জেলার মাঠে-মাঠে পানের বরজ। মাচার উপর সারিবদ্ধ পানপাতা চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরে দিন-দিন পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার চাষীরা তামাক চাষ ছেড়ে পান চাষে ঝুঁকছে।
একটা সময় জেলার গাংনী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পান চাষ ছিলো। বর্তমানে জেলার প্রতিটি গ্রামে পান চাষ হচ্ছে। জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ আছে। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে পানের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পান চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। তাই অসংখ্য পানের বরজ সবগ্রামেই চোখে পড়ার মতো। গ্রামীণ অর্থনীতিতে আশা জাগাচ্ছে পান চাষ। একসময় ধারণা ছিল শুধু গাংনীর মাটি পান চাষের উপযুক্ত নয়। কিন্তু সে ধারণা বদলে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পান চাষের ব্যাপকতা বেড়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক নূর হোসেন জানান, ‘তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষ করে আসছেন। তার পান চাষে লাভবান হওয়াতে গ্রামের অনেকেই এখন চানচাষী। নূর হোসেন জানান- প্রথমবছর আমি মাত্র ৮ কাঠা জমিতে পান চাষ করি। লাভবান হওয়াতে এ বছর আমি একবিঘা জমিতে পান চাষ করেছি। এবছর একবিঘা জমি আড়াই লাখ টাকার বেচাকেনা হবে বলে তিনি আশা করছেন। পান চাষ করে তিন ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। এছাড়া পান চাষ করে ইতোমধ্যে বাড়ি ও ১০ কাঠা চাষের জমি কিনেছে বলেও জানান। বর্তমানে তার দেখাদেখি এই এলাকার অনেকেই পানের বরজ করেছেন।
গাংনীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, পান চাষে কিছু রোগবালাই যেমন গোড়া পচা, লতা পচা, ঢলে পড়া, পাতা পচা, পাতায় ষ্পট ইত্যাদি দেখা যায়। এসব রোগ বালাই প্রতিকারের জন্য ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়। পাটকাঠি, খড়, ধানের ছন, বাঁশের খুঁটি বা শলা ভালোভাবে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত না করলে পান চাষে ক্ষতি হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার জানান- ‘নিরাপদ পান চায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ কর্মসূচি’র প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পান চাষীদের নিয়মিত দেখভাল আর পরামর্শ প্রদান করায় চাষিরা সাফল্যেও মুখ দেখছে। পানের চাহিদা থাকায় আমরা ‘মিঠা পান’ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ বছর জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এখানে পান চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করেন।