সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভদ্রাবতী খাল পুঃনখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, নামমাত্র খনন কাজ করায় শতাধিক কৃষক বাঁধা দিয়েছেন। দুই দিন কাজ বন্ধ ছিলো। পরে উপজেলা প্রকৌশলী ইফ্তেখার সারোয়ার ধ্রুব খাল পাড়ে গিয়ে ১৫ দিন সময় চেয়ে নেন বিক্ষুব্ধ কৃষকদের কাছ থেকে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজন সংখ্যক ভেক্যু মেশিন লাগিয়ে খালের তলার গভীরতা ও প্রস্থ, পাড়ের উচ্চতা ও প্রস্থ সঠিকভাবে করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান ও তারেক আজিজ তার সাথে ছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ করে দেয়নি অদ্যবধি। বারুহাস ইউনিয়নের দীঘরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মমিন, উকিল হোসেন, লাবু প্রামানিক, হবি প্রামানিক, সিরাজ উদ্দীন, আজিজুর রহমান, বারেক আলী ও তালম ইউনিয়নের কৃষক খয়বার মন্ডল, মহাব্বত আলী, আকবর আলী, আব্দুল হান্নান, নুর হোসেন প্রমূখ বলেন, আগের ভদ্রবতী খালের পাড় বেশ প্রসস্থ ছিলো। কৃষকরা সার-বীজ ভ্যানে করে খালের পাড় দিয়ে বিস্তীর্ণ মাঠের জমিতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু পুঃনখনন কাজে খালের পাড়ে সামান্য মাটি দেওয়ায় পাড় একেবারে সরু হয়ে গেছে। এখন খাল পাড় দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়না। পাড়ে মাটি ফেলার সময় বক্সার, স্লোপ ও ড্রেসিং করা হয়নি। এজন্য পাড়ের অধিকাংশ জায়গা থেকে বেশীরভাগ মাটি কাজ শেষ না হতেই খালের মধ্যে ধ্বসে গেছে। এরপর জমি ভেঙে খালের মধ্যে যাবে। তাছাড়া খালের তলার মাটি খুব কম কাটা হয়েছে। ফলে আগের থেকে খালের তলাও সরু হয়ে গেছে। এখন ভারি বৃষ্টি হলে খালের পানি জমির মধ্যে ঢুকে ফসলের হানী ঘটবে। সরু খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে ধান ও খড় বোঝাই নৌকা এক সাথে চলাচল করতে পারবেনা। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে পুঃনখনন কাজে বাঁধা দিয়েছি। তাতেও লাভ হয়নি। বলেছিলাম আমাদের জমির মধ্যে মাটি ফেলে খালের পাড় প্রসস্থ করে বেঁধে দেন। তাও দেয়নি! উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫২ জাহার ৮৩৫ টাকা ব্যয়ে ভদ্রাবতী খালের রানী ভবানী সেতু হতে বারুহাস সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। উত্তর ভদ্রাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিডেট ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাধ্যমে এ কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভদ্রাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, প্রকল্প অনুমোদন করাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ভদ্রাবতী খাল পুঃনখনন কাজের টাকা বাঁচিয়ে আমার ধার-দেনা শোধ করতে হবে। সরেজমিনে দীঘরিয়া গ্রাম এলাকার পশ্চিম মাঠের ভদ্রাবতী খালে দেখা গেছে, খাল পুঃনখনন কাজের পাড়ের মাটি খালের মধ্যে ধ্বসে গেছে। খালের পাড় খুব সরু। পাড়ের অধিকাংশ জায়গাতে সামান্য মাটি ফেলা হয়েছে। খালের তলায় সামান্য মাটি কাটা হয়েছে। ফলে গভীরতা খুব কম। খাল সরু করে কাটা হয়েছে। জানা গেছে, ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫২ জাহার ৮৩৫ টাকার চারটি বিলের মধ্যে তিনটি বিল তুলে নেওয়া হয়েছে ভদ্রাবতী খাল পুনঃখনন প্রকল্পের। এদিকে ২০১৪ সালে ভদ্রাবতী খাল পুনঃখননের ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে এলাকাবাসী ঐ বছেরর ১৮ ডিসেম্বরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন, এবারের পুঃনখনন কাজের মান ২০১৪ সালের কাজের মানের চেয়ে অধিক খারাপ। সদ্য বিদায়ী উপজেলা প্রকৌশলী ইফ্তেখার সারোয়ার ধ্রুব বলেন, তাড়াশ থেকে আমার বদলি হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের চলে এসেছি। তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, ভদ্রাবতী খাল পুঃনখননের বিষয়ে কিছুই জানিনা। নতুন যোগদান করেছি। সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের অভিযোগের বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখবেন। ঢাকা এলজিইডি সদর দপ্তরের টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মো. হানিফ দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, ইতোমধ্যে তিনি ভদ্রাবতী খাল পুঃন খনন কাজ পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্পে বর্ণনা অনুযায়ী খনন কাজে যে সব অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা ঠিক করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।