শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: চেয়ারম্যান বাবু ঢাকায় র‌্যাব হেফাজতে

সাদেক মাহমুদ পাভেল:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩

গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুকে প গড়ের দেবীগঞ্জ থেকে সড়ক পথে ঢাকায় আনা হয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে র‍্যাব হেফাজতে রয়েছেন তিনি। শনিবার (১৭ জুন) র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু গ্রেফতারের বিষয়ে শেষ খবরে জানা যায়, বিস্তারিত জানানো হবে। গতকাল শনিবার সকালে চেয়ারম্যান বাবুকে দেবীগঞ্জ থেকে আটক করে র্যাব। ঢাকায় আনার পরে তাকে জামালপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে তাকে বকশীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে। এদিকে নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বকশীগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলার দায়ের করেন। জামালপুরের পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ১০ জন গ্রেফতার রয়েছে। সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টায় তার মরদেহ পৌর শহরের বাসায় আসে। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নুর মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা ও গুমেরচর জিগাতলা ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ি নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নে গুমেরচরে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
অবশ্যই হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়েছে: জামালপুর থেকে: একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সতর্ক করার জন্য হামলা করা হয়েছিল। বাংলানিউজের প্রশ্নে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এসপি। বলেছেন, অবশ্যই নাদিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করা হয়েছে।
এসপি নাছিরকে বাংলানিউজ প্রশ্ন করে- আপনি এর আগে বলেছিলেন হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা হয়নি। এ কথা কেন বলেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে আঘাতগুলো দেখেছি, তাই সেটা দেখে মনে হয়েছিল। মাহমুদুল আলম বাবুর ছেলে ইট দিয়ে এমনভাবে থেঁতলে দিয়েছে, যাতে বাইরে রক্তক্ষরণ হয়নি, ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তখন তো অবশ্যই হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত।
হত্যাকা-ের দীর্ঘসময় পরও মূল আসামি কেন আটক হননি এবং ওসি বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়নি। এ সম্পর্কে এসপি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওসি সত্যিকার অর্থে ভুল বলেছেন। এলআইসি টিম আমার আন্ডারে থাকে, টিম মাঠে আছে। লাইভে বলেছি লোকেশন দেখছি, কোন দিকে আছে। পেছন পেছন যাচ্ছে। মাহমুদুল আলম বাবু কিলিং মিশনের নায়ক। সেটা প্রথম থেকেই জানি। এ সময় হত্যাকা-ের এ ঘটনায় আরও মাস্টারমাইন্ড থাকলে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হত্যাকা-ের কথা প্রথম কখন জানলেন এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি নাছির বলেন, রাত সাড়ে দশটার দিকে আমি জানি, সে সময় ভিডিও ফুটেজও পাই। এএসপিকে থানায় থাকতে বলে ওসিসহ পুরো টিমকে পাঠাই আসামিদের আটক করতে। চেয়ারম্যান বাবুর আত্মীয় পুলিশের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা- পরিবারের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথম থেকে বাবুর নাম আমি বলেছি, তিনি প্ল্যানমেকার। প্রত্যেকটা জায়গায় বলেছি। আমাদের ব্যাক-আপ আছে। আরও মাস্টারমাইন্ড থাকতে পারে, তারাও বের হয়ে আসবে।
হামলার পেছনে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম রয়েছেন- এমন অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অপরাধ বিজ্ঞান বা আইন বলে, ঢাকা থেকে হামলার অংশ হতে পারবে না, তা সত্য না। যদি নাম আসে, আসামি করব। জড়িত থাকলে বা মামলা হলে আটক করা হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৬ জুন) জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় সাংবাদিক নাদিম হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ। এ সময় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বুধবার (১৪ জুন) রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান। নাদিম হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com