রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন

পাহাড়ধস নিয়ে ভাবতে হবে আগেভাগেই

মোহাম্মদ মারুফ মজুমদার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের প্রাকৃতিক সম্পদ তথা পাহাড়ের সৌন্দর্য রক্ষা অনেকখানি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় পাহাড়ধসের ঘটনা পত্র-পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে নৈমিত্তিক চিত্র হয়ে ওঠে। পাহাড়ধস যতটুকু না, প্রাকৃতিক ঘটনা তার চেয়ে ঢের বেশি মানবসৃষ্ট অপরিণামদর্শিতার ফসল। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, বনভূমি উজাড়, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ না হওয়া, বিজ্ঞানসম্মত ড্রেন-নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রাখা, যত্রতত্র পাহাড় কেটে বাসস্থান নির্মাণ, পরিকল্পিত বনায়ন না করা, আবহাওয়া-জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারংবার দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশে। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন দশকে কেবল চট্টগ্রামেই তিন শতাধিক পাহাড় কাটা পড়েছে। বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। এক্ষেত্রে দুটি কারণ জড়িতÍমাটি কেটে ইট ভাটায় ব্যবহার করা ও প্লট তৈরি করে বসত নির্মাণ। এসবের পেছনে রাঘববোয়ালসহ বিভিন্ন অবৈধ কোম্পানির আঁতাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি অতিবৃষ্টি ও ভূমি ক্ষয়ের কারণে পলি জমে প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্ট খালনালা ও নদী ভরাট হওয়ার প্রেক্ষিতে পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকা ও বেলে প্রকৃতির পাহাড়ে বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকায় অতিবৃষ্টির ফলে পানি ভেতরে প্রবেশ করার কারণে পাহাড়ের স্থিতিস্থাপকতা বা স্থিতিশীলতা একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সহজেই ভঙ্গুর হচ্ছে পাহাড়গুলো। এছাড়া বজ্রপাতে সৃষ্ট প্রচ- শব্দতরঙ্গকে প্রশমন করার জন্য পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় শব্দতরঙ্গ সরাসরি পাহাড়ে আঘাত হেনে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের পাহাড়ধসপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা ও সিলেট এলাকা এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে কিছু পাহাড় রয়েছে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৫ হাজার ৮০৯ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ে মূলত ধসের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। মূলত পাহাড়ের যে অংশে জনবসতি বেশি, মানুষের বিচরণ বেশি, সেসব এলাকায় ধস যেন বাৎসরিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এসব পাহাড়ে ধসের কারণে প্রচুর ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, প্রাণহানির ঘটনা ও সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় পাহাড়ধস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমনÍপাহাড় ঝুঁকিমুক্ত ও বসবাসের উপযোগী কি না তা বৈধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই করতে হবে। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ধসপ্রবণ পাহাড়ে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করতে হবে, যাতে বৃক্ষ মাটির সহনশীলতা বৃদ্ধি ও ধস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পাহাড়ে বনাঞ্চলের সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগকে আরো মনোযোগী হতে হবে। পাহাড়ে আদিবাসীদের জুমচাষ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ জুমচাষ ভূমির ক্ষয়কে তীব্রতর করে। আদিবাসীদের আধুনিক চাষাবাদে আগ্রহী করে তোলা সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া, পাহাড়ধসে প্রাণহানি রোধ ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে ভূতাত্ত্বিকদের পরামর্শ নেওয়া, দীর্ঘ মেয়াদে বন বিভাগ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসনÍসবাইকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। উল্লেখ্য, আমেরিকার ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনকে একটা কারণে মানুষ বিশেষভাবে মনে রেখেছে। সেটা হলো, তিনি আমেরিকার সব বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে কেউ বনের কোনো গাছ কাটতে পারবে না। ফলে এর সুফল এখন আমেরিকা ভোগ করছে। আমাদেরও এমন একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর তবেই পাহাড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর মিছিল কমবে। রক্ষা পাবে দেশের জাতীয় সম্পদ। লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com