মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিশ্বরাজনীতির জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে আগামী চার বছরের জন্যে কে হতে যাচ্ছেন বিশ্বরাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অনেক দেশের হেভিয়েট নেতারা এখন এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন কারণ এটার ওপর অনেক হিসাবনিকাশ নির্ভর করছে যেমন নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি, কর্তৃত্ববাদ, অস্ত্র ব্যবসা ইত্যাদি। তবে নাটকীয় কিছু না ঘটলে আগামী ৩ নভেম্বরে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হবে।
আমরা সবাই জানি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় নভেম্বর মাসের ১ম মঙ্গলবার। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেটা এই বছরের ৩ নভেম্বর পড়ছে। চলতি বছরের সমীক্ষাগুলো বলে দিচ্ছে, এবারের নির্বাচন মোটেও সহজ হবে না, সেটা ২০১৬ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলেই স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। তবে নির্বাচন একদম শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোট ৫৩৮টি। এখানে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে অবশ্যই ২৭০টি ভোট পেতে হয়। সুতরাং ৭৭ বছর বয়সি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন অথবা ৭৪ বছর বয়সি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই নির্বাচিত হতে চান না কেন এটা সত্যি যে, একে-অপরকে কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের যে ৫০টি অঙ্গরাজ্য আছে তাদের অধিকাংশ রাজ্যের নাগরিক খুব তাড়াতাড়ি ভোট প্রদান করেন আবার এমনও কয়েকটি রাজ্য আছে যারা একেবারে শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। তারা অনেক ভেবেচিন্তে নিজেদের ভোট দেন। যেসব রাজ্যের নাগরিকরা এভাবে ভোট প্রদান করেন সেইসব রাজ্যকে অনেক বিশেষজ্ঞই সুইং স্টেট বলে থাকেন। এবারেও কয়েকটি রাজ্যকে সেই ক্যাটেগরিতে শনাক্ত করা হয়েছে, রাজ্যগুলো হলোÍমিশিগান, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন এবং অ্যারিজোনা। তবে এখন পর্যন্ত যতগুলো জরিপ হয়েছে তাতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের দিকে ঝুলে আছে অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে তিনি এগিয়ে আছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, গত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে রাজ্যগুলোতে হিলারি ক্লিন্টনকে হারিয়েছিলেন এখন সেসব রাজ্যে জো বাইডেন তার থেকে অনেকটা এগিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে যাবে। জো বাইডেনকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বয়সে যেমন প্রবীণ রাজনীতিতেও তেমন। বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদি তিনি নির্বাচিত হন তাহলে তিনিই হবেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট। অনেকের ধারণা, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তাহলে কি কমে গেল? কিছুটা কমেছে এটা নিশ্চিত কারণ, একেক সময় হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দমনে ব্যর্থ হওয়া এবং মিডিয়ার সামনে উলটাপালটা কথা বলা যার ফলে সবার কাছে হাসিতামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। অবশ্য নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন যুক্তরাষ্ট্রে হু হু করে বাড়তে থাকে তখন তিনি যে বিরাট অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তাতে অনেকেই খুশি হয়েছিল। এমনকি সেসময় তার সমর্থন বেড়েছিল ৫৫ শতাংশ কিন্তু সেটা ধরে রাখতে পারেননি। এখন সেই সমর্থন ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সুতরাং এটা থেকেও অনুমান করা যায় তিনি খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তবে আশার বাণী হলোÍসাম্প্র্রতিক সময়ে কম ট্যাক্স হার, বন্দুক রাখার অধিকার এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন এজন্য প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় তার জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে। অপরদিকে জো বাইডেন বলছেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের গৌরব নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন, পরোক্ষভাবে জলবায়ু বিপর্যয় ঘটিয়েছেন, কথায় এবং কাজে সাম্প্র্রদায়িকতার পরিচয় দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব হারিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন, বহুবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ টেলিফোন আলাপচারিতা প্রকাশ যা আমেরিকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আঘাত হেনেছে।
এখন আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চাই। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে এক জন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কখনো নিজের ব্যক্তিগত কাজের জন্যে তার প্রেসিডেন্ট পদটি ব্যবহার করতে পারেন না। ‘ট্রাম্পও অবশ্য ছেড়ে কথা বলেননি। ডজন খানেক অভিযোগ হাজির করেছেন জো বাইডেনের বিরুদ্ধে। এজন্য কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তবে শেষমেশ সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ৩ নভেম্বরেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে কে হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী চার বছরের কান্ডারি জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প! ততদিনে অপেক্ষা করতে হবে সবাইকে। লেখক :শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।