বিরোধী ঐক্যের জন্য সচেষ্ট হয়েছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সামনে রেখে তিনি একের পর এক বিরোধী দলের নেতার সাথে কথা বলছেন। ইতোমধ্যে নিতিশ কুমার, তেজস্বী যাদব ও শরদ পাওয়ারের সাথে কথা হয়েছে। এই তিন নেতাই অবশ্য ইউপিএতে আছেন। জেডি ইউ, আরজেডি, এনসিপি হলো কংগ্রেসের জোটশরিক। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র বছরখানেক বাকি। আগে নিজের জোটের নেতাদের সাথে কথা বলে, তারপর জোটের বাইরে দিকে তাকাবার নীতি নিয়েছেন রাহুলরা। রাহুল গান্ধী জানান, ‘এটা হলো ২০২৪-এর নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। আমরা একটা ভিশন তৈরি করব।’
লোকসভা থেকে কিছু দিন আগেই বহিষ্কৃত হওয়া রাহুল বলেছেন, ‘এটা একটা প্রক্রিয়া। আমরা চাই আরো বেশি করে বিরোধী দল আমাদের সাথে যোগ দিক। আমরা একসাথে সকলে মিলে আগাব। আমরা একটা মতাদর্শগত লড়াই লড়ছি। আমাদের এক হয়ে লড়াই করতে হবে।’ খাড়গে, নিতিশ কুমার ও তেজস্বী একটা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে খাড়গে বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা এক হয়ে লড়াই করব। সব বিরোধী দলের ঐক্য চাইছি আমরা।’ নিতিশ কুমার বলেছেন, ‘আমরা সবাই আলোচনা করেছি। যত বেশি সম্ভব দলকে একজোট করার চেষ্টা করব। সবাই একসাথে মিলে চলব। যারা একসাথে আসতে রাজি হবেন, তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। অনেক দল একজোট হবে।’ বৃহস্পতিবার রাতে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সাথে কথা বলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। ওই বৈঠকও খাড়গের বাড়িতে হয়।
বৈঠকের পর শরদ পাওয়ার বলেন, ‘আমি চাই, সব বিরোধী নেতার সাথে কথা হোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ সব বিরোধী নেতার কাছে আমাদের যেতে হবে ও কথা বলতে হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসাথে আগব।’ খাড়গে জানিয়েছেন, ‘শরদ পাওয়ার মুম্বই থেকে দিল্লি এসেছেন এবং আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাঁচাতে গেলে ওই ঐক্য দরকার।’ রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘বিরোধী ঐক্যের সূচনা হয়েছে। সব দল ওই প্রক্রিয়ার প্রতি দায়বদ্ধ। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
শুধু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সাথেই নয়, নিতিশ কুমার এরপর সিপিএমের সিতারাম ইয়েচুরি ও সিপিআইয়ের ডি রাজার সাথে বিরোধী ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর সিতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘বিরোধী ঐক্যের বিষয়টি এখন গতি পেয়েছে। বিরোধী ঐক্য হবে। রাজ্যস্তরে আসন সমঝোতা হবে।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন, ‘ভারতে ভোটের পরে জোট গঠিত হয়। এনডিএ, ইউপিএ সবই এভাবেই তৈরি হয়েছিল।’ নিতিশ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাথেও দেখা করেন। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘২০২৪-এ প্রকৃত বিরোধী ঐক্য সম্ভব নয়।’
তার মতে, ‘বিরোধীদের মতাদর্শগতভাবে একজোট হতে হবে। তাদের নিজেদের শক্তি বুঝতে হবে। হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদ ও জনকল্যাণের বিষয়টি বুঝতে হবে। হিন্দুত্বের মতাদর্শের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে বিরোধী জোটের একটা মতাদর্শ থাকতে হবে।’ বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, ‘বিরোধী নেতারা সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে চান। নিতিশ কুমার তাই খাড়গে ও রাহুল গান্ধীকে খুশি করতে চাইছেন। নিতিশের এটা জানা নেই, ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি নেই।’ বিরোধীদের সামনে দুটি প্রশ্ন আছে, তারা জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, আর ভোটের সময় কে জোটকে নেতৃত্ব দেবেন? সূত্র জানাচ্ছে, রাহুলদের ফর্মুলা হলো, এ সব বিষয় নিয়ে এখন আলোচনাই করা হবে না। জিতলে ভোটের পর এই নিয়ে কথা হবে। আপাতত মোদিকে কিভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে, সেই বিষয়টাই ঠিক করা হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে