তিন সামাজিক চুক্তি আধুনিক ইউরোপ গঠনে বুনিয়াদি ভূমিকা রেখেছে। ব্রিটিশ দার্শনিক টমাস হবস, জন লক ও ফরাসি দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশোর বিখ্যাত সামাজিক চুক্তিতত্ত্ব গুলো পশ্চিমা জীবনচিন্তার মর্মমূলে কাজ করছে। তিনজনই একমত ছিলেন যে, প্রকৃতিরাজ্যের পরিস্থিতির কবল থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষা থেকে নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মানুষ রাষ্ট্র গঠন করেছে। তিন দার্শনিকের সামাজিক চুক্তিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিসের ওপর? তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত প্রকৃতি এবং তার পরিবর্তনীয় মূলভাবের বৈচিত্র্যের ওপর। এ বৈচিত্র্যের উদাহরণ হতে পারে প্রাক-আধুনিকতা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণ। এই তিন সামাজিক চুক্তির গোড়ায় আর যেসব উপাদান রয়েছে, তার মধ্যে আছে ভয়, উদ্বেগ, বিপদ ও অজানা আশঙ্কা পরিহার করার জন্য ব্যক্তির সহজাত আচরণের অলঙ্ঘনীয় বাধ্যবাধকতার মতো বিষয়। জ্ঞানতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক ফাটলের ধারাবাহিকতায় রেনেসাঁযুগে ইউরোপীয় জীবনে ঐতিহ্যগত ক্ষেত্রগুলোর ওপর চার্চ এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব খর্ব হয়েছিল। তারপর জ্ঞানতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিভক্তি-ফাটল আরো গভীর হয়েছে। এর ফলে একদিকে চার্চের ‘ঐশী জ্ঞানতত্ত্ব’ আধ্যাত্মিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অন্য দিকে শিক্ষার রাজনীতি ও বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে এবং রাষ্ট্রকে পরানো হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ। এরই মধ্য দিয়ে আধুনিকতা পাদপ্রদীপের সামনে হাজির হয়। অচিরেই সে বিস্তৃত আগ্রহ এবং মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। আসমানি খোদা ত্যাগ করে মানবিকতাকে কেন্দ্র করে নতুন মূল্যবোধ ও আলোকায়নের সূচনা করে। সপ্তদশ শতকে ফরাসি দার্শনিক ডেকার্তের হাত ধরে নতুন করে বস্তুবাদী দর্শনের পথচলা শুরু হয়। মধ্যযুগে ইউরোপীয় দর্শনের মূলে ছিল বিশ্বাস। ডেকার্তে সবলে ঘোষণা করলেন, বিশ্বাস নয়, যুক্তি। যা কিছু যুক্তিগ্রাহ্য তাকেই স্বীকার করতে হবে। প্রভাবশালী দার্শনিক ছিলেন তিনি। তবে তিনিও সুসঙ্গত কোনো বস্তুবাদী দর্শন তুলে ধরতে পারেননি। তবে পরবর্তীদের জন্য তিনি খুলে দেন সদর দরজা। তার পরবর্তী দার্শনিকরা একটি প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করেন। এদের নেতৃত্বে বিজ্ঞানের রথ এগিয়ে চলে।
সামাজিক চুক্তিবিষয়ক হবস, লক ও রুশোর তিন মতবাদ মূলত দার্শনিক বাস্তবতার ফসল। একটি ছদ্ম-জ্ঞানতাত্ত্বিক ছাচ থেকে স্বজ্ঞাকে মুখ্য মনে করা এবং কর্ম-কর্তব্যবাদী বাস্তবতা এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতার প্রস্থানবিন্দু মূলত তিনটি কল্পিত দৃশ্যকল্পে আত্মপ্রকাশ করল। প্রথম দৃশ্যকল্পে দেখা যায় হবসের তত্ত্ব , যেখানে রয়েছে ভয়াবহ প্রকৃতিরাজ্যকে এড়িয়ে যাওয়া। হবসের প্রকৃতিরাজ্যে মানুষের অবস্থা ছিল ভয়াবহ খারাপ। সারাক্ষণ থাকত দ্বনদ্ব আর রক্তারক্তি। সেখানে চারদিকে অন্ধকার, সব কিছু কদর্য। মানুষ স্বার্থপর, আত্মতার গোলাম, ঝগড়ালিপ্ত, সবল দুর্বলকে খেয়ে ফেলে, সবাই সবাইকে অবিশ্বাস করে, কোথাও নিয়ম নেই, নেই কোনো শাসক। মানুষ এ অবস্থা থেকে বাঁচতে চাইল। নিজেদের মধ্যে চুক্তি করল। শাসক বানাল আর জন্ম নিলো রাষ্ট্র।
দ্বিতীয় দৃশ্যকল্পে দেখা যায় রুশোর তত্ত্ব । যেখানে দেখা যায় প্রাকৃতিক রাষ্ট্রের সীমিত স্বাধীনতা ও একটি জোড়াতালি দেয়া সমাজের নিপীড়নের তাপে কার্যত অকেজো হয়ে পড়া হবসের প্রকৃতি-রাজ্যের প্রতি পুরোদস্তুর চ্যালেঞ্জ। রুশোর প্রকৃতিরাজ্য সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ছিল। মানুষ ছিল সরল-সহজ, সুখদ। পরস্পরে ছিল সহানুভূতি। তাদের আচরণ ছিল উত্তম। কোথাও হিংসা ছিল না, হিংস্রতা ছিল না। প্রতিশোধের বিষ বা ক্রোধের আগুন ছিল না। প্রকৃতির সেই রাজ্য ছিল আদর্শ, সুখময়। রুশোর কাছে এ ছিল জগতের জান্নাত। কিন্তু জান্নাতের সুখ শেষ করে দিলো জান্নাতের অধিবাসীরাই। মাছের পালের মতো তাদের বাচ্চা-কাচ্চা বাড়তে থাকল। প্রয়োজন বাড়ল। ফলে সম্পত্তির ধারণায় দেখা দিলো টানাটানি, বিশৃঙ্খলা। এর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মানুষ নিজেদের মধ্যে চুক্তি করল। যার যার ক্ষমতাকে তারা অর্পণ করল সমাজের সাধারণ ইচ্ছার কাছে। এই সাধারণ ইচ্ছা গঠন করল রাষ্ট্র। তৃতীয় দৃশ্যকল্পে দেখা যায় জন লকের তত্ত্ব। তার প্রকৃতিরাজ্যে আছে সরলতার অপার সম্ভাবনাময় আইন কিন্তু সেখানে আছে বিদ্রোহও; নাগরিকদের চুক্তিগত অধিকার সংরক্ষণে ব্যর্থতার শর্তে বিদ্রোহ। তার প্রকৃতিরাজ্যেও ছিল সাম্য, স্বাধীনতা, শান্তি। মানুষ ছিল সুখে। কিন্তু বিদ্যমান ছিল কিছু সমস্যা। এসব সমস্যা দূর করার জন্যই স্বেচ্ছায় ও সর্বসম্মতিতে মানুষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তারা চুক্তি করে অবাধ ও ক্ষতিকর স্বাধীনতা ছাড়া সব ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য। কিন্তু তাদের স্বাধীনতা হরণ করার ঘটনাও ঘটে। সে জন্য শাস্তির প্রয়োজন। তবে প্রত্যেকেই অন্যকে শাস্তি দেয়ার অধিকার চর্চা করলে যেহেতু সমস্যা, তাই শাস্তি প্রয়োগের অধিকার তারা অন্যের কাছে তুলে দেয়। বানায় কর্তৃপক্ষ, নেতৃত্ব। গঠন করে রাষ্ট্র। এই যে সামাজিক পরিবর্তন, সঙ্কট উত্তরণ ও নিজেদের কল্যাণকে বেছে নেয়ার ও উদযাপন করার তত্ত্ব, এখানে ঈশ্বর নেই। মানুষই সমস্যায় পড়েছে, মানুষই নিজেকে উদ্ধার করছে। কারো পথনির্দেশ লাগছে না, আসলে এর দরকার নেই বলেই তো লাগছে না! অতএব ইউরোপীয় বুদ্ধিবৃত্তি ঈশ্বরভিত্তিক দুনিয়াদৃষ্টি থেকে গণভিত্তিক দুনিয়াদৃষ্টির উপর আশ্বস্ত হলো। মানুষ ও সম্মিলিত মানুষই সঙ্কটের সমাধান। জীবনের প্রগতি ও কল্যাণের নির্মাতা।
এলেন ফ্রেডরিখ নিটশে। তিনি দেখাতে চাইলেন প্রকৃতি ও প্রাণিজগতে টিকে থাকার বিরতিহীন লড়াই। এ লড়াই থেকে জন্ম নেয় প্রতিপত্তির নেশা। ফলে কেউ শোষক হবে, স্বৈরাচারী হবে, এটি স্বাভাবিক। যেমন স্বাভাবিক কারো শোষিত হওয়া বা দাস হওয়া। টিকে থাকার লড়াইয়ে আপনি যখন হেরে গেলেন, দাসত্ব আপনার অবধারিত। এই সংগ্রামে ধর্মবিশ্বাসের কী কাজ? নিটশের কাছে ধর্মবিশ্বাস মস্ত এক মিথ্যা। তবে সমাজের স্বাভাবিক কর্মপরিক্রমায় তার কিছু উপকারও রয়েছে। ধর্মকে বাদ দিতে হলে নির্দেশনা, আশাবাদ, নিশ্চয়তা, নৈতিকতা, সান্ত¡না ও আধ্যাত্মিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তার জন্য অন্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ধর্মের খালি জায়গা পূরণ করতে পারে সংস্কৃতি। দর্শন, শিল্পকলা, সঙ্গীত ও সাহিত্য দিয়ে কাজটি চলতে পারে। ধর্মগ্রন্থের জায়গা দখল করবে সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য। কিন্তু নিটশে কি জানতেন না, ধর্মবিশ্বাসের জায়গায় যখন আধুনিক দর্শনজাত বিশ্বাস প্রতিস্থাপিত হয় এবং ধর্মাচারের জায়গা যখন দখল করে আধুনিক সংস্কৃতি, তখন আধুনিকতাও হয়ে উঠে এক ধর্ম? ধর্ম থেকে পলায়ন করতে গিয়ে তিনি অন্য ধর্মের খাঁচায়ই তো ঢুকলেন। এই ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাস ও প্রবণতা একই।
এই যে বাঙালি বুদ্ধিজীবী মোতাহার হোসেন চৌধুরী লিখেছেন, ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার আর কালচার শিক্ষিত মার্জিত লোকের ধর্ম। কালচার মানে উন্নততর জীবন সম্বন্ধে চেতনা-সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্বন্ধে অবহিত। সাধারণ লোকেরা ধর্মের মারফতেই তা পেয়ে থাকে…, নিটশে সেই কথাটিই বলেছিলেন শতাব্দীপূর্বে। বাঙালি বুদ্ধিজীবী পুরনো সেই পুনরোক্তিকে নতুনের আনন্দে উচ্চারণ করলেন। তাকে দশকের পর দশক আউড়ানো হচ্ছে সত্য বিশ্বাসে, আধুনিকতা ভিন্ন অর্থে ধর্মের রূপ না নিলে এমন হতো? তিনি কালচারকে দিয়েছেন খোদার জায়গা। এ বিশ্বাস তার ধর্মবিশ্বাসের মতোই। যার সাথে যুক্ত আছে যুক্তির নামে এক সেট স্টেরিওটাইপ! কালচার আধুনিকতাবাদের খোদা হতে চেয়েছে ধর্মের খোদাকে হত্যার ঘোষণা দিয়ে। নিটশে উন্মাদ বৃদ্ধের জবানিতে ঘোষণা করেন খোদা মরে গেছে, সে মৃত। এই ঘোষণা অভূতপূর্ব, যা ভূমিধসের মতো অবিশ্বাস্য সমস্যা তৈরি করে। খোদা তো স্বয়ম্ভূ। তিনি প্রাণ সঞ্চার করেন। তার নির্দেশে ও বচনে জগত সৃষ্টি হয়েছে। অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আমাদের বিরাজমানতা তারই অনুদান। জন্ম ও মৃত্যু তারই সৃষ্টি। তার সৃষ্টি তাকে করতলগত করতে পারে না। জন্ম পারে না তাকে জন্ম দিতে। মৃত্যু পারে না তাকে মেরে ফেলতে। তা হলে যিনি খোদা, তিনি আবার মরতে পারেন কিভাবে? যিনি মরে যান, তিনি খোদা হতে পারেন না। নিটশে এমন কোনো মরণশীল খোদার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন যে খোদা হঠাৎ করে ঊনবিংশ শতকে মারা গেছেন। কারণ নিটশে নিজেরে অভিহিত করেছেন একজন প্রবৃত্তিগত বা স্বভাবজাত নাস্তিক হিসেবে। নিটশে মূলত খোদার মৃত্যুর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তার নাস্তিকতাকে উদযাপন করতে চেয়েছেন এবং খ্রিষ্টধর্মের কল্পিত পরিণতির কথা রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন। তার এ মতামত আধুনিক মন ও দৃষ্টির খুব নিকটাত্মীয় ছিল। যার কাছে খোদা কখনোই ছিল না। কিংবা আগে ছিল, এখন মরে গেছে। অথবা খোদা থাকলে আছে, না থাকলে নেই! তার কাছে আধুনিকতাবাদ হলো অতিপ্রাকৃত খোদা ও পরকাল বিশ্বাসের একটি উপাদেয় বিকল্প। আধুনিকতা এভাবেই নতুন ধর্ম, নতুন বিশ্বাস ও নতুন খোদা হয়ে হাজির হলো। তার উদ্ভবে অবসিত হলো প্রাচীন যুগ। তার চরিত্রে ছিল ঐতিহ্যের বিরোধিতা। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী জ্যঁ বদ্রিয়াঁ (১৯২৯-২০০৭) ঠিকই ধরেছেন, আধুনিকতার খাসলত হলো যা কিছু ঐতিহ্য ও প্রাচীন সংস্কৃতি, তার সাথে দুশমনি করা। মডার্ন কথাটি বর্তমানকে প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে এর ব্যবহার ঘটেছিল বর্তমানকে ব্যক্ত করার জন্যই। পরে তা যুগের এমন সচেতনতাকে ব্যক্ত করতে থাকে, যা পুরনো থেকে নতুনে বিবর্তনের ফসল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়। পুরাতনকে এবং মানব- ঐতিহ্যকে বাদ দেয়ার ফলাফল কি ইতিবাচক হয়েছে? মোটেও তা হয়নি; বরং এর ফলে ব্যক্তি ও বস্তুচিন্তা মানুষের চালক হয়েছে, মুনাফালোভ মানবমনের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে, ভোগলিপ্সা আপন হাতে তুলে নিয়েছে জীবনের লাগাম। কিন্তু এ ব্যাপারগুলো ঘটেছে মানবতাবাদ, ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে। মানুষ যা হারিয়েছে, তা হলো সত্যবোধ, সত্যলগ্নতা। হারিয়েছে প্রশান্তি ও নির্ভরতা। হারিয়েছে আত্মজয় ও আধ্যাত্মিকতা। সব কিছু সে জয় করতে চেয়েছে শুধু নিজেকে ছাড়া। যখনই নিজেকে জয় করতে চেয়েছে, তখনই নিজেকে নিজে খুঁজে পায়নি কোথাও। কারণ সে ঠিকানাহীন চোরাবালিতে হারিয়ে গিয়েছিল। মানবীয় পবিত্রতার বোধকে সে চিনতে পারেনি। সে একে কামনা করতেও ভুলে যায়। সে চলেছে বিপরীত পথে। যার ফলে সামাজিক ধ্বংসের ইতিকথা হয়ে উঠেছে তার পথের পৃষ্ঠাসমূহ। নিজের ভেতরে সে নিজেকে ধ্বংস করেছে প্রতিনিয়ত। ফলে বাইরের ধ্বংসকর্মও ছিল তার নিয়তির অংশ। সে হিউম্যানিটির কথা বলেছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তার হাতে হিউম্যানিটি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের শিকার। পয়লা ও দুসরা মাগরেবি মহাযুদ্ধ সেই বিনাশের পয়লা ও শেষ স্মারক নয়, কারণ আরো আগে আধুনিকতার রফতানিকারী পশ্চিমারা ঔপনিবেশিক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুনিয়াজুড়ে। যা মানুষের জন্য বিপদ হিসেবে দুই মহাযুদ্ধের চেয়ে ছোট ছিল না। পয়লা মহাযুদ্ধ (২৮ জুন, ১৯১৪-১১ নভেম্বর ১৯১৮) কমপক্ষে ৯০ লাখ সৈন্য ও ৫০ লাখ সাধারণ মানুষের মৃত্যু এবং তিন কোটি মানুষের আহত, পঙ্গু ও জখমি হওয়ার মধ্য দিয়ে থামলেও তার গর্ভে নিহিত ছিল দুসরা মহাযুদ্ধের বারুদ। ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া এ যুদ্ধ ইউরোপে ১৯৪৫ সালে শেষ হয় বটে; কিন্তু এশিয়ায় পরবর্তী সংঘর্ষগুলোকে হিসাবে ধরলে এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৩৯ সালে। ৩০টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশ নেয় এ যুদ্ধে। কেবল ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে মারা যায় আট কোটি মানুষ। এ দুই মহাযুদ্ধ ছাড়াও ঘটিয়েছে মানবসংহারি বহু যুদ্ধ। কোনো মহান কল্যাণকে আমন্ত্রণ করা এবং কোনো শান্তিকে নিশ্চিত করার কাজ করেনি যুদ্ধগুলো। এগুলো মূলত শুরু হয়েছিল জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা, পররাজ্য ও পরস্বত্বগ্রাস ও নিকৃষ্ট বর্ণবাদ থেকে। আধুনিকতার শক্তি অনুসন্ধান করেছে শিল্প ও পুঁজিবাদে। কিন্তু অবাধ পুঁজিবাদই তাকে শেষ অবধি পতনের প্রান্তে টেনে নিচ্ছে। পুঁজিবাদ তার শক্তি এবং পুঁজিবাদ তার দুর্বলতা। এই শক্তি প্রান্তিক, কিন্তু এই দুর্বলতা সর্বগ্রাসী। আধুনিক বিজ্ঞানের বিপুল ও বহুব্যাপ্ত মদদ, জ্ঞান ও উদ্ভাবনের গ্রহ অতিক্রমী জোয়ার, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিপ্লবও আধুনিক সভ্যতার গভীর এবং অমোচনীয় ক্ষতস্থানগুলোকে ঢাকতে পারছে না। লেখক : কবি, গবেষক,৭১.ধষযধভরল@মসধরষ.পড়স