শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমছে বিদ্যুৎ উৎপাাদন গাজীপুর মিডিয়া ক্লাবের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল ফটিকছড়িতে ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুইরেন্সের ইফতার মাহফিল আলোচনা সভা টুঙ্গিপাড়া প্রেসক্লাব এর সভাপতি সওকত হোসেন মুকুল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসেন নির্বাচিত জামালপুরে ৩৫ বিজিবির পক্ষ থেকে অসহায় দুস্থদের মাঝে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন ঈদের পোশাকের দাম গরিবের হাতের নাগালের বাইরে তাড়াশে প্রান্তিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে ছাগল প্রদান বরিশালে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন বাগেরহাটে গাঙচিলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল

ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা

হুসাইন আহমদ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

মানবজীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামের অপরিসীম অবদান রয়েছে। ইসলাম স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের উষালগ্নেই স্বাধীনতার মূলনীতি ঘোষণা হয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি স্মরণ করা যায়। যেখানে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘পৃথিবীর বুকে তুমি মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করেছো, অথচ তার মা তাকে স্বাধীন মানুষ রূপেই জন্ম দিয়েছেন।’ চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) একবার কিছু লোককে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহই যখন তোমাকে স্বাধীন মানুষ করে সৃষ্টি করেছেন, তখন কোনো মানুষ কখনো তোমাকে দাস বানাতে পারে না।’ আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন এবং এই স্বাধীনতা নিয়েই মানুষ জন্মগ্রহণ করে। তার জন্মগত অধিকার হচ্ছে কেউ তাকে তার এই স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। জোর-জবরদস্তি করে তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করবে না। ইসলাম যখন স্বাধীনতাকে তার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে, তখন সময়টি ছিল এমন অধিকাংশ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনীতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল। মানুষের এই বহুরূপ দাসত্ব-শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করল। বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতা সব ক্ষেত্রেই ইসলাম এই স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে। ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম হওয়া সত্ত্বেও ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম বা বিশেষ কোনো ধর্মগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দমননীতি অনুমোদন করে না। এ প্রসঙ্গে ইসলামি ধর্মগ্রন্থের বহু উদ্ধৃতি রয়েছে। পবিত্র কোরআনের মক্কি-যুগের সুরায় আল্লাহ বলেছেন, ‘এবং যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন তাহলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারী সব মানুষকেই একসঙ্গে বিশ্বাসী বানিয়ে ফেলতে পারতেন। সুতরাং (হে মুহাম্মদ!) তুমি কি তাহলে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য লোকদের বাধ্য করতে চাও?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৯৯)
ইসলাম কথা বলার ও সমালোচনার স্বাধীনতাকে শুধু এর মূলনীতির অংশ হিসেবেই গ্রহণ করেনি কিংবা একে শুধু স্বাধীনতার অংশ হিসেবেই গুরুত্ব প্রদান করেনি। বরং সমাজ-সংস্কৃতি ও গণমানুষের স্বার্থ, সর্বজনীন নৈতিকতা ও জীবন-পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত জনগুরুত্বপূর্ণ স্বার্থরক্ষার প্রয়োজনে সত্য বলা, সত্য প্রকাশ এবং সমালোচনাকে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হক কথা বলা, সমালোচনা করা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করাকে ধর্মীয় কর্তব্যেরও অংশ বলে গণ্য করা হয়েছে। সত্যের প্রতি আহ্বান, সৎলোকদের উৎসাহ প্রদান, দুষ্কৃতকারীদের নিন্দা করাকে ইমানদারির লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ইমানদার ব্যক্তির নীরবতা যদি সমাজের ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে এর জন্য আল্লাহর কাছে তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এ কারণে ইমানদার ব্যক্তির ওপর অপরিহার্য দায়িত্ব হয়ে পড়ে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখো আর যে বিপদই আসুক না কেন তার জন্য ধৈর্যধারণ করো। এসবই আল্লাহ প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং এ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যেতে পারে না।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৭)। বস্তুত, এটিই ইসলামের পথ, এটিই ইসলামের ব্যাপ্তি।
বিশ্বাসের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি ইমানদারদের লড়াই করার অনুমতি না দিতেন, তাহলে পৃথিবীতে অশুভ দানবীয় শক্তির ঔদ্ধত্য ও আধিপত্য এতই বেড়ে যেত, তারা পৃথিবীর বুক থেকে আল্লাহর নাম-নিশানাই মুছে দেওয়ার চেষ্টা করত। এমনকি আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এমন কোনো স্থানের অস্তিত্ব থাকত না। সুতরাং এটিই হচ্ছে ইসলাম, যা পৃথিবীতে মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে, ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে সমুন্নত করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইসলাম কখনো স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখে না। অনেক সময় পাপাচার, নৈতিক বিকৃতি আর স্বেচ্ছাচারিতার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয় আর দাবি করা হয় এগুলো নাকি ‘ব্যক্তি-স্বাধীনতা।’ মূলত এর মাধ্যমে ব্যক্তি-স্বাধীনতারই অবমাননা করা হয়, বিকৃতি করা হয়ে, তাতে সন্দেহ নেই। ইসলামে উল্লেখ আছে ক্ষতিকর সব স্বাধীনতাই প্রতিরোধযোগ্য এবং নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। মনে রাখা উচিত, আপনার স্বাধীনতার সমর্পণ অন্যের স্বাধীনতার সূচনা করে। অতএব, স্বাধীনতা এক খোদায়ি আমানত, যা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধঃপতনের শিকার হয়। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সদা সজাগ থাকতে হবে। স্বাধীনতার মাসে আমাদের এটাই হোক অঙ্গীকার। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝদান করুন এবং জন্ম থেকেই যে স্বাধীনতা আল্লাহতায়ালা দিয়েছেন তা বাস্তব জীবনে কার্যকর করার মানসিকতা গড়ে উঠুক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com