চট্টগ্রামে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তাদের ওপর হামলার অভিযোগ কেেরছ। গতকাল শুক্রবার (২৮ জুলাই) দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন চৌমুহনী এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ২১ জনকে আটক করেছে।
ডবলমুরিং থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পূর্বের অনুমতি ছাড়া আগ্রাবাদ বাদামতলি মোড় থেকে জামায়াত-শিবির মিছিল নিয়ে চৌমুহনীর দিকে আসে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিল থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভাঙচুর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সহকারী কমিশনারসহ (ডবলমুরিং) বেশ কয়েকজন পুলিশ হামলায় আহত হয়েছেন। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মিছিল থেকে ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে পুলিশ মিছিলের অনুমতি দেয়নি।
শান্তিপূর্ণ মিছিলে বাধা ও গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের
জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত দেশের মহানগরীসমূহে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বাধাদান ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান শুক্রবার এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তিনদফা দাবির ভিত্তিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। ২৮ জুলাই মহানগরীসমূহে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগরীর মিছিলে হানা দেয় ও ২১ জনকে গ্রেফতার করে। তাছাড়া ২৭ ও ২৮ জুলাই রাত ও দিনভার অভিযান চালিয়ে বগুড়া শহর থেকে ৫ জন, যশোর থেকে ৭ জন, বাগেরহাট থেকে ১১ জন, নওগাঁ থেকে ৪ জন, খুলনা মহানগরী থেকে ৩ জনসহ জামায়াতে ইসলামীর প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অভিযানকালে নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র তছনছ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি অপরিহার্য