মানবদেহে থাকা তিন ধরনের রক্তকণিকার সবচেয়ে ছোট আকারটি হলো প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা। রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে প্লাটিলেট। এই রক্তকণিকার কারণেই শরীরের কোথাও কেটে গেলে দ্রুত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন কারণে প্লাটিলেট কমে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো দুটি- প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যাওয়া আর নয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়া। যখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে শুরু করে, তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া।
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ হলো- অ্যানিমিয়া বা রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়া, ভাইরাস সংক্রমণ, লিউকেমিয়া, কেমোথেরাপি, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ভিটামিন বি ১২ এর অভাব। এছাড়া ক্যানসার বা পিত্তথলির মারাত্মক রোগের কারণেও কমতে পারে প্লাটিলেট। একই সঙ্গে রক্তে ব্যাকটেরিয়াজনীত প্রদাহ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে নানা সংক্রমণের কারণে প্লাটিলেট ভেঙে যেতে পারে।
আর প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে শরীরে একাধিক লক্ষণ দেখা দেয়। যা অনেকেই অবহেলা করেন। তবে এই লক্ষণগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে না গেলে বিপদ হতে পারে। জেনে নিন কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন প্লাটিলেট কমতে শুরু করেছে- চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু হলে ৪-৭ দিনের মধ্যে প্রচ- জ্বর শুরু হয়। এতে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। ২-৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে। প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান ও প্রথম লক্ষণ এটি।
মাথাব্যথা: ডেঙ্গুকে ব্রেক বোন ফিভারও বলা হয়। কারণ এটি পেশী, হাড় ও জয়েন্টগুলোতে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে। এ কারণে রোগী অস্থির থাকে ও বিশ্রাম পায় না। অত্যধিক মাথাব্যথা হয়।
ক্লান্তি ও দুর্বলতা: ক্লান্তি, শক্তির অভাব ও দুর্বল বোধ করা ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণ। এমনকি ডেঙ্গু রোগীরা বিছানা থেকে ওঠার মতো শক্তিও পান না। অতিরিক্ত ক্লান্তি কিন্তু প্লাটিলেট কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
চোখে ব্যথা: জ্বরের পাশাপাশি চোখের ভেতরে ও পেছনের দিকে ব্যথা হতে পারে ডেঙ্গু হলে ও প্লাটিলেট কমতে শুরু করলে। চিকিৎসকদের মতে, চোখ নাড়ানোর সময় এই ব্যথা বেশি অনুভব করা যায়। এমনকি রোগীর দেখতেও অসুবিধা হতে পারে।
ফুসকুড়ি: জ্বর শুরু হওয়ার প্রায় ২-৫ দিন পরে, শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এক স্থান থেকে শুরু হয়ে শরীরর বিভিন্ন স্থানে এমনকি মুখে পর্যন্ত ফুসকুড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ফুসকুড়িগুলো ত্বকে লাল বা গোলাপি দাগ বা প্যাচের সৃষ্টি করে এমনকি চুলকানিও হতে পারে।
ত্বকের নিচে রক্তপাত: ডেঙ্গুর কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। এ কারণে শরীরে ছোট ছোট লাল বা বেগুনি দাগ তৈরি হতে থাকে, যাকে পেটিচিয়া বলে।
এছাড়া আপনার মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে আপনার ডেঙ্গু হয়েছে ও এরই মধ্যে প্লাটিওলেট কমতে শুরু করেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু যে ডেঙ্গুর কারণেই প্লাটিলেট কমে তা কিন্তু নয়। অন্যান্য অনেক কারণেই এটি কমে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, প্লাটিলেট কাউন্ট ৫০ হাজারের নিচে নামলেই রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে কিন্তু ডেঙ্গুর তীব্রতা মাপা হয় না। প্লাটিলেট ঠিক থাকলে রোগী ভালো থাকবে তাও নয়। প্লাটিলেট দিলেই যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে এমনও নয়। রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা দিলে ও প্লাটিলেট কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নামলে অথবা রক্তক্ষরণ নেই কিন্তু প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে, তখন রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়া হয়। সূত্র: প্রেসওয়্যার ১৮