঘৃণা-উপহাস করে। একজন প্রতিবন্ধী যেকোনো মানুষ থেকে উপকারের আশা করতে পারে। পক্ষান্তরে মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগীকে এতই তাচ্ছিল্য করতে দেখা যায়, যা একজন নিকৃষ্ট পাপীকেও করা হয় না। তাই সমাজকে মদ্যপ বা মানসিক অস্থিতিশীল মুক্ত করতে পরিবার, পরিবেশ ও সমাজের প্রতিটি মানুষ তাদের যাবতীয় কথা শুনে সঠিক পরামর্শ এবং কুরআনি চিকিৎসায় সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল প্রতিকার সম্ভব। লেখক : আলেম ও গবেষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com