শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

জীবনের পাঁচটি উপহার

মার্ক টোয়েন
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

॥ অনুবাদ ছোট গল্প ॥

এক জীবনের প্রথম উষায় এক আশ্চর্য পরী তার সাজি নিয়ে এসে উপস্থিত হল। বলল, এইসবই উপহার। এর মধ্য থেকে যে-কোনো একটি তুলে নাও। খুব সাবধানে, খুব চিন্তা করে; কারণ এর মধ্যে মাত্র একটিই মূল্যবান।
পাঁচরকম উপহার ছিল সেখানে। খ্যাতি, প্রেম, ঐশ্বর্য, আনন্দ এবং মৃত্য। আগ্রহ সহকারে তরুণ বলল, এখানে চিন্তা করার কিছুই নেই এবং সে আনন্দ বেছে নিল। তারপর সে বিশ্বপরিক্রমায় নিজেকে নিয়োজিত করল। তারুণ্যের আনন্দের প্রাচুর্যে নিজেকে সমর্পিত করবার চেষ্টা করল নিঃশেষে। কিন্তু প্রত্যেকবারই তরুণ দেখতে পেল, সে আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, বেদনার্ত, নিল আর শূন্য। এবং বিদায়-বেলায় সে আনন্দ বিদ্রুপাকীর্ণ। আর তাই সবশেষে সে বলল, এই বছরগুলো আমি বৃথাই নষ্ট করলাম। আবার যদি আমাকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে আমি নিশ্চয়ই চিন্তা করে বেছে নেব।
দুই পরী আবার এসে উপস্থিত হল। বলল ; চারটে উপহার এখনো বাকি আছে। আবার বেছে নাও আর মনে রেখো, সময় চলে যাচ্ছে-কাল অপেক্ষা করবে না কারো জন্যে। আর জেনো, এগুলোর মধ্যে মাত্র একটিই মূল্যবান।
অনেক চিন্তা করে লোকটি এবার ‘প্রেম’ বেছে নিল। কিন্তু পরীর দু-চোখের কোণে যে অশ্রুর রেখা টলমল করে উঠল, তা সে দেখতে পেল না। তারপর অনেক অনেক বছর পরে লোকটি নির্জন এক বাড়িতে একটি কফিনের সামনে বসে ছিল। আত্মগতভাবে সে বলছিল, একে একে ওরা সব আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আর এখন। এই শূন্য বাড়িতে সে শুয়ে আছে নিঃসঙ্গ হয়ে, যে এসেছিল সবচেয়ে শেষে আর যে ছিল সবচাইতে প্রিয়। নিঃসঙ্গতার পর নিঃসঙ্গতার ঢেউ আমার ওপর বয়ে গেছে ঝড়ের মতো। ভালোবাসার কুহক থেকে আমি যে আনন্দ পেয়েছি তার জন্যে আমাকে অসংখ্য মুহূর্তের বেদনার নিবিড় মূল্য দিতে হয়েছে। আর তাই আমি হৃদয়ের গহন থেকে ঘৃণা করি, অভিশাপ দিই-ভালোবাসাকে, প্রেমকে।
কী আশ্চর্য! পরী আবার এসে বলল, এবারও বেছে নাও। বহু বছরের অভিজ্ঞতা তোমাকে জ্ঞানের আলোর স্পর্শ দিয়েছে। তুমি এবার ভুল কোরো না। এখনো উপহার বাকি রয়েছে। আর এদের মধ্যে একটি মাত্র বিশেষ মূল্যবান। সেটা মনে রেখো আর ভেবেচিন্তে পছন্দ কর, এবারও যেন ভুল কর না।
সে অনেক ভাবল। তারপর বলল, আমাকে খ্যাতি দাও। আর পরী একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল নিজের বিষন্ন নির্জন পথে। তারপর আরো অনেক বছর অতিক্রান্ত হল নিঃশব্দে। একদা আসন্ন দিনান্তে যখন লোকটি বসেছিল একা একা আর ভাবছিল, তখন সেই পরী এসে দাঁড়াল তার পেছনে। পরী জানত, সে কী ভাবছে : আমার নাম বিশ্বভুবন জুড়ে ছেয়ে গেছে। সকল কণ্ঠ আমার নামের প্রশংসায় মুখর। ক্ষণিকের জন্য এটা আমার ভালোই লাগে। কিন্তু কত অল্পক্ষণের জন্যই-না এই ভালো লাগা! তারপরই আসে ঈর্ষা, পরনিন্দা, অপবাদ আর ঘৃণা। আর তারপর নির্যাতন। এবং ক্রমে অসহনীয় বিদ্রুপ ও পরিহাস আসে সমাপ্তির সূচনা হয়ে। সর্বশেষে কৃপার দুঃসহ আগুনে পোড়াতে হয়। নিজেকে শেষ করতে হয় খ্যাতির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া : হায়, খ্যাতির তিক্ততা আর যন্ত্রণা! প্রারম্ভে পঙ্কিলতার শিকার আর পতনের সময় ঘৃণা, অপমান আর করুণার পাত্র।
