শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

কাপাসিয়ায় পতিত জমিতে আনারসের চাষ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩

জেলার কাপাসিয়ার মাটি বৈচিত্যময়। কোথাও লালমাটি, কোথাও বেলে মাটি আবার অন্য কোথাও দোআঁশ মাটি। তবে লাল মাটির এলাকাই বেশি। দুই দশক আগেও এসব জমিতে ধান চাষ হতো। বাকি সময় ওই জমি পতিত পড়ে থাকত। কয়েক বছর ধরে লাল মাটির টেকটিলায় দেশি জাতের পাশাপাশি জলডুগি ও ক্যালেন্ডার আনারসের চাষ শুরু হয়। ফলন ভালো হওয়ায় পাঁচ-ছয় বছরের ব্যবধানে আনারস চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে।
কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এক থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে আনারসের চাষ করেছেন। তাঁদের উৎপাদিত আনারস পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এসব আনারস ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আ লিক মহাসড়কের পাশে কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের লোহাদী গ্রামে সড়কের পাশে বেশ কিছু আনারস বিক্রির দোকান রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে আনারস কিনে নিয়ে যান। ২০টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত প্রতিটি আনারস কেনাবেচা হয়।
আনারসের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। আনারসে থাকা ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ও ফসফরাস মানব দেহের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, হাড় গঠনে সহায়তা করে, দাঁত ও মাঢ়ির সুরক্ষা দেয়, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী, হজম শক্তি বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
উপজেলার লোহাদী গ্রামের আনারস চাষি মো. আরমান বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে আনারসের চাষ করেছি। ক্যালেন্ডার ও জলডুগি দুই জাতের আনারসের চাষ করা হয়েছে। এ বছর আনারসের দাম অনেক ভালো। আমার এক বিঘা জমিতে যে পরিমাণ আনারস হয়েছে তা প্রায় ১লাখ টাকা মতো বিক্রি হবে। এ বছর আরও কিছু জমিতে নতুন করে আনারসের চারা রোপণ করব।
আরেক আনারস চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, চার বছর আগে তিন টাকা করে আনারসের চারা কিনি। প্রতিটি চারা লাগাতে খরচ হয় দুই টাকা করে। লাগানোর এক বছর পরই আনারস ধরতে শুরু করে। আমি তিন বছর ধরে ছয় বিঘা জমির আনারস বিক্রি করছি। এ বছর আনারসের ফলন ভালো হয়েছে। তিন বিঘা জমির আনারস প্রায় ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আমার এ জমি পতিত পড়ে থাকত। কোনো ফসল হতো না। এখন আনারস চাষ করে এ জমি থেকে প্রতিবছর ভালো টাকা আয় করতে পারছি। আনারস চাষ করতে খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। কম খরচে আনারস চাষ একটি লাভজনক ফসল।
কাপাসিয়া উপজেলা সদরের বাসিন্দা মো. পারভেজ এ সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে আনারস বিক্রি করতে দেখে বাড়ির জন্য আটটি আনারস কিনেছেন। তিনি বলেন, এ এলাকার আনারস অনেক সুস্বাদু। আমি প্রায়ই এ এলাকা থেকে বাড়ির জন্য আনারস কিনে নিয়ে যাই।
স্থানীয় এলাকার মাসুদ রানা বলেন, আমি সপ্তাহে দুই দিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। সড়কের পাশে আনারস বিক্রেতাদের কাছ থেকে আনারস কিনে নিয়ে যাই বাসার জন্য। আজ চারটি জলডুগি আনারস কিনেছি। এখানকার আনারসগুলো অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। আনারসগুলো টাটকা ও বিষমুক্ত। প্রতিটি আনারস ২০ থেকে ৬০ টাকা করে কিনি।
কাপাসিয়া কৃষি অফিসের তথ্য থেকে জানা গেছে, কাপাসিয়ায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। উৎপাদিত আনারসের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন। পুরো কাপাসিয়ায় ৩ হাজার ২৫০ জন কৃষক নিয়মিত আনারসের চাষ করছেন। বিগত পাঁচ-ছয় বছরের আনারস চাষির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা মিলি বলেন, এ এলাকায় আগে শুধু দেশীয় জাতের আনারস পাওয়া যেত। এখন ক্যালেন্ডার ও জলডুগি আনারসের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে এলাকার চাষিদের মধ্যে জলডুগি ও ক্যালেন্ডার আনারস চাষের সংখ্যা ও বেশি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com