রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন

ধর্ম অবমাননা কাম্য নয়

মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩

এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস। এর প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী। অর্থাৎ খুব কম মানুষই ধর্মে অবিশ্বাসী। তবে এক ধর্মের অনুসারী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে কিংবা এক ধর্মের অনুসারী ভিন্ন ধর্মের অনুসারীকে কটাক্ষ করবে, ছোট করবে বা অবমাননা করবে তা কোনোভাবে কাম্য নয়। আল্লাহ বলেন, ‘এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত পূজা-অর্চনা করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করো না, তাহলে তারা অজ্ঞতাবশত বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালাগালি দিতে শুরু করবে। আমি তো এ রূপেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের আমলকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কী কী কাজ করেছিল তা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন’ (সূরা আল আনআম : ১০৮)।
তাই অন্য কোনো ধর্মকে গালি দেয়া যাবে না এবং কোনো দেব-দেবতাকে গালি দেয়া যাবে না। অন্যের ধর্মের লোকেরা আমাদের আল্লাহকে যেন গালি না দেয় সে জন্য এমন করা যাবে না। যার যার ধর্ম পালন করবে। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম, অন্যের ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় অন্য ধর্মের লোকেরা আমাদের ধর্মকে অবমাননা করে এবং হজরত মুহাম্মদ সা: কে অপমান করে। আমাদের আল কুরআনকে তারা আঘাত করে।
সম্প্রতি সময়ে সুইডেনে মুসলিমদের পবিত্র কিতাব ও পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কুরআনকে পোড়ানে হয়েছে। গত ২৮ জুন স্টকহোম শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে পবিত্র আল কুরআনের একটি কপিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এক ব্যক্তি। তার নাম সালওয়ান মোমিকা। সে সুইডেনে বসবাসরত। তুরস্ক, ইরাক, ইরান, মিসর, সৌদি আরব, ইয়েমেন, জর্ডান মরক্কো ও বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আল্লাহর কিতাব আল কুরআনকে পোড়ানোর ঘটনা সারা বিশ্বের মুসলমানদের কলিজার মধ্যে আঘাত লেগেছে। কারণ আল কুরআন আমাদের জীবনবিধান আমাদের ভালোবাসা আমাদের ঈমান। যুগে যুগে কাফের মুশরিকরা আল কুরআনকে মাইনাস করতে চেয়েছিল কিন্তু তারা পারেনি, তারা নিজেরা মাইনাস হয়ে গেছে। আল কুরআন হচ্ছে আলো, নূর, পৃথিবীর কোনো শক্তি এই আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে পারবে না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, তারা আল্লাহর নূর ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূর পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে (সূরা আস সাফ : ০৮)। তারা দুনিয়া থেকে হিদায়াত ও সত্য দীনকে মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু এটা সম্ভব না। এটাই হলো আল্লাহর আলো, আল্লাহর আলো সবসময় জ্বলবে, আল্লাহর আলোকে আল্লাহ হেফাজত করবেন। লাখো লাখো শক্তি ও কোনো ষড়যন্ত্রকারী এই আল্লাহর কুরআনকে নিভিয়ে দিতে পারবে না। আল্লাহর রাসূল সা:-এর অবমাননাকারীরা আখিরাতে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে।
হজরত মুহাম্মদ সা:। এর শান মান আল্লাহর কাছে অনেক মহান। আল্লাহ বলেন, এবং ‘আমি তোমার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি’ (সূরা আল ইনশিরাহ : ৪)। এই পৃথিবীতে যখন অশান্তির যুগ ছিল, যখন বর্বরতার যুগ ছিল, সেই যুগে আমাদের প্রিয়নবী সা: শান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। তার আগমনের কারণে সারা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যায়। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহর প্রিয়নবী সা:কে যারা অবমাননা করেছে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে, আবু জেহেল, আস ইবনে ওয়ায়েল ও আস ইবনে মগীরাসহ অসংখ্য কাফের ধ্বংস হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে শোনা যায় বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা প্রিয় নবীজীকে অবমাননা করে এবং মুসলিমরা প্রতিবাদ করে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পাড়া দেয় আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আল আহজাব : ৫৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জানে না যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যারা বিরুদ্ধাচরণ করে, এমন লোকের ভাগ্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন? তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে, এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা’ (সূরা আত তাওবাহ : ৬৩)। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কিছু দেশে ধর্ম অবমাননার শাস্তির বিধানসংবলিত আইনও রয়েছে। ( দৈনিক নয়াদিগন্ত অনলাইন) লেখক : আলেম, গবেষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com