গহনা তৈরিতে মুক্তার কদর বিশ্বজুড়ে। সেই মুক্তা চাষ করে সফলতার দেখা পেয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামের জুলফিকার রহমান বাবলা। মাছচাষের পাশাপাশি মুক্তাচাষ করে কয়েক বছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মুক্তা বিক্রি করেছেন তিনি। বাবলার এমন সাফল্য দেখে মুক্তাচাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় যুবকরাও। জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে বাবলা জানতে পারেন মুক্তা চাষ করে আয় করা যায়। ২০১৬ সালের জুন মাসে মাছচাষের প্রশিক্ষণে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) যান তিনি। সেখানে স্বাদু পানিতে মুক্তাচাষের ৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর স্থানীয়ভাবে ঝিনুক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে মুক্তাচাষ শুরু করেন বাবলা।
প্রথম অবস্থায় ৬টি ঝিনুক সংগ্রহ করে পুকুরে ছাড়েন তিনি। প্রাথমিক সাফল্য পেয়ে একটু বড় আকারে ৬৫০টি ঝিনুক থেকে প্রথমবার প্রায় ৫০০টি ইমেজ মুক্তা উৎপাদন করেন। এভাবে পরপর ২ থেকে ৩ বার মুক্তা পেয়েও সুবিধামতো বাজারজাত করতে না পেরে লোকসানের সম্মুখীন হন বাবলা। তবে নিরাশ না হয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখেন। বর্তমানে বাজারজাতকরণের সেই সমস্যা কাটিয়ে স্থানীয় বাজারেই এ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকার মুক্তা বিক্রি করেছেন তিনি।
এদিকে বাবলার সাফল্য দেখে মুক্তাচাষ করছেন স্থানীয় অনেকেই। ভারত বাংলাদেশ দুই দেশেই বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির সুযোগ থাকায় মুক্তাচাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত জেলায় ২৭ জন চাষ করছেন এই মুক্তা। মুক্তাচাষে সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আরও অনেকেই।
বাবলার সাফল্য দেখে মুক্তাচাষ শুরু করেছিলেন একই এলাকার আশরাফুল ইসলাম। প্রথম বছরেই লাখ টাকায় বিক্রির পর আবারও উৎপাদন শুরু করেছেন তিনি।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাবলা ভাইকে দেখে আমিও মুক্তাচাষ শুরু করি। আমার নিজস্ব পুকুরেই মাছের সঙ্গে চাষ করি। এক বছরে লাখ টাকার মতো বিক্রি করেছি। মাছ থেকে যাই আসুক বছরে মুক্তা থেকে ভালো একটা লাভ পাচ্ছি। আবার ঝিনুক ছেড়েছি। এবার আরও বেশি বিক্রি করবো।
দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক মুক্তাচাষি বলেন, আমরা একটা ঝিনুক ৫-৮ টাকায় কিনি। সেখান থেকে মুক্তা পাই প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা মূল্যের। মাছ চাষের পাশাপাশি এভাবে ভালোই আয় হচ্ছে। বিক্রি বা বাজারজাত নিয়ে চিন্তা নাই। ব্যাপক চাহিদাও আছে।
পলিত রায় নামের আরেকজন বলেন, বাবলা ভাইয়ের সহযোগিতায় শুরুটা করেছিলাম। আমাদের মাছের প্রোজেক্টেই এটা করেছিলাম৷ শুরুর দিকে কিছুটা ধাক্কা পেলেও এখন ভালো যাচ্ছে। গত বছর ৫০ হাজারের মতো আয় হয়েছে, এবার আরও বেশি আয় হবে।
জুলফিকার রহমান বাবলা বলেন, আগে মাছচাষ করতাম। একটি ট্রেনিংয়ে গিয়ে মুক্তাচাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিই। ২০১৬ সালে শুরুর করলেও উৎপাদনের পর আমি বাজারজাত করতে পারিনি। এখন আমি বাজারজাত করতে পারি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫-১৬ লাখ টাকার মুক্তা বিক্রি করেছি। ভারত বাংলাদেশ দুই দেশেই এর চাহিদা আছে। তিনি আরও বলেন, মৎস অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃত্রিম ইমেজ দিয়ে আমরা উৎপাদন করেছি। আমার সাফল্য দেখে এলাকার ২৭ জন এখন পর্যন্ত মুক্তা চাষ করছে এবং লাভবান হচ্ছে। আমরা একটি প্রতিষ্ঠান করেছি। এটার মাধ্যমে তারা তাদের উৎপাদিত মুক্তা বিক্রি করতে পারছেন।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ডা. আজহার আলী বলেন, মুক্তাচাষ প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকৃত একটি প্রজেক্ট। আমরা শুরু থেকেই চাষিদের টেকনিকাল সাপোর্ট দিয়ে আসছি। এখন পর্যন্ত নীলফামারী জেলায় ২৭ জনের বেশি চাষি মুক্তা চাষ করছেন। তিনি আরও বলেন, আগেতো নানাভাবে উৎপাদন হতো। যেহেতু এটি বাণিজ্যিক চাষ, সেক্ষেত্রে ইমেজ টাইপ মুক্তার চাহিদা বেশি। তাই আমরা কৃত্রিম যে ইমেজ তা সরবরাহ করছি। এছাড়াও মুক্তা বাজারজাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা চাষিদের লিংক করে দিচ্ছি। এ অ লের স্বাদু পানিতে মুক্তাচাষের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।- জাগো নিউজ