ডলার-সংকটের মধ্যে গত মে মাসে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় কম এসেছে। গত মে মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এর আগে গত এপ্রিলেও আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ আয় কম এসেছিল। প্রবাসী আয়সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য মিলেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত ঈদের আগে ভালো পরিমাণে প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসে। এ সময় প্রবাসীরা পরিবারের সদস্যদের ঈদের বাড়তি খরচ জোগাতে বেশি পরিমাণ আয় দেশে পাঠিয়ে থাকেন। তবে ঈদের মাস এপ্রিলেও ভালো আয় আসেনি। মে মাসেও একই ধারা অব্যাহত আছে।
ব্যাংকগুলো এখন ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী আয় কিনতে পারছে, যা কার্যকর হয়েছে ১ জুন থেকে। প্রবাসী আয় কম আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়িয়েছে। এর আগে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ছিল ১০৮ টাকা।
জানা গেছে, হুন্ডিতে ডলারের দাম পাওয়া যায় প্রায় ১১০ টাকা। বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি ডলারে ব্যাংকগুলো বেশি টাকা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে আয় আনতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুরো মে মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার, এপ্রিলে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এপ্রিলে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ২৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার, এপ্রিলে ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছিল ৪ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে মে মাসে আসে ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এপ্রিলে মাসে এসেছিল ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে যে আয়, তা এপ্রিলের চেয়ে ৬৭ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে এসেছিল ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। গত মার্চে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসে, যা ফেব্রুয়ারির আয়ের চেয়ে ৪৬ কোটি ডলার বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৬ কোটি ডলার। সেটি আবার জানুয়ারির তুলনায় ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম ছিল। জানুয়ারি মাসে প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরপরও ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় আশানুরূপ বাড়ছে না। এমন প্রবণতাও দেখা গেছে যে এক মাসে প্রবাসী আয় বাড়ে তো আরেক মাসে কমে। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ে কিছুটা গতি এলেও ফেব্রুয়ারিতে কমে যায়। পরের মাসেই, অর্থাৎ মার্চে আবার ভালো অবস্থা দেখা গেছে প্রবাসী আয়ে। এপ্রিলে আবার যা কমেছে। মে মাসে কিছুটা বাড়লেও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কম।
বাংলাদেশে গত বছরের মার্চ মাস থেকে ডলার-সংকট চলছে। এখন ধীরে ধীরে এই মুদ্রার দাম বাড়ানো হচ্ছে, যাতে আরও বেশি ডলার দেশে আসে।
ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও
বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের ডলার বিক্রিতে দাম নির্ধারণ করেছে ১০৬ টাকা, যা আগে ছিল ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম দিচ্ছে ১০৭ টাকা। ফলে আমদানিতে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখন প্রায় ১০৮ টাকা। সব ক্ষেত্রে ডলারের দাম এক করার অংশ হিসেবে দাম বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করছে।
মার্কিন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিনিয়ত কমছে, যা এখন কমে হয়েছে ২৯ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
অল্প সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে ডলারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি কমানো, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বাজেট বক্তৃতায় এসব বিষয় তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।