ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নয়াপল্টনেই হবে বিএনপির মহাসমাবেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সারা দেশের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা ও গ্রেফতার নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেন, আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের হাত পা ভেঙে দেয়া হচ্ছে। হাতের কবজি কেটে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় অনেক নেতা-কর্মীকে ক্ষমতাসীনরা সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করেছে। তবুও আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। কোনো ধরনের সহিংসতায় আমরা বিশ্বাস করি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব- দমননীতি পরিহার করে বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি সফলে সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরো বলেন, বিনা কারণে আতঙ্ক ছড়াতে সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এটা হলো সরকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা। নেতাকর্মীদের যত গ্রেফতার করবেন ততই কিন্তু আন্দোলন বেগবান হবে। অতএব আপনারা যাদের গ্রেফতার করেছেন, আমি তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। এখানে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনে যে যার মতো চলে যাবেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মো: আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ডা. মো: রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, খান রবিউল ইসলাম রবি প্রমুখ।
গত বুধবার রাত ৯টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন। দিনটি ‘কর্মদিবস’ উল্লেখ করে এ দুই ভেন্যুতে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশের অনুমতির ব্যাপারে ইতিবাচক কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বিএনপির কর্মসূচি পরিবর্তনের পর যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য ৩৫টি রাজনৈতিক দলও তাদের মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার ২৮ জুলাই করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। গত বুধবার ২৬ জুলাই রাতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি পূর্বপান্থপথস্থ এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি কার্যালয়ের সামনে, গণতন্ত্র ম প্রেসক্লাব এলাকায়, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে।
তাছাড়া বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টিও বিজনয়নগর পানির ট্যাংঙ্কির সামনে, গণঅধিকার পরিষদ বিজয়নগর কালভার্ট রোডে, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করবে। এদিকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার (২৮ জুলাই) মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএনপি। বুধবার রাতে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিএনপির আজ শুক্রবারের মহাসমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অভিযান। বুধবার রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়েছে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীকে। নয়াপল্টনের মিডওয়ে আবাসিক হোটেল থেকেই অন্তত দেড়শ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও ধরপাকড় হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এদিকে পুলিশের গ্রেপ্তার ও তল্লাশি অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার দিনভর নয়াপল্টন এলাকা সরগরম থাকলেও বিকাল থেকে ফাঁকা হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দলের নেতাকর্মীরা নিরাপদ অবস্থানে চলে যান।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় এ অভিযান চলছে। তবে কত সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই তথ্য বলেনি পুলিশ। ওদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ ১৫৫ নেতাকর্মীকে হোটেল মিডওয়ে (নয়াপল্টন) থেকে রাতে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। রাতে ঢাকা মহানগরের ২৩ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মীর আশরাফ আলী ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মুনতাইন আলীকে গ্রেফতার করে পুলিশ । গ্রেপ্তারের সময় কমিশনার মীর আশরাফ আলীর দুই পা ভেঙে গেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মিরপুর থানা পুলিশ পাংশা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সবিজ রাজা, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, কলিমহর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জাহিদ হোসেন, মৌরাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের কনকসহ ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কলাবাগান থানায় গ্রেফতার হয়েছেন জয়পুরহাট জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব মঞ্জুরে মওলা পলাশ ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খন্দকার (এ্যালট)।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মীর আশরাফ আলী ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মুনতাহা আলীকে গতকাল রাতে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় জনাব আশরাফ আলী দুই পা ভাঙ্গাসহ গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ছাড়া আগামীকাল ২৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির মহা সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কুদ্দুস আকন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক শতাধিক নেতাকর্মীকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। নয়াপল্টনের কাছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে মিডওয়ে হোটেল ও ভিক্টোরিয়া হোটেলেও অভিযান চালায় পুলিশ। ২৮শে জুলাই মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ৩০০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে তারা। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে সমাবেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পুলিশের এ ধরনের কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।