সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

ছাত্ররাজনীতির সঙ্কট

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

ছাত্র ও ছাত্ররাজনীতি চলমান জীবনের একটি অনুষঙ্গ। ছাত্র আছে রাজনীতি নেই- এটা এখন ভাবাই যায় না। ছাত্ররাজনীতির এই ধারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছাত্রজীবনের এক আচরিত বৈশিষ্ট্য। ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ চালক। এ কথা সামনে রেখে আবর্তিত বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি। ছাত্র অধিকার, সামাজিক দায়বোধ, আন্তর্জাতিক আর্থ-রাজনৈতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ছাত্রদের গড়ে ওঠার প্রেক্ষিত রচনায় চর্চিত হয় ছাত্ররাজনীতি। সামাজিক দায়বোধ সম্পন্ন একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রথম সোপান হিসেবে ব্যবহৃত হয় ছাত্ররাজনীতি। আমাদের দেশেও একসময় এভাবে চর্চিত হতো ছাত্ররাজনীতি। কিন্তু বর্তমান ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষিত বদলেছে। ছাত্ররাজনীতি মানে এখন বিভিন্ন ধরনের ভাইদের প্রাধান্য। তারা নিজস্ব ক্ষমতার বলয় তৈরি করতে, আধিপত্য বিস্তারে তুলে নিচ্ছে লাঠি ও অস্ত্র। তৈরি করেছে বিভিন্ন ধরনের গণরুম ও টর্চারসেল। বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজিতে তারা যেমন তৎপর; তেমন তৎপরতা দেখা যায় না ছাত্রদের সমস্যার ক্ষেত্রে. অধিকার রক্ষা ও আদায়ের ক্ষেত্রে।
বছর বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ছাত্র নেতৃত্বের যে দায়ভার হস্তান্তর তা এখন অনুপস্থিত। শীর্ষ ছাত্রনেতৃত্ব নির্বাচিত না হয়ে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক মনোনীত হওয়ায় পদপ্রত্যাশীরা তাদের সুদৃষ্টিতে থাকতে ব্যস্ত থাকেন। ফলে তাদের ভেতর গণতান্ত্রিক মানসিকতা, চেতনা ও দায়বোধ তৈরি হচ্ছে না। ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ছাত্র নেতৃত্ব এখন সমর্থিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনে পরিণত। অথচ ছাত্রসংগঠন হওয়ার কথা ছিল সহযোগী সংগঠন। ফলে ছাত্ররাজনীতি মৌলিকতা হারিয়েছে। ছাত্রদের অধিকার এখন তাদের কাছে মুখ্য নয়। মুখ্য লেজুড়বৃত্তি এবং মূল রাজনৈতিক শক্তির পেটোয়া বাহিনী হওয়ার মাধ্যমে পার্থিব নগদ প্রাপ্তি। এ পরিস্থিতির জন্য ছাত্র বা রাজনীতিকে দায়ী করা ঠিক হবে না। প্রথমত, শিক্ষার পরিবেশের কথা বলা যায়। প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষকরা পড়াশোনার মানোন্নয়ন, মেধার পরিচর্যার মাধ্যমে ছাত্রদের গবেষণামূলক কাজে উৎসাহিত করার পরিবর্তে রাজনৈতিক ভূমিকাতে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে ভালোবাসেন। ছাত্রদের নিজস্ব চিন্তার বিকাশ উজ্জীবিত করার পরিবর্তে নিছক পাঠ্যবইয়ের ভেতর তাদের আটকে রাখতে দেখা যায়। উদ্যমী, কর্মমুখী, গবেষণাধর্মী শিক্ষার চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে তারা নীরব। অথচ অগ্রসরমান পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই। ফল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষা ডিগ্রি নিয়ে ভালো রেজাল্ট অর্জনকারীরাও একটা চাকরির প্রত্যাশায় বিসিএস সহায়িকা, ব্যাংকের চাকরি সহায়িকা মুখস্থ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কর্তৃপক্ষও এ ধরনের একটা পরিবেশ চান বলে মনে হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ফাও একটি অনুগত বাহিনী হাতে পেয়ে বলতে গেলে খুশি হয়। কারণ তারা ছাত্রদের এ ঘেরাটোপ থেকে উদ্ধারের কোনো রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে আসেননি। বরং ছাত্ররাজনীতিতে তাদের চোখের সামনে দিয়ে অছাত্র নেতৃত্বের অভিষেক ঘটে। স্বাভাবিকভাবে ছাত্র রাজনীতি তখন গন্তব্য হারায়। মেধার লালনের পথ হারিয়ে যাওয়ায় আবির্ভাব ঘটেছে পেশিশক্তির।
এরা হলে হলে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তারে মুখ্য নিয়ামক। ‘বড় ভাই’ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে খ্যাত এসব নেতৃত্ব জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক অনৈতিক কার্যকলাপে। হেলমেট বাহিনী বা অন্যান্য বাহিনীর সৃষ্টি এভাবে। এভাবে কলঙ্কিত হয়েছে ছাত্ররাজনীতির একসময়কার সুকুমার চর্চা। মেধা ও সৃষ্টিধর্মী চিন্তার লালন বিকাশ ও চর্চা আজ ছাত্ররাজনীতির ভেতর অনুপস্থিত। পরিবর্তে ছাত্ররাজনীতি এখন হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, অসহিষ্ণুতা ও শক্তিচর্চার প্রতিমূর্তি। সহপাঠীর রক্তে রঞ্জিত এখন ছাত্ররাজনীতি। অনুপস্থিত পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের। মেধা, যোগ্যতা, সততা, দেশপ্রেম, সমাজ সচেতনতার পরিবর্তে দেখা যায় লাঠি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি। যা কলঙ্কিত করেছে ছাত্ররাজনীতিকে। ষাটের দশকের ছাত্র, ছাত্রনেতারা যেভাবে সম্মানিত হতেন, অপত্য স্নেহে লালিত হতেন সমাজের কাছে; আজ তা পরিবর্তিত হয়ে ভয়ভীতি, অবিশ্বাস ও শঙ্কায় পরিণত হয়েছে। ছাত্ররাজনীতি এখন সমাজে আদৃত নয়। ছাত্ররাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য হলো পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেকে দায়িত্ব সচেতন, সৎ, মৌলিক মানবিক ও সামাজিক গুণাবলী বিকাশের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগ্য প্রতিভূ তৈরি হওয়া। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লের সমস্যা, পরিবেশ দূষণ, অর্থনৈতিক গতিধারার, জ্ঞানে নিজের পরিপূর্ণতা অর্জন। বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করা। অতীতে আমরা এগুলো চর্চিত হতে দেখেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়াদের সবাই দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্মান করত। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়াদের সম্মানের জায়গা আজ নেই। র‌্যাগিং কালচার, নারী শিক্ষার্থীদের আক্রমণের রুচিহীন কার্যকলাপ ছাত্ররাজনীতিকে অপরাজনীতিতে পরিণত করেছে। ২০০৮ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জরিপে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি, বিরাজনীতিকরণের জন্য ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন নেই বলে মত প্রকাশ করেছিলেন এ কারণে।
ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের ভেতর থেকে তৈরি হবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। যারা ভবিষ্যৎ দেশ পরিচালনা করে জাতিকে এগিয়ে নেবেন। দেশপ্রেমিক, সৎ, মৌলিক মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দায়বোধে উদ্বুদ্ধ নেতৃত্ব তৈরি হবে তাদের ভেতর থেকে। গণরুম, টর্চারসেল, পেটোয়া বাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে এ নেতৃত্ব তৈরি হয় না। এ জন্য যেমন দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষকদের, দায়িত্ব রয়েছে মূলধারার রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং বুদ্ধিজীবী মহলের। সাথে সাথে যুগোপযোগী, গবেষণাধর্মী শিক্ষাব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। ছাত্ররাজনীতিকে অপরাজনীতি থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের হাতে বই তুলে দেয়া দরকার। অবসান ঘটানোর দরকার অঙ্গসংগঠন নামক কলঙ্কতিলক। দল-মত নির্বিশেষে ছাত্রসমাজকে যুগোপযোগী কর্মধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে প্রয়োজন নেতিবাচক রাজনৈতির অবসান।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ  Email- shah.b.islam@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com