শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

২৩ বছরেও সংস্কার হচ্ছে না সেতুটি

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের হারিয়াউন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ১টি সেতু দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মুখ থুবরে পরে আছে। এতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দু’টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫ গ্রামের মানুষ। শুকনো মৌসুমে এপথে সেতুর নীচ দিয়ে পার হওয়া গেলেও বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতকারীদের প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে চলাচল করতে হয়। এছাড়া ওই গ্রামের নারী-পুরুষ, রোগীসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, এ যেন দেখার কেউ নেই। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারং বার দাবী জানালেও সেতুটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের কোন ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। বিগত ২০০০ সালের বন্যার পানির শ্রোতে ওই এলাকার যাতায়াতের একমাত্র সেতুটি ধসে পড়ে। পরবর্তি বন্যায় সেতুর পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ার ফলে গ্রামীণ জনপদের লোকজন ভোগান্তিতে পড়ে যায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেতুটি বছরের পর বছর পার হলেও নির্মাণের এখনও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। এতে দক্ষিন জাগিরপাড়া, নাওদাড়া, জাঙ্গালিয়া কান্দা, ভাদুয়া, মুন্সিপাড়া, নন্দেরছটি, বন্ধউসান, গৌরাখালী, শাহাপুর, কৃষ্ণপুর, আটলা, নিশ্চিন্তপুর, বারইপাড়া, হারিয়াউন্দ সহ প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরম আকারে ধারণ করেছে। ১২ বছর ধরে এভাবে পড়ে থাকা সেতুটি কবে আলোর মুখ দেখবে এ আশায় পথ চেয়ে আছেন ওই এলাকার ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের ধসে পড়া সেতুটি সংস্কার বা পূণঃনিম্মান না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। দীর্ঘদিন ধরেই এভাবেই সেতুটি মুখ থুবরে পরে থাকায় গাঁওকান্দিয়া ও বিরিশিরি এই দুই ইউনিয়নের লোকজনের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে ধসে পড়া সেতু ও রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খারাপ থাকার কারণে ওই এলাকায় কোন যানবাহন মালামাল নিয়ে যেতে না পারায় এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। জাগিরপাড়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী বেপারি বলেন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একটা অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসার জন্য শহরে নেওয়া খুবই কষ্টকর। তাই দ্রুত সেতু নির্মাণ না করা হলে আমাদের ভোগান্তি দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। ইউপি সদস্য রহিত মিয়া বলেন, এখানে সেতু না থাকায় উৎপাদিত কৃষিপন্য বিক্রি করতে তাঁদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ভালো ফলন হলেও কৃষিপণ্য গুলো গ্রাম থেকে শহরে সহজে নিয়ে যেতে পারছি না। অনেক কৃষিপণ্য গ্রামেই কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুটি নির্মানের অনুরোধ জানাই শিক্ষার্থী আমেনা খাতুন বলেন, এ সড়কে প্রতিদিন কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। শুষ্ক মৌসুমে বেশি অসুবিধা না হলেও বর্ষা মৌসমে এদিক দিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে যেতে পারি না। অন্য সড়ক অনেকটা রাস্তা ঘুরে যেতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। সঠিক সময়ে কলেজে যেতে হলে সময়ের অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়’। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রুহু বলেন, ওই সেতুর ওপর দিয়ে শহরে যেতে প্রায় ২৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করত। সেতু ভাঙা থাকার কারণে এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে। আমি অনেকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে জানিয়েছি, ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন ব্রীজ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্ত আদৌ সত্যি কি না তা জানি না। উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ খোয়াজুর রহমান বলেন, এই সেতুটি আমাদের কোড নাম্বারের আওয়াতাভুক্ত না। ওই এলাকার সড়কটিই এলজিইডি’র আইডিভুক্ত না তাহলে ওখানে সেতু নির্মাণ বা সংস্কার করা সম্ভব না। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সড়কটিকে আইডি ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ এলে ওই ব্রীজটির জায়গায় একটি তিন ব্যাল্ড কালবার্ট তৈরি হবে বলে জানান তিনি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ওই জায়গাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। ওখানে ৬০ ফুট দৈর্ঘের একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওইখান দিয়ে বন্যায় প্রবল ¯্রােত হওয়ার কারণে এ রকম ব্রীজ টেকসই হবে না। তাই ওখান দিয়ে গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই সেতুটি পড়ে রয়েছে। ওই এলাকায় গিয়ে ব্রীজটি আমি দেখেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি গার্ডার ব্রীজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে অতি দ্রুত ব্রীজ নির্মানের ব্যবস্থা নেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com