আরো একবার বেছে নাও, আবার শোনা গেল সেই পরীর কণ্ঠ, দুটো উপহার এখনো বাকি আছে। বিমর্ষ হবার কোনো কারণ নেই। শুরুতে যে একটিমাত্র মূল্যবান উপহার ছিল, তা এখনো রয়েছে। ঐশ্বর্য! হ্যা, আমি কি অন্ধ ছিলাম। আমাকে ঐশ্বর্য দাও, সেই লোকটি বললÍসবশেষে এবার আমার জীবনে বাঁচবার একটা অর্থ হবে। এবার আমি বাচার মতো বাঁচতে পারব। এবার আনন্দে উল্লসিত হবে জীবন। দুহাতে ব্যয় করতে পারব-উৎসাহ, আনন্দ, ঔজ্জ্বল্যে। এইসব বিদ্রুপকারী আর উপহাসকারীর দল এবার আমার সামনে আবর্জনায় হামাগুড়ি দেবে। আর তাদের ঈর্ষার সতৃষ্ণ দৃষ্টি দেখে আমার ক্ষুদ্ধার্ত আত্মা শান্তি পাবে। সমস্ত বিলাসিতায় আমি ডুকে যেতে পারব, সমস্ত আনন্দে আমি উৎসাহিত হব। মনের মত-লায় আর দেহের তৃপ্তিতে, যা মানুষের সবচেয়ে প্রিয়Íআমি তাতে সমর্পিত হব। পৃথিবীতে যা কিছু স্মরণীয়, শ্রদ্ধেয়, পূজনীয় সব আমি অর্থের বিনিময়ে কিনে নের। এর পর এক কিনে যা শুধু : বহু মূল্যবান সময় আমি নষ্ট করেছি, আকাঙ্ক্ষিত বস্তু আমি চিনতে পারিনিÍকিন্তু সেসব এখন অতীত ; আমি তখন অজ্ঞ ছিলাম। আর সেজন্যই আমাকে মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তিনটি বছর অতিবাহিত হল দেখতে দেখতে। তারপর একদিন দেখা গেল সেই লোকটি এক জীর্ণ চিলেকোঠায় বসে কাদছে। সে তখন দুর্বল, কৃশ। বিবর্ণ আর ফ্যাকাশে তার দৃষ্টিÍছেড়া কম্বল জড়ানো গায়ে। সে তখন শক্ত শুকনো কী যেন একটা চিবুচ্ছিল আর অস্ফুট স্বরে কী যেন বলছিল:
পৃথিবীর সমস্ত উপহারকে অভিশাপ দাও। কারণ সবই বিদ্রুপ আর মিথ্যে ঔজ্জ্বল্যের আবরণে ঢাকা। কারণ, সবই মিথ্যে। সবকিছু। এগুলো উপহার নয়, এগুলো সব ঋণ। আনন্দ, প্রেম, খ্যাতি, ঐশ্বর্য—এগুলো ভবিষ্যতের চিরন্তন সত্যÍবেদনা, শোক, লজ্জা এবং দারিদ্র্যের ক্ষণিক ছদ্মবেশী রূপ মাত্র। পরী সত্যি বলেছিল, ওর সাজিতে একটি মাত্রই মূল্যবান উপহার ছিল। শুধুমাত্র একটিযার মূল্য কোনোদিন কমবে না। বাকি সবগুলো আজ আমার কাছে কেমন সস্তা, নিচু আর মূল্যহীন বলে মনে হচ্ছে সেই আকাক্ষিত একটির তুলনায়। সেই প্রিয়, সুন্দর, মধুর আর দয়াবান একটির তুলনায়। যা হৃদয়দহনকারী লজ্জা-অপমান-বেদনাকে এবং শরীরকে কুটি কুটি করে ছিড়ে ফেলে যে যন্ত্রণা, তাকে স্বপ্নহীন নীর নিদ্রার গভীরে ডুবিয়ে দেয়। আনো! আমার জন্যে তাকে নিয়ে এস। আমি সত্যি ক্লান্ত। আমি ডুবতে চাই, বিশ্রাম নিতে-চাই সেই অনন্ত স্বপ্নহীন নিঃসঙ্গ ঘুমের রাজ্যে।
আবার সেই পরী ফিরে এল। মাত্র চারটি উপহারকে ফিরিয়ে নিয়ে। কিন্তু মৃত্যু এখানে ছিল না। পরী বলল, আমি তা একটি ছোট্ট শিশুকে দিয়ে এসেছি। সে অবোধ শিশু। তাই বিশেস করে তার জন্য ভালো কিছু বেছে দিতে বলেছিল। কিন্তু তুমি তো কোনোদিন আমাকে তোমার জন্যে বেছে দিতে বলনি।
: আহ, কী হতভাগ্য আমি আমার জন্যে ওখানে আর কী রয়েছে?
: যা তুমি কোনোদিন আশা করনি। বৃদ্ধ বয়সের ঘৃণা আর নিরবচ্ছিন্ন অপমান। Íবিষন্ন কণ্ঠে বলল পরী। ( সূত্র: বাংলা ব্লগ)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com