বরিশালে ডেংগু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে চিকিৎসাধীন ডেংগু রোগীর সংখ্যা। গত ৩ দিনের ব্যবধানে ডেংগু রোগী দ্বিগুণ বেড়ে সবশেষ চিকিৎসাধীন আছেন চলতি মৌসুমের সর্বাধিক ৮৪ জন রোগী। গত কয়েকদিন ডেংগু রোগীদের সাধারণ রোগীর পাশে রাখা হলেও রবিবার তাদের একই ফ্লোরে আলাদা কক্ষ দেয়া হয়েছে। নানা সংকটে আছেন ডেংগু রোগীরা। ডাকলেও ডাক্তার-নার্স কাছে যায় না তাদের। নোংরা দুর্গন্ধময় ওয়ার্ডগুলো মশার আবাস্থলে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের কিছু ওষুধ দেয়া হলেও বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। এদিকে ডেংগু চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র ‘সেল সেপারেটর’ না থাকায় গুরুতর রোগীদের ঢাকায় প্রেরন করতে হচ্ছে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে শুধুই আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে ডেংগু সন্দেহে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫১ জন রোগী। জুন মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪৯ জন। জুনের শেষ ভাগ থেকে প্রতিদিন বাড়ছে চিকিৎসাধীন ডেংগু রোগীর সংখ্যা। রবিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী শনিবার (হালনাদাগ তথ্য) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মৌসুমের সর্বাধিক ৮৪ জন ডেংগু রোগী। এর আগে শুক্রবার ৭৬ জন, বৃহস্পতি ও বুধবার ৫২ জন এবং গত মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৭ জন। রবিবার মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের ৪টি মেডিসিন ওয়ার্ডে ৪৮টি করে মোট ১৯২টি শয্যা থাকলেও রোগী ভর্তি আছেন দুই থেকে ৩ গুণ। এর মধ্যেই এপাশ ওপাশ করে রাখা হচ্ছে ডেংগু রোগীদের। নোংরা দুর্গন্ধময় ওয়ার্ডগুলো রোগীদের কাছে অসহনীয়। ডেকেও ডাক্তার-নার্স না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। কর্তৃপক্ষ অবশেষে ডেংগু রোগীদের মশারি দিলেও মশার উৎপাতে অতিষ্ট তারা। হাসপাতালে কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা। সরকারিভাবে সব ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে ডেংগু রোগীদের। এদিকে, ডেংগু রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র না থাকায় একটু আশঙ্কাজনক হলেই তাদের ঢাকায় পাছাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গত ৫ দিন ধরে শেবাচিমের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডেংগু রোগী পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের দুর্জয় চন্দ্র শীল বলেন, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল। অথচ সুবিধা শূন্যের কোটায়। রোগীর অবস্থা একটু খারাপ হলেই ঢাকায় প্রেরণ করেন চিকিৎসকরা। শেবাচিম হাসপাতাল সহ পুরো বিভাগে কোথাও ডেংগু চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র না থাকায় আশঙ্কাজনক রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ঢাকায় নিতে হচ্ছে রোগীদের। পথেও রোগীরা মারা যাচ্ছে। গুরুতর ডেংগু রোগীর চিকিৎসার জন্য একটি ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র বরাদ্দের দাবি জানান তিনি সহ অন্য গুরুতর রোগীর স্বজনরা। ডেংগু রোগীদের নানা সমস্যা ও সংকটের কথা স্বীকার করে একটি সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকারিভাবে যা সরবরাহ আছে সেসব ওষুধ রোগীদের দেয়া হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নিয়মিত চলে। তার মতে, শুধু সেল সেপারেটর যন্ত্র হলেই হবে না, যন্ত্র চালানোর টেকনিশিয়ানও সহ সাপোর্টিং স্টাফও প্রয়োজন। তিনি রোগীদের সমস্যাগুলো সমধানের প্রতিশ্রুতি দেন। শুধু শের-ই বাংলা মেডিকেলেই নয়, বরিশাল বিভাগের কোন সরকারি হাসপাতালে নেই গুরুতর ডেংগু রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র। মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দিয়েও ‘সেল সেপারেটর’ যন্ত্র না পাওয়ার কথা জানিয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।