রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

উপকূলে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩

ফাল্গুন শেষে চৈত্র মাস শুরু হতেই যুদ্ধে নেমেছেন মোংলা উপকূলের মানুষজন। এই যুদ্ধ সুপেয় পানির জন্য। এই অ লের সর্বত্র লোনা পানি। যুগ যুগ ধরে পানির সঙ্গে বসবাস করলেও সুপেয় পানির হাহাকার চলছে। সুপেয় পানি সুন্দরবন সংলগ্ন এই অ লের মানুষের কাছে যেন সোনার হরিণ। মোংলা পৌর শহরের বাইরের এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। উপজেলার ৮৫ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল-বিকাল পানি আনতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন নিম্নাঞ্চলের নারীরা। এর মধ্যে কোনও কোনও গ্রামের বাসিন্দাকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়।
উপজেলার জয়মনি, বৌদ্ধমারী, চিলা, চাঁদপাই, মিঠাখালী, মাকোরডোন, নারিকেলতলা, মাছমারা ও বুড়িডাঙ্গা গ্রামের অনেকে সুপেয় পানির সন্ধানে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যান। বছরের পর বছর পানির জন্য এভাবেই যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলে লবণাক্ততার প্রভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফলে সুপেয় পানি পাওয়া দুষ্কর হচ্ছে।
উপকূলের মানুষের সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটির জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি প্রকল্পের মোংলা অ লের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শফিকুর রহমান স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোংলাসহ উপকূলের বিভিন্ন অ লে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। এমনকি দৈনিন্দন কাজে ব্যবহৃত পানির ব্যবস্থাও তেমন একটা নেই। এ অবস্থায় চৈত্র মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মোংলা উপকূলজুড়ে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য এই উপজেলার ছয় ইউনিয়নের দুই হাজার ৪৭৫ পরিবারের মাঝে দুই হাজার লিটারের ট্যাংক বিতরণ করেছি আমরা। আগামী তিন বছরে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য আরও ট্যাংক বিতরণ করবো।’
সুন্দরবন সংলগ্ন জয়মনি গ্রামের অলিয়ার রহমান, আজমল হোসেন ও বিথিকা রানি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুপেয় পানির জন্য হাহাকারের শেষ নেই। গরমের মাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন অসহ্য হয়ে উঠে জীবনধারণ। গ্রামের মেঠোপথ ধরে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যে পরিমাণ পানি আনা হয়, তার চেয়ে শরীরের ঘাম বেশি বের হয়। কষ্টের যেন শেষ নেই তাদের।
বিথিকা রানি বলেন, ‘সূর্য উঠার আগেই পানি আনতে অন্য গ্রামে যান আমাদের গ্রামের নারীরা। প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা চলে যায় পানি আনার কাজে। এ যেন ছকে বাঁধা জীবন।’
ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা আর আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চিলা এলাকার অধিকাংশ সুপেয় পানির উৎস। এরপর থেকে শুরু হয় সুপেয় পানির সংকট। বর্ষা মৌসুমে সংকট কিছুটা কম থাকলেও চৈত্র মাস শুরু হতেই সংকট তীব্র হয়।
চিলা এলাকার বাসিন্দা বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, ‘সুপেয় পানির এখন যে সংকট তা আগে কখনও দেখিনি। দিন যতই যাচ্ছে ততই সংকট তীব্র হচ্ছে। এই এলাকার পানির সংকট দূর করার জন্য দায়িত্বশীলদের কাছে অনুরোধ জানাই।’
সুপেয় পানির সংকটে আছেন মোংলা পৌরসভার কয়েক এলাকার মানুষজনও। পৌরবাসীর জন্য ২০০৮ ও ২০১৬ সালে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মাছমারা এলাকায় খাবার পানি সংরক্ষণে দুটি পুকুর খনন করা হয়। পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে চাহিদা মেটানো হতো দুই লাখ বাসিন্দার। কিন্তু এরই মধ্যে দুটি পুকুর প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় পানির চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
সুপেয় পানি সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এই রমজানে পানি সংকট ভয়াবহ হবে। যদিও গত ৯ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা অত্যন্ত কঠিন। শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এসব কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি আমরা।’ গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে পৌর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, ‘শতভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ করতে মাছমারায় যে দুটি পুকুর রয়েছে, তা পুনরায় খননসহ আরও কিছু প্রকল্প দরকার। এজন্য ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর পানির সংকট দূর হবে।’
উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সোহান আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি সরকারিভাবে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, মোংলা উপজেলার ৮৫ শতাংশ সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন। সংকট নিরসনে এক বর্ষা মৌসুম থেকে আরেক বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প প্রয়োজন। এজন্য কাজ চলছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক বিতরণ করা হচ্ছে। তবু সংকট কাটছে না।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com