শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

যুব সমাজকে পরিকল্পিতভাবে বিকলাঙ্গ করার জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে : বিচারপতি মু. শহিদুল ইসলাম

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

বিচারপতি মু. শহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখন সমাজের সব জায়গায় মাদক পাওয়া যায়। দেশের যুব সমাজকে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিভিত্তিক বিকলাঙ্গ করার জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদক ঢুকছে। মাদককে ঘৃণা করতে হবে। আমাদের দেশের পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে মাদকের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে হবে। দেশের শিক্ষামন্ত্রীকে আমি অনুরোধ করছি, আমাদের পাঠ্য পুস্তকের মধ্যে সূরা বনি ইসরাইল ও সূরা লোকমান অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। এই দুটি সূরার নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারলেই সমাজ মাদকমুক্ত হবে।’ গত শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন মাদকমুক্ত সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুব উন্নয়ন সংসদ, ঢাকার চিফ কো-অর্ডিনেটর কামাল হোসাইনের স ালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফয়সাল রাহাত।
আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি ও মানবাধিকার-কর্মী অ্যাডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভুঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মু. শহীদুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহকারী সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল মান্নান, ডা. আতিয়ার রহমান, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সাজ্জাদ। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপক ডা. ফয়সাল রাহাত বলেন, ‘মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্কের রসায়ন পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে তা সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। নৈতিক বিবেচনাবোধের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডিপ্রেশন, দুশ্চিন্তাজনিত রোগ, ব্যক্তিত্বের রোগ, ম্যানিয়া ও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর ফলে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়, নৈতিক বন্ধন ও মূল্যবোধ দুর্বল হয়ে যায়, চুরি ও জালিয়াতিসহ অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়ে। প্রিয়জন ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রায় অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে যৌন নিপীড়নকারীদের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ মাদক গ্রহণ করে। পারিবারিক সহিংসতায় জড়িত পুরুষদের মধ্যেও প্রায় ৫০ ভাগ মাদক গ্রহণ করে থাকে। খুন বা হত্যার সাথে সম্পৃক্ত প্রায় ৪৪ ভাগ মানুষও মাদক গ্রহণ করে থাকে।’ সভাপতির বক্তব্যে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সমাজে আকিমুদ দ্বীন যখন আকিমুস সালাতের মতো পালন হবে তখনই সমাজ মাদকমুক্ত হবে। সুন্নাতে রাসূলকে ধারণ করতে পারলে, রাসূল সা:-এর নৈতিক শিক্ষা ধারণ করতে পারলে সমাজ মাদক মুক্ত হবে। জাতিসঙ্ঘ বলছে, দেশে ৬৫ লাখ মাদকসেবী। তবে সরকারি সংস্থা বলছে ৭৫ লাখ মাদকসেবী।’
ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাদকমুক্ত হতে হলে কুরআনের ছায়াতলে আসতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ করতে হলে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম ছাড়া মাদকমুক্ত করা সম্ভব নয়।’
ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সাজ্জাদ বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মাদক ঢুকে দেশের যুবসমাজকে বিকলাঙ্গ করে দিচ্ছে। সমাজের সর্বত্র মাদকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত গত ১৫ বছরে নতুন করে ৫০০ ফেনসিডিল কারখানা স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের কয়েক হাজার মাদকদ্রব্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে।’
অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক বলেন, ‘মাদককের ভয়াবহতার হাত থেকে দেশের যুব সমাজকে বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাদকের সর্বাত্মক আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য গোল্ডেন ক্রিসেন্ট আমাদের দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এবং আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী অ ল মিয়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এসব দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে মাদক পাচারের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিট ব্যবহার করার কারণে মাদকের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আড়াই হাজার ফেনসিডিল কারখানা আছে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। দেশকে ধ্বংস করতে মাদকই যথেষ্ট। ৫১ ধরনের মাদক আছে দেশে। ৮২ ভাগ মামলা মাদকের আর আট থেকে নয় ভাগ মামলা পারিবারিক। মাদকের সাথে সরকারি দলের নেতারা ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত বলেই আজ মাদক নির্মূল করা যাচ্ছে না। যার কারণে দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি ও মানবাধিকার-কর্মী অ্যাডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘মাদক ক্যান্সারের মতো। মাদকের ভয়াবহতা সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বে ২৫ লাখ মানুষ মারা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় বড় কারণ মাদক। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে সাত মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত। দেশের বেকার জনসংখ্যারও বেশ বড় অংশ মাদকাসক্ত। মোট মাদকাসক্তদের ৪৮ ভাগ শিক্ষিত এবং ৪০ ভাগ অশিক্ষিত। মাদকাসক্তদের প্রায় ৫৭ ভাগ যৌন অপরাধী, যাদের সাত ভাগ এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত। সারাদেশে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মাদককারবারি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ জন নারী।’
মু. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘২০২২ সালে ২০০ মা-বাবা খুন হয় মাদকসেবী সন্তানের হাতে। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’ ডা. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিশুরা মাদকসেবন করছে। সমাজ সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাদকের কারণে। ব্রেইন থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অর্গান ধ্বংস করছে। মাদক ক্ষতি হওয়ার কারণে আল্লাহ মদকে হারাম করে দিয়েছেন। ইসলামের নৈতিক শিক্ষা পারে আমাদের মাদকমুক্ত রাখতে।’
বক্তারা আরো বলেন, মাদক গ্রহণ একধরনের মানসিক রোগ। এ রোগের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে। মাদক নিরাময় যোগ্য নয়। বরং চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য অসুখ। মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে রোগী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে মাদকের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, সকল প্রকার মাদকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রদান করতে হবে এবং সর্বোপরি ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে মাদকের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে দেশ ও সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাবেক সহ-সেক্রেটারি জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, জাগরণী গণসঙ্গীত শিল্পী লিটন হাফিজ চৌধুরী, যুবনেতা আব্দুস সাত্তার সুমন, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান প্রমুখ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com