মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন ভাবছে না: ইসি আলমগীর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জে লিচুগ্রামে লিচুর খরা ডিপজলের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা কোথায় কীভাবে চলবে নির্দেশনার পর ব্যবস্থা: ডিএমপি টানা সাত কার্যদিবস পতনে শেয়ারবাজার ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন পরমাণু আলোচক বাঘেরি ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি কে এই মোহাম্মদ মোখবের

নওগাঁয় আমের মুকুলের মৌ মৌ সৌরভে ভরে গেছে চারিপাশ

মোশারফ হোসেন জুয়েল নওগাঁ :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩

দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। ধানের পাশাপাশি এই জেলা এখন সারাদেশে আমের জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ফাগুনের শুরু থেকে মুকুলে ছেয়ে গেছে প্রতিটি আম গাছ। মুকুলের ভারে যেন এখনই ভেঙে পরবে ডাল। চারিদিকে মৌ মৌ করছে সেই ঘ্রাণ। পাগল করা মুকুলের গন্ধ যেন আবহমান বাংলার স্বর্গীয় রূপ মেলে ধরেছে জেলার আনাচে কানাচে। জেলার প্রতিটি উপজেলার যেদিকে চোখ যায় এমনই অনিন্দ সৌন্দর্য চোখে পড়ে। যা সহজেই হৃদয় কাড়ে সবার। জেলার পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে। এই দুই উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগান মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত পুরো এলাকা। চারিদিকে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালি মুকুলের আভা। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। আমবাগানের কয়েক বছরের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ মুকুল এসেছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত মুকুলের ঝরে পড়ার হারও কম। আসতে শুরু করেছে আমের গুটিও। রোগ-বালাই কম ও আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলনের আশায় গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিকরা। প্রত্যাশা করছেন, মুকুলের সঙ্গে সঙ্গে এবার আমেরও বাম্পার ফলন আসবে। এছাড়া যারা দেশের বাইরে আম রপ্তানি করবেন তারা নিচ্ছেন বিশেষ পরিচর্যা। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৫২৫ হেক্টর বেশি। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনদিন বাড়ছে আমের চাষাবাদ। এ বছর আমের ফলন নিয়ে দারুণ আশাবাদী জেলার আম চাষিরা ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি বছর আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। নওগাঁ জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে নওগাঁয় আম বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছিল। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। উৎপাদনে হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবছর হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে উপজেলা ভিত্তিক আম চাষের পরিমাণ হলো-সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, রানীনগরে ১৩০, আত্রাইয়ে ১২০ দশমিক ৫, বদলগাছীতে ৫৩০, মহাদেবপুরে ৬৩০, পতœীতলায় ৫ হাজার ৮১৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, সাপাহারে ৯ হাজার ২৫৫, পোরশায় ১০ হাজার ৫৫০, মান্দায় ৪০০ ও নিয়ামতপুরে ১ হাজার ৩৮৪ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে। পোরশা উপজেলার আমচাষী বাবু বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে এবার মুকুল বেশি এসেছে। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার ভালো ফলন পাবে। ইতিমধ্যে গাছে আমের গুটি আসা শুরু করেছে। এখন পরিচর্যা বলতে শুধু বিষ প্রয়োগ ও গাছে সেচ করতে হচ্ছে। যত গুটি বেশি আসবে ততো বিষ প্রয়োগ বেশি করতে হবে। তবে এখন একটু বৃষ্টির প্রয়োজন। বৃষ্টি হলেই চিন্তা নাই। আর বৃষ্টি না হলে ওষুধ মেশানো পানি গাছের মুকুলে স্প্রে করতে হবে। পোরশা উপজেলা আমের জন্য খুব বিখ্যাত। এ উপজেলার আম খেতেও খুব ভালো। আম চাষ লাভ হওয়ায় প্রতিবছরই বাগান বাড়ছে এ উপজেলায়। তাই ৯৫ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ আমবাগানের উপর নির্ভর করে। আরেক আমচাষি আব্দুস ছালাম বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এবার অত্যাধিক মুকুল এসেছে গাছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে গাছে আমের গুটি আসতে শুরু করবে। তাই গাছে পোকার আক্রমণ না করতে পারে, মুকুল যেন ভালো থাকে সেজন্য বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন রকম ওষুধ স্প্রে করছি। এতে করে মুকুলে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারবে না। আশা করি এবার ভালো ফলন পাবো ও লাভবান হবো। সাপাহার উপজেলার আমচাষি বদর উদ্দিন বলেন, আমি অন্যর জমি বিভিন্ন মেয়াদি লিজ নিয়ে ৩৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান করেছি। তাতে আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতি ও আশ্বিনা জাতের আম গাছ রয়েছে। প্রায় ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে। কিছু কিছু গাছে ইতিমধ্যে আমের গুটি আসতেছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি চলে আসবে। সাপাহার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা ও আম চাষি সোহেল রানা গত দুই বছর ধরে বিদেশে আম রফতানি করছেন। তিনি বলেন, প্রায় বিঘা ৭০ বিঘা জমিতে আম্র্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজিকিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম আছে তার বাগানে। এবার শতভাগ গাছেই মুকুল এসেছে। যেহেতু দেশের বাইরে আম রফতানি করবো তাই আমগাছের বাড়তি পরিচর্যা করা হচ্ছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মঞ্জুরে মাওলা বলেন, এবছর প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুলের সমারহ ঘটেছে। প্রায় শতভাগ গাছের মুকুল আসা শেষ হয়েছ। ইতিমধ্যে গাছে গুটি আসা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের সেচ নিশ্চিত করাসহ কি ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে এসব কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নওগাঁর আমের মান বাংলাদেশের যেকোনো আমের থেকে এখন প্রতিযোগিতায় ভালো। গত বছরের চেয়ে এবছর প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বেশি আম রপ্তানি করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। এছাড়াও নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম বিদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বছর আমের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com