ভারতের কর্নাটক রাজ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী এবং রাজ্যে মুসলিমদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের আহ্বানকারী শিক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিসি নগেশ নির্বাচনে হেরে গেছেন। তিপতুর আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি হেরেছেন বলে মাকতুব মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এবারের কর্নাটক রাজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বিজেপি। ২২৪ আসনের কর্নাটকে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩৬ আসন, তাদের জোটসঙ্গী পেয়েছে একটি। অন্য দিকে বিজেপি নেমে গেছে ৬৫ আসনে। কুমারস্বামীর জেডিএস পেয়েছে ১৯টি আসন। কংগ্রেস একাই পেয়েছে ৪২.৯ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছে ৩৬ শতাংশ। জেডিএস পেয়েছে ১৩.২৯ শতাংশ। পরিচ্ছন্ন সংখ্যাগরিষ্ঠতাই শুধু নয়, ৬০ শতাংশের বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় আসছে কংগ্রেস। অথচ কর্নাটক দখলে রাখতে চেষ্টার কসুর করেনি ক্ষমতাসীন বিজেপি। অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের মতোই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। কিন্তু মোদির ফুলে ঢেকে থাকা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার থেকে ডেলিভারি বয়ের স্কুটারে চেপে রাহুল গান্ধীর যাত্রাতেই এবার অনেক বেশি আস্থা রাখলেন কর্নাটকের মানুষ। জানা গেছে, হিন্দুত্ববাদী দলটির যে কয়েকজন সিনিয়র নেতা নির্বাচনে হেরে গেছেন তাদের মধ্য নগেশও রয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী নগেশ ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে একই আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন।
কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে জয় পেলেন ৯ মুসলিম প্রার্থী: কর্নাটকের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। সারা রাজ্য থেকে এবার ৯ জন মুসলিম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গুলবর্গা উত্তরের প্রার্থী কানিজ ফাতিমা। এছাড়াও জয়ী হয়েছেন রামানাগার থেকে ইকবাল হুসেন, বিদার থেকে রাহিম খান, শিবাজি নগর থেকে রিজওয়ান আরশাদ, নরসিমরাজা থেকে তানভির সাইত, বেলগাঁও উত্তর থেকে আসিফ সাইত। ইউটি খাদির জয়ী হয়েছেন ম্যাঙ্গালুরু থেকে। শান্তিনগর থেকে এন এ হারিস। কামরাজ পেট থেকে জামির আহমদ খান।
জামির আহমেদ তিন বারের এমএলএ। এবার বিজেপি তাকে হারাবার জন্য জবরদস্ত প্রার্থী ভাস্কর রাওকে নামিয়েছিলেন। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়ী হলেন বি জেড জামির আহমেদ। ব্যাঙ্গালুরুর কামরাজপেট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জামির আহমেদ হারিয়ে দিলেন বিজেপি ও জেডিএস উভয় হেভিওয়েট প্রার্থীকে। জেডিএস প্রার্থী সি গোব্যিরাজের থেকে ৫৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন জামির আহমেদ। শুধু কামরাজপেট নয়, অধিকাংশ আসনে কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ের ব্যবধান ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলে কিছুই দেখা গেল না কর্নাটকে। ক্ষুব্ধ মানুষ বয়কট করেছে শাসকদলকে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরেই।
উল্লেখ্য, জামির আহমেদের এক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ভোটের আগেই। তিনি বলেছিলেন, কর্নাটকে মুসলিমরাও অন্যান্য গোষ্ঠীর থেকে সংখ্যায় কম নয়। এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে গেরুয়া শিবির। ২০১৮ বিধানসভায় ছিলেন ৭ জন মুসলিম বিধায়ক। সকলেই কংগ্রেস থেকে। তাদের মধ্যে থেকে পুনর্বার জয়ী হলেন কানিজ ফাতিমা, তানভির সাইত, আবদুল খাদির, রাহিম খান ও এন এ হারিস। উল্লেখ্য, কর্নাটক বিধানসভায় ১৯৭৮ সালে ছিলেন ১৬ জন মুসলিম বিধায়ক। সূত্র : পুবের কলম