ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালকের দাবি ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে
হার্টের রিং ও প্রেসমেকারসহ জীবন রক্ষাকারী সব মেডিকেল ডিভাইসের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোয় গত মার্চ থেকে সংশ্লিষ্টমহলে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগসহ মিশ্রপ্রতিক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও করণীয় নিয়ে তারা বৈঠক করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। সূত্রে প্রকাশ, মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির ১৭ জন সদস্যের মধ্যে বাকিদের পাশকাটিয়ে তিনজন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্যরা হলেন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক,জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতাল ঢাকার বিভাগীয় প্রধান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ ঢাকার কার্ডিওলজি সার্জারী বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল্লাহ ওয়াদুদ চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা : মো: আফজালুর রহমান প্রাক্তন পরিচালক, এনআইসিডিডি, সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, বাংলাদেশ স্পেশালিষ্ট হাসপাতাল ঢাকা, অধ্যাপক ডা ফারুক আহমেদ কার্ডিয়াক সার্জেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুর ঢাকা,অধ্যাপক ডা: ফজিলাতুন্নেছা চীফ কনসালটেন্ট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুর ঢাকা, অধ্যাপক ডা: মনিরুজ্জামান চীফ কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ ইউনাইটেড হাসপাতাল লি: ঢাকা, অধ্যাপক ডা আব্দুল আল সাকি মজুমদার, সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি, চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার শাহবাগ ঢাকা,মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ মহাপরিচালক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মো: সালাউদ্দিন (পরিচালক চলতি) ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মো: আব্দুল মালেক উপ-পরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ঢাকা। এই সদস্যের সম্মিলিত মতামতের উপর নির্ভর করবে মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ।
কিন্তু মূল্য নির্ধারণ কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করেছেন,তাদের পাশ কাটিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,পরিচালক মো: সালাউদ্দিন এবং উপ-পরিচালক মো: আব্দুল মালেক এই তিনজন সদস্য-ই মেডিকেল ডিভাইস এর মূল্য বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছেন।এত কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একাধিক সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ বা মূল্য বৃদ্ধির অনুমোদনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
অবশ্য অভিযোগের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, তথ্যের ঘাটতির কারণে মানুষকে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, ওষুধসহ বিভিন্ন চিকিৎসার উপকরণের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে দুর্ভোগ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও করণীয় নিয়ে তারা বৈঠক করেছেন। মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বৈঠকে থাকা সবাই স্বীকার করেছে এমনকি কনজুমারস এসোসিশন অব বাংলাদেশও (ক্যাব) স্বীকার করেছে অযৌক্তিকভাবে কোনো ওষুধের দাম বা চিকিৎসা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি। আমাদের যেভাবে বাড়ানোর উচিত সেভাবে বাড়াচ্ছি না। তবে কিছু বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।
অধিদফতরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে সেটি কমিটির মাধ্যমে দেওয়া হয়। কারও একক সিদ্ধান্তে হয় না। কমিটি যেটা প্রস্তাব করে অনেক সময় সেখান থেকেও কমিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং অধিক মূল্য নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ডলারের মূল্য, কাঁচামালের মূল্য এবং ইউটিলিটি, উৎপানাদ খরচসহ সবকিছু মিলিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রস্তাব করে। আমারা যাচাই-বাচাই শেষে কমিয়ে একটা মূল্য নির্ধারণ করে দেই।
অভিযোগে পাওয়া গেছে,সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা উপকরণ। দেশের হৃদরোগীদের জীবনরক্ষাকারী পেসমেকার ও রিংসহ হৃদরোগের সব ধরনের ডিভাইসের (চিকিৎসা সরঞ্জামাদি) দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ মার্চ থেকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসব ডিভাইসের দাম সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হলেও বাজারে এসব ডিভাইসের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষ করে জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেনেটর, পেসমেকার, রিং ও ভালভের দাম যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১২৭ শতাংশ, ৯২ শতাংশ, ৩৮ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বেলুন সর্বনি¤œ ১৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ এবং বিভিন্ন ধরনের বোতাম সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে।