বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৪৬ অপরাহ্ন

ইসলাম ফোবিয়া

আফিফুর রহমান:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

‘ইসলাম ফোবিয়া’ বর্তমান বিশ্বের একটি আলোচিত শব্দ। ইসলাম ফোবিয়া দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত; ইসলাম ও ফোবিয়া। ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি, আনুগত্য। আর ফোবিয়া শব্দের অর্থ ভয়, আতঙ্ক, ঘৃণা ইত্যাদি। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞামতে, ‘ফোবিয়া বা অস্বাভাবিক ভীতিকে বর্ণনা করা হয় একটিভেট স্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী ভয় হিসেবে যা কোনো বস্তু অথবা স্থান হতে পারে; যার ফলে ভুক্তভোগী বহুক্ষণ ধরে বাস্তবে রূপ নেবে এমন ধারণা করে এর থেকে দূরে থাকে বা মানসিক চাপে থাকে এবং কোনো কোনো সময় তা মারাত্মকও হয়। ভয় মানুষের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে তখন একে ভীতিরোগ বা ফোবিয়া বলে। অনেক ধরনের ফোবিয়া আছে তন্মধ্যে ইসলামফোবিয়া অন্যতম, যা বিভিন্ন দেশে স্নায়ুব্যাধি আকার ধারণ করেছে।
ইসলামফোবিয়া হলো নিন্দার্থে বা ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত একটি রাজনৈতিক শব্দ যার অর্থ হলো ইসলামকে ভয় করা এবং মুসলমান ও ইসলামকে খারাপভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি খারাপ মনোভাব উল্লেখ করতে ইসলামবিরোধীরা এই শব্দের বহুল ব্যবহার করে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো- যে ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি সেই ইসলাম নিয়ে আতঙ্কের কারণ কী? উত্তর হলো- এর কারণ ইসলাম নিয়ে অমুসলিমদের বিশেষ করে পাশ্চাত্যবাদীদের অজ্ঞতা ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব।
পবিত্র কুরআন যে শান্তির বাণী ও ইসলাম যে শান্তির ধর্ম এই ম্যাসেজটি অমুসলিমদের কাছে ভালোভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ইসলামের নাম ভাঙিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে এবং এর ফলে ইসলামবিদ্বেষী কিছু গোষ্ঠী ইসলামকে বিশ্ববাসীর কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। অথচ এই ঘটনাগুলোর আড়ালে চরম ইসলামবিদ্বেষীরাই রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য মুসলমানদেরই সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। তবে রয়টার্সের এক প্রতিবেদন এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবার অবকাশ এনে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। আমেরিকার টেররিস্ট রিসার্চ সেন্টারের উদ্ধৃিত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বে যত সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটে তার ৯৪ শতাংশের সাথে জড়িত অমুসলিমরা।’ ওয়েবসাইটের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, আমেরিকায় সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্যে ৪২ শতাংশ লাতিন, ২৪ শতাংশ বামমনা চরমপন্থী, ৭ শতাংশ চরমপন্থী ইহুদি, ৬ শতাংশ মুসলিম, ৫ শতাংশ সমাজতন্ত্রী ও বাকি ১৬ শতাংশ অন্যান্য গ্রুপের লোকদের দ্বারা সংঘটিত হয়। তা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা বিশ্লেষণ করেও প্রায় একই রকম তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউরোপাল। ২০০৭ সাল থেকে পরবর্তী কয়েক বছরে ইউরোপের মাটিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার তদন্ত করে যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার মাত্র ০.৬ শতাংশ ঘটনার সাথে জড়িত মুসলিমরা। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সব সময় মুসলিমদের দিকেই সন্দেহের তীর ছোড়ে, যেকোনোভাবে মুসলিমদের ওপরই সন্ত্রাসী তকমা লাগানোর চেষ্টা করে।
অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের নাম দিয়ে লাখ লাখ নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক হত্যা করছে। যারাই তাদের ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে তাদেরই উল্টো জঙ্গিগোষ্ঠীর ট্যাগ লাগিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ অমুসলিমরা ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছে; আর এভাবেই ইসলামফোবিয়া তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
যখন কোনো অমুসলিম জাতিগোষ্ঠী নিজেদের ভূখ- রক্ষায়, নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই করে তখন তাদের স্বাধীনতাকামী, মুক্তিকামী, বীর যোদ্ধা হিসেবে মিডিয়ায় উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেটি কিছু দিন আগে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেই দেখেছি। কিন্তু ঠিক একই কাজ মুসলমানরা করলে তাদের উগ্রবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, দেশদ্রোহী, জঙ্গিগোষ্ঠী ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হচ্ছে। নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ারের হামলার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি সন্দেহের চোখে দেখা হয়, অথচ এরা তাদেরই সৃষ্টি। ১৯৪৬ সালের ২২ জুলাই জেরুসালেমে ‘কিং ডেভিড’ হোটেল উড়িয়ে দিয়েছিল ইরগুল জাই লিউমি নামে এক ইহুদি চরমপন্থী গ্রুপ। কিন্তু তখন তাদের জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বলা হয়নি আর তখন জায়োনিস্টফোবিয়াও বলতে শোনা যায়নি।
শান্তির দেশ বলা হয় যে নরওয়েকে সেখানে ব্রেইভিক নামের এক ইহুদি ৭৭ জন মানুষকে হত্যা করে, অথচ এই গণহত্যাকেও জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ বলা হয়নি। এভাবে অনেক উদাহরণই দেয়া যাবে। পরিতাপের বিষয় হলো এই, শুধু যে অমুসলিমরা ইসলামফোবিয়ার জীবাণুতে আক্রান্ত তা নয়; বরং মুসলিমরাও কমবেশি এ রোগে আক্রান্ত। ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমাদের দূর করতে হবে। অমুসলিমদের মধ্যে বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী পৌঁছাতে হবে। ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়াই হবে একবিংশ শতাব্দীর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com