বিয়ে। পবিত্র এক বন্ধনের নাম। যে বন্ধনের সাথে মানুষের শারীরিক, মানসিক পবিত্রতাও সম্পর্কিত। একজন মানুষের জীবনে পবিত্র এ সময়ের আবির্ভাব যখন হয় তখন তার জীবন সুরভিত হয়ে ওঠে। সে সৌরভ পবিত্রতার। সে সৌরভ তার জীবনে নিয়ে আসে জান্নাতি সুখের ফোয়ারা। পবিত্র এই বন্ধন গড়ে ওঠে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। এই বন্ধন চিরন্তন। রব্বে কারিম মানুষের প্রতি কতটা দয়াবান তা এ পবিত্র সম্পর্কের মাধ্যমে বোঝা যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পবিত্র এই সম্পর্কের শুরু হয় বিয়ের মাধ্যমে। যে পবিত্র সম্পর্কের নিদর্শন হয় তাদের সন্তানের জন্মলাভ।
বিয়ে রাসূল সা:-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোর মধ্যে একটি। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ বৈধ পন্থায় তার চাহিদা পূরণ করতে পারে। বিবাহিত জীবন যে কত পবিত্র তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাময় মধুর সম্পর্ক মানুষের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে হৃদয় প্রশান্তকারী এক অনুভূতি। সে অনুভূতি অতুলনীয়। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ যাবতীয় হারাম সম্পর্ক, হারাম কাজ ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। পবিত্র এই বন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৈরি হয় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ এবং একে অপরকে বোঝার মানসিকতা। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-মমতা-দায়িত্ব বোধের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা রব্বে কারিমেরই দান। রব্বে কারিম ইরশাদ করেছেন- ‘তারা তোমাদের জন্য এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।’ (সূরা বাকারা-১৮৭)
রাসূল সা: যুবক সম্প্রদায়কে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা:-এর সাথে আমরা কতক যুবক ছিলাম আর আমাদের কোনো কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাজত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।’ (বুখারি-৫০৬৬)
বিয়ের মাধ্যমে মানুষ যে কত পবিত্র জীবন লাভ করে তা অবর্ণনীয়। বিয়ের মাধ্যমেই মানুষ সন্তান লাভ করে। সেই সন্তান স্বামী-স্ত্রীসহ পুরো পরিবারের জন্য কত যে আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ মানুষকে চক্ষুশীতলকারী সন্তান দান করেন। সন্তানের কারণে তখন স্বামী-স্ত্রী বাবা-মা বলে পরিচয় পেয়ে থাকেন। সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের যে ভালোবাসা, যে মমতা তা কোনো ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সন্তানকে দেখে বাবা-মা তাদের চক্ষু জুড়ান। চোখের সামনে সন্তানের বেড়ে ওঠা, আব্বু-আম্মু বলে ডাকা, তাদের সাথে খেলা করা, কোলে কোলে থাকা, সন্তানকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখা, সন্তানের হাসিমুখ ইত্যাদি তাদের পবিত্র জীবনকে আরো খুশিতে ভরিয়ে তোলে। রব্বে কারিম ইরশাদ করেছেন- ‘মানুষকে নারী এবং সন্তান-সন্ততির দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৪) হারাম থেকে বেঁচে থেকে হালালভাবে জীবন উপভোগ করা বিয়ে ছাড়া অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। তাই তো রব্বে কারিম বিয়ের ব্যবস্থা রেখেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মানুষের জন্য বিবাহিত জীবনের মধ্যে রেখেছেন অফুরন্ত বরকত আর প্রশান্তি। রব্বে কারিম বিবাহিতদের জন্য তার অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আন-নুর-৩২)
বস্তুত বিয়ের মাধ্যমেই মানুষ জীবনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে পারে। বিয়ে রব্বে কারিমের এক বিরাট অনুগ্রহ। বিবাহিত জীবন কতই না আনন্দের! যেখানে পবিত্রতা হাতছানি দিয়ে ডাকে। লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়