ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০১৯-’২০ অর্থবছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য এ্যাসিসটিভ ডিভাইস বিতরণের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিললেও আজও কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়নি কোন ব্যবস্থা। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার মনোয়ার হোসেন রঞ্জু ও উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মেহেদী সোহরাব হোসাইন এর সহযোগিতায় ভুয়া রেজিস্টার বানিয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানু। ২৫ আগস্ট ২০২১ তারিখ সেলিনা আক্তার বানু স্বাক্ষরিত ওই রেজিস্টারে উপজেলার কোলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সজীব ও তানজিলা নামের দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হুইল চেয়ার, মহিষাহাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহবুবুর রহমান নামের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, কাকলাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রীতম মিত্র নামের একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, সিংদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবির হাসান নামের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র, বড় শিমলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলসী রানী ও শান্তা ইসলাম নামের দুই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শ্রবণযন্ত্র দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে রেজিস্টারে উল্লেখিত নাম ঠিকানার কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী কালিগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো হুইলচেয়ার কিংবা শ্রবণযন্ত্র পায়নি। রেজিস্টারের উল্লেখিত কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান, বড় শিমলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ডলি রানী সাহা , সিংদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম ও কাকলাশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো সরঞ্জামাদি পায় নি। এ ব্যাপারে রেজিস্টার এ উল্লেখিত প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সাবেক সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনোয়ার হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,সেলিনা আক্তার বানু স্যারের নির্দেশে এবং বড় বাবুর সহযোগিতায় আমি রেজিস্টারটি প্রস্তুত করেছি মাত্র। রেজিস্টারের উল্লেখিত সরঞ্জামাদি বিতরণ করতে আমি দেখিনি।এ ব্যাপারে অফিসের বড়বাবু এবং সেলিনা আক্তার বানু স্যারই ভালো বলতে পারবেন। কোলাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সে সময়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম ও সুরমানী বেগমের মেয়ে তানজিলা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা মনিরুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, আমার মেয়ে কখনো কোনদিনও সরকারিভাবে কোনো হুইলচেয়ার স্কুল থেকে পাইনি। একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সজীবও শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাজিব এর বাবা আফজাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ছেলেকে স্কুল থেকে কোন হুইলচেয়ার দেওয়া হয়নি। অভিযুক্ত সাবেক কালীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিনা আক্তার বানুর সাথে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ২০১৯-’২০ অর্থবছরের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকারিভাবে ৪৮ হাজার ৫ শত টাকা বরাদ্দ আসে। কিন্তু সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা আক্তার বানু উক্ত বরাদ্দের টাকা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ব্যয় না করে ভুয়া রেজিস্টার করে বিল ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রতিবন্ধীদের টাকা আত্মসাৎকারি সাবেক ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যাবস্থা।