ক্রিকেটার হবেন, এমন এক স্বপ্নপূরণেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ধীরলয়ে। কিন্তু কখনো কি ভেবেছিলেন এই স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে? কভুও কি জানতেন তার সম্মুখে অপেক্ষা করছে দূর্ভেদ্য এক পথ। মাত্র ২১ বছর বয়সে আক্রান্ত হলেন দুরারোগ্য ব্যাধি রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসে। মানব ইচ্ছের বলি হলো। ক্রিকেটার স্বপ্ন তো বহুদূর, ব্যাথার আধিক্যে আঙ্গুলগুলোও সোজা করে মেলতে পারতেন না। আরথাইটিসের তীব্র ব্যথায় দেহখানিও পুরোপুরি মেলে ধরতে ব্যর্থ হতে হতো কখনো কখনো। না হয় হয়তো আজ নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে তার নামটাও উচ্চারিত হতো গ্লেন টার্নার, স্টিভেন ফ্লেমিংদের সাথে। কিন্তু স্বপ্ন যার আকাশ সমান, তারে কোনো শক্তি পারে কি দমাতে কভুও? পারেনি তাকে দমাতে। ক্রিকেটার হয়তো হতে পারেননি কিন্তু ছিলেন বাইশ গজেই। এক দুটো নয়, তিন শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচে। দুই দলের একাদশ ছাড়াও বাইশগজে আরো যে দুজন থাকেন তাদের ভূমিকায়, অর্থাৎ আম্পায়ার রূপে। আম্পায়ারিং হলো পৃথিবীর কঠিনতম পেশার একটি। খুব বিরক্তিকর, একঘেয়ে আর ধৈর্যের পরীক্ষার চূরান্ত এক পেশা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়; আবার গ্রামের বউটার মতো সংসারের সব দায়-দায়িত্বও তারই কাঁধে।
ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন ছেড়ে নতুন এই পরিচয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে মাঠে ফেরেন তিনি। এক এক বল করে কখনো ৪০ ওভার, কখনো ১০০ কখনো বা ৪৫০ ওভার যা বলের হিসেবে ২ হাজার ৭০০ বল ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তীব্র মনযোগের সাথে। আর এই কঠিন কাজটিই বিধাতা তাকে দিয়ে করালেন দীর্ঘ ২২ বছর। মাঠে আম্পায়াররা সচারাচর থমথমে গোমড়ামুখো ও গাম্ভীর্যপূর্ণ হন। বিশেষ করে বিশ শতকের আগে এটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে আম্পায়ারিংয়ে নতুন এক মাত্রা নিয়ে এসেছিলেন আজকের এই লেখার ‘নায়ক’। প্রথাগত আম্পায়ারিংকে শিল্পের ছোঁয়া দিয়ে প্রাণ ফেরাতেই যেন তার উদয়ন। অদ্ভুত সব ভঙ্গিমায়, হেলে-দুলে-লাফিয়ে লাফিয়ে দর্শক মনে আনন্দ এনে দিতে তার তুলনা নেই।
ওহ, বলাই হয়নি সেই মানুষটার নাম। হ্যাঁ, তিনি বিলি বাউডেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা আম্পায়ারদের একজন। ১৯৯৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত ম্যাচ সংখ্যার দিক দিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩০৮ ম্যাচে ছিলেন খেলা পরিচালনার দায়িত্বে। ২২ বছরের দীর্ঘ এই ক্যারিয়েয়ারে ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপেও দায়িত্বরত ছিলেন বিলি ফ্রেজার বাউডেন।
হ্যাঁ, আমি সেই কিংবদন্তী আম্পায়ার বিলির কথাই বলছি, যাকে প্রতি ম্যাচের পূর্বে আঙ্গুল গরম পানিতে ভিজিয়ে শক্তিবর্ধন করতে হতো! যিনি কিনা আঙুল সোজা করে আউট চিহ্ন দেখাতে পারতেন নাহ, ফলে বিখ্যাত সেই ‘ক্রুকেড ফিঙ্গার’ আবিষ্কার করে নেন! তাছাড়া, দুই হাত নেড়ে বাউন্ডারি সংকেত বা এক পা তুলে কয়েক ধাপে দেখানো ছয়ের সংকেতও তাকে আলাদা করে পরিচিত করে। কখনো শারীরিক দুর্বলতা ঢাকতে আবার কখনো বা নিছকই মজার ছলে দর্শকদের আনন্দ দিতেই ভিন্ন ভিন্নভাবে সংকেত ব্যবহার করতেন। ক্রিকেটে লাল কার্ডের ইতিহাসও সৃষ্টি করেছিলেন বাউডেন ২০০৫ সালে। যদিও তা ছিল নিছকই মজার ছলে। অদম্য মনোবলে গড়া এই ভিন্নধর্মী যোদ্ধা নিজের সাথে লড়াইটা ১৯৯৫ সালে শুরু করলেও জীবনের লড়াই শুরু হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ৬০ বছর পূর্বে ১৯৬৩ সালের আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১১ এপ্রিল তারিখে। ‘শুভ জন্মদিন’ ক্রিকেটের ভিন্নধর্মী যোদ্ধা। ‘শুভ জন্মদিন’ বিলি ফ্রেজার বাউডেন।