‘কায় জানে এমন ঝড় হইবে। সারাদিন ওইদোতে (রোদে) অবস্থা কাহিল। আর আইত (রাত) হইতে হঠাৎ করি ঝড়-বৃষ্টি শুরু হোইল। বাতাসোতে ঘরের টিনের চাল উড়ি গেইছে। গাছপালা ভাঙ্গা পড়ছে, ধানের ক্ষতি হইছে। আগের দিন হঠাৎ একটা গরু মরছে। এত ক্ষয়ক্ষতি সামলামো কেমন করি? ঝড়োতে হামার সোগ (সবকিছু) শ্যাষ। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মাসুদ মিয়া। তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার মতো ওই গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত সোমবার (১৫ মে) রাত সোয়া দশটার পর হঠাৎ ঘন কালো মেঘে ভর করে হানা দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। রংপুর মহানগরসহ আশপাশের উপজেলাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। এতে পীরগাছার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়াসহ ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি। আচমকা ঝড়ের তীব্র গতিবেগে বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তার। মঙ্গলবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পীরগাছা ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝড়ে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। রাত থেকেই অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে আছেন। তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া গ্রামের শাকিব খান শুভ জানান, ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট ছিল। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ের বেগে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্নদানগর ইউনিয়নের সাতদরগা এলাকার ব্যবসায়ী নূর হোসেন জানান, রাতে হঠাৎ ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। এরপর শুরু হয় তীব্রগতির বাতাস; সাথে বৃষ্টি। ঝড়ে বিভিন্ন কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসহ গাছপালা ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে উঠতি ফসলের ক্ষেতও। জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়ন, ছাওলা ইউনিয়ন, অন্নদানগর ইউনিয়ন ও পারুল ইউনিয়ন, কাউনিয়া সদর উপজেলাসহ রংপুর মহানগরের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড়ের আচমকা তা-বে কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি ঝড়ে আম ও লিচু চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। তাম্বুলপুরের বগুড়াপাড়া গ্রামের লাইলি বেগম জানান, তার একটাই মাত্র ছোট থাকার ঘর। সেই ঘরটির উপরে ঝড়ের সময় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন। কিন্তু ঝড়ে তার ছোট দোকানটি উড়ে গেছে।? এতে তার লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় কাঁচা ঘরবাড়ি ঝড়ে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। বিদ্যুৎতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে সংযোগ। কিছু কিছু জায়গাতে উপরে পড়েছে গাছপালা, বাতাসে উড়ে গেছে ঘরের টিন। এই ঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেননি তারা। তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, ঝড় থেমে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখছি। প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। পীরগাছা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন জানান, স্বল্প সময়ের শক্তিশালী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, টিনের চাল উড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। তবে কোথাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, সোমবার রাতে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল। তবে কালবৈশাখী ঝড়টির স্থায়ীত্ব খুব কম হয়। তিনি আরো জানান, আগামী ৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। রংপুর বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।