বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের গল্প তাৎপর্য বহন করে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি আমাদের জনগণ এবং আমাদের জনগণের শক্তির মধ্যে দিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের পূর্ণমাত্রা প্রকাশ পায়।’ গত রোববার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস (৪ জুলাই) উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হাস বলেন, তারা আমেরিকাকে সংজ্ঞায়িত করা নীতিগুলো বিশ্বাস করেন এবং এগুলো আমেরিকার সীমানা ছাড়িয়েও বিস্তৃত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে এই মূল্যবোধ বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাথে জড়িত।’ গত ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হচ্ছে দেশাত্মবোধক বক্তৃতা, বাড়ির উঠোনে বারবিকিউ পার্টি, সামরিক কুচকাওয়াজ ও আতশবাজি এবং ‘স্টার-স্প্যাংলেড ব্যানার’ থেকে শুরু করে ‘বর্ন ইন দ্য ইউএসএ’, ‘ব্যাড টু দ্য বোন’ পর্যন্ত গানের পরিবেশনা। সংক্ষেপে বললে, তারা যে নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাই উদযাপন করে থাকে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এমনটাই করতে মজা পাই। আর আজ রাতে আমরা তাই করতে এসেছি।’
হাস বলেন, ‘আমরা এই সত্যগুলোকেই স্বতঃসিদ্ধ মনে করি। আর সেগুলো হলো- সব মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে; সৃষ্টিকর্তা তাদের কিছু অবিচ্ছেদ্য অধিকার দিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে জীবন, স্বাধীনতা ও সুখের সন্ধান রয়েছে। এই অধিকারগুলো সুরক্ষিত করতে নাগরিকদের সম্মতি নিয়ে তাদের ন্যায্য ক্ষমতা অর্জন করে সরকার গঠন করা হয় এবং সাধারণত তা পুরুষদের নিয়েই গঠিত হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০২৩ সালে এসেও আমি লক্ষ্য করছি যে সমতা ও গণতন্ত্রের এই নীতি কেবল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং নারী এবং জাতি, বর্ণ বা ধর্ম নির্বিশেষে সব আমেরিকানদের জন্য প্রযোজ্য।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের আদর্শ একই; যা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি আরো বলেন, ‘১৭৭৬ সালের প্রায় দুইশ’ পরে, বাংলাদেশ চারটি অনুরূপ নীতির উপর ভিত্তি করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সেগুলো হলো- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই অভিন্ন নীতি ও ‘নিখুঁত ইউনিয়ন গঠনে’র সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি হয়েছে এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।’ এই উপলক্ষে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যা জর্জ থরোগুডের ভ্রমণের চেতনাকে প্রতিফলিত করে বাংলাদেশি ধাঁচে উপস্থাপন করেছে। এই প্রদর্শনীতে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের অনেকগুলোতে বাড়ি তৈরি করা বাংলাদেশিদের ছাপ পাওয়া যাবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই ছবিগুলো আমাদের সীমানার মধ্যে বিকশিত বৈচিত্র্যের প্রমাণ, যেখানে বাংলাদেশীসহ সর্বস্তরের মানুষ এমন এক জায়গা পেয়েছে যাকে নিজের ঘর বলা যায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রদর্শনীটির মাধ্যমে আমরা আমেরিকান স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা বাংলাদেশিদের অসাধারণ গল্প জানতে পারব, যারা তাদের দক্ষতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের সমাজের প্রাণবন্ত গাঁথুনিতে অবদান রেখেছেন।’ হাস বলেন, ‘সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উপস্থিতি আমেরিকানদের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতার উদাহরণ এবং স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতার ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধের মূলে একটি শক্তি।’ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।