মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন ভাবছে না: ইসি আলমগীর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জে লিচুগ্রামে লিচুর খরা ডিপজলের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের ব্যাটারিচালিত রিকশা কোথায় কীভাবে চলবে নির্দেশনার পর ব্যবস্থা: ডিএমপি টানা সাত কার্যদিবস পতনে শেয়ারবাজার ইরানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন পরমাণু আলোচক বাঘেরি ইব্রাহিম রাইসির উত্তরসূরি কে এই মোহাম্মদ মোখবের

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা-ইউরোপের তৎপরতা কোন পথে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩
উজরা জেয়া, জোসেফ বোরেল ও ডোনাল্ড লু - ছবি : বিবিসি

বাংলাদেশে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতার পালে আরো জোরালো হাওয়া লেগেছে। ঈদের পর থেকে সে তৎপরতা আরো দৃশ্যমান হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতা শুরু হয়েছে আরো বেশ আগে থেকেই। পাশাপাশি ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও বসে নেই। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। এসব সফরে নির্বাচন ইস্যু যে প্রাধান্য পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ সরকারও সেটি অস্বীকার করছে না। পশ্চিমা দেশগুলোর এমন তৎপরতায় বেশ নাখোশ হয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় টুইটারে দেয়া এক বিবৃতিতে খোলাখুলিভাবে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনীতিবিদরা যে তৎপরতা দেখাচ্ছে সেটিকে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরো একটি নগ্ন হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া।
আমেরিকার তৎরপতা
আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসছেন বাইডেন প্রশাসনের দুজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক। এদের একজন হচ্ছেন উজরা জেয়া এবং অন্যজন হচ্ছেন ডোনাল্ড লু। উজরা জেয়া হচ্ছেন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। অন্যদিকে ডোনাল্ড লু হচ্ছেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে ডোনাল্ড লু সেটির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ঈদের ছুটির পরপরই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছেন। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপের ১২টি দেশের কূটনীতিকরা আলাদা বৈঠক করেছন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলটি শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আসছে না। তবে এই সফরে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ইলেকশনের জন্য আসছে সেটা আমার তথ্যমতে নাই কিছু। এখানে অনেকই ইস্যু আলোচনা হবে, তারমধ্যে ইলেকশন আসতে পারে,’ বলেন তিনি। এই সফরে মানবাধিকার, রোহিঙ্গা ইস্যু, শ্রম অধিকার এবং বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ব্রিটেন আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার ওপর জোর দিচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক সংলাপ নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ইতিবাচক কোনো মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। গত বুধবার ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী নাইজেল হাডলস্টন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে দেখা করেছেন। সেখানে ব্রিটেনের মন্ত্রী বলেছেন, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর উপর সংলাপের জোর দিয়েছেন তিনি।
গত ১২ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে চিঠি দিয়েছেন। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিতে অবদান রাখার জন্য পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধানকে অনুরোধ করা হয় সে চিঠিতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের কাছে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। সেখানে বোরেল লিখেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না সেটি মূল্যায়ন করার জন্য তাদের একটি দল আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে। জোসেফ বোরেল চিঠিতে এমনটাই জানিয়েছেন।
সে অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের এই সফর হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সফর নিয়ে অনেক আগে থেকেই কথাবার্তা চলছে। এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্ধারণ করবে তারা আগামী নির্বাচনের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাবে কী না,’ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
আওয়ামী লীগ ও কূটনীতি
নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের উপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ এখন দৃশ্যমান। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সূত্র বলছে, পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে আমেরিকার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটি কমিয়ে আনা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সাথে ঢাকাস্থ আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সাথে গত কয়েক মাসে একের পর এক বৈঠক হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, এসব বৈঠকে তারা বারবার তুলে ধরেছেন যে বিগত বিএনপি সরকারের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের পার্থক্য কোথায়। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং বিভিন্ন উপ-নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ বোঝানোর চেষ্টা করছে যে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। যদিও আওয়ামী লীগের এসব যুক্তি কূটনীতিকদের পুরোপুরি আশ্বস্ত করতে পারছে না। কূটনীতিকদের তরফ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা কিভাবে সম্ভব?
আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করেন, আমেরিকার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল সেটি ক্ষমতাসীনরা অনুধাবন করতে পারেননি। তবে র?্যাব এবং কিছু কর্মকর্তার উপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর তারা নড়েচড়ে বসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা যে অবস্থান নিয়েছে সেটি যদি তারা অব্যাহত রাখে তাহলে ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।
‘এই জায়গাটাতে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তিগুলো দায়িত্বে ছিল তারা ঠিকমতো কাজ করেনি,’ বলেন আওয়ামী লীগের সে নেতা।
দলটির সূত্রগুলো বলছে, আমেরিকার সাথে সম্পর্ক সহজ করার জন্য এখনো তারা আশা করছেন যে ভারত একটি ভূমিকা পালন করবে।
যদিও আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বিভিন্ন বক্তব্যে দাবি করে আসছেন যে বাংলাদেশের নির্বাচন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই।
কূটনীতিকদের সাথে বিভিন্ন বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমেরিকার সাথে যতটুকু দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সেটি কাটতে শুরু করেছে। ‘একটা ইমপ্রুভমেন্টের (উন্নতির) দিকে যাচ্ছে, এটা বলতে পারি,’ বলেন তিনি। সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থার মিনিংফুল (অর্থবহ) সংস্কার আমরাই করেছি। গণতন্ত্র কখনো বৈপ্লবিকভাবে হয় না। এটা প্র্যাকটিসের (চর্চার) মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। বিদেশীদেরও বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে বিচার করতে হবে।’
বিএনপি ও কূটনীতি
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের জন্য সরকারের উপর যে চাপ তৈরি হয়েছে সেটি সরকার বিরোধীদের জন্য এক ধরনের কূটনীতিক বিজয়।
আমেরিকা ও ইউরোপের কূটনীতিকদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করে যাচ্ছে বিএনপি প্রতিনিধি দল। সর্বশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের পরে। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগেও বিভিন্ন সময় কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক হয়েছে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্র বলছে, কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকে বিএনপির কাছ থেকে তারা বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে সে সরকার কেমন হতে পারে তা জানতে চেয়েছেন। একইসাথে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে যাতে কোনো সহিংসতা না হয় সে বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায় এলে সরকার কাঠামো কেমন হবে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার করতে পারছে না বিএনপি। এমটাই জানা যাচ্ছে তাদের দলীয় সূত্র থেকে।
কূটনীতিকদের সাথে বিভিন্ন সময় বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, কূটনীতিকরা চায় বাংলাদেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচিত সরকার থাকুক। শামা ওবায়েদ বলেন, কূটনীতিকরা এখন ‘পার্টিসিপেটরি বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ শব্দ ব্যবহার করছে না। কারণ তারা দেখেছে যে ২০১৮ সালে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও নির্বাচন কী দশা হয়েছে।
‘তারা আমাদের কাছে জানতে চায়, বিএনপির প্ল্যান কী? বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তাহলে তারা কিভাবে রিফর্ম (সংস্কার) করবে সেটাও জানতে চায়,’ বিবিসিকে বলেন শামা ওবায়েদ। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com