শিশুর জন্মে শুভেচ্ছা কার্ড, কারো মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠাবে ইউনিয়ন পরিষদ। শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রমের কথা জানালেন শেরপুর সদরের ৪ নং গাজীরখামার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আওলাদুল ইসলাম। ১২ এপ্রিল বুধবার দুপুরে নিজ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কক্ষে অনুষ্ঠিত জন্মনিবন্ধন বিষয়ক এক সচেতনতামুলক সভায় তিনি এমন পরিকল্পনার কথা জানান। নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) ও ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তা এ সচেতনতামুলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহবায়ক শিক্ষাবিদ মো. আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ৪ নং গাজীর খামার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আওলাদুল ইসলাম আওলাদ। সাংবাদিক হাকিম বাবুল-এর সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান, সিপিবি শেরপুর সদর উপজেলা সভাপতি সোলায়মান আহমেদ প্রমুখ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে আজকাল অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায়ক্ষেত্রেই সঠিক এবং নির্ভুল জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের অভাবে সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রেও জন্মনিবন্ধন সনদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমুল পর্যায়ে নির্ভুল জন্মনিবন্ধন সচেতনতা বিষয়ে মতবিনিময় সভা করছে জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি। জন্মনিবন্ধনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, নির্ভুল জন্মনিবন্ধন প্রাপ্তিতে করণীয় সম্পর্কে সভায় বিস্তারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শিশুর জন্মের সময় বাবা-মাকে শুভেচ্ছা কার্ড এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারকে শোকবার্তা পাঠানোর ঘোষণা দেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওলাদুল ইসলাম আওলাদ। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, অনেকেই চাকুরী জন্য কিংবা অন্য কোন কারণে জন্মনিবন্ধনে শিশুর বয়স কম-বেশ করে থাকেন। এতে পরবর্তী জীবনে গিয়ে ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। আবার একই বাবার সন্তান হলেও সচেতন না হওয়ায় বিভিন্ন কাগজপত্রে বাবা-মার নামের বানান নানাভাবে লেখা থাকে। যাতে অনলাইনে কিংবা নানা কাজের ক্ষেত্রে তথ্য দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা পোহাতে হয়। এজন্য সঠিক ও নির্ভুল জন্মনিবন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি তার ইউনিয়নে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে অচিরেই একটি উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বলেন, আমরা শীঘ্রই শিশুর জন্মের সময় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারে একটি শুভেচ্ছা কার্ড এবং কেউ মারা গেলে পরিবারের নিকট একটি শোকবার্তা পাঠাবো। এতে জন্মনিবন্ধন বিষয়ে সচেতনতা যেমন বাড়বে তেমনি সঠিক জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা অনেকটা সহজ হবে। অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া বলেন, জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশু জন্মনিবন্ধন করতে হবে। তাছাড়া কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার মৃত্যুও নিবন্ধন করতে হবে। জন্ম এবং মৃত্যু নিবন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর পরই শতভাগ শিশুর জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা গেলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা অনেকটা সহজ হবে। তাছাড়া নির্ভুল এবং সঠিক জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা গেলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ধরনের জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের অনেকেরই জন্মতারিখ ২টা। একটা আসল, আরেকটা নকল। মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখার একটি জন্মতারিখ হলো আসল, আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর কিংবা অন্য কোনভাবে আমাদের আরেকটি জন্মতারিখ লেখা হয়েছে, যা নকল। কিন্তু জন্মনিবন্ধন শিশুর প্রথম অধিকার। জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে শিশুর জন্মের সঠিক তারিখ লিপিবদ্ধ হলে বাল্যবিয়ে দিতে বয়স চুরি করতে পরে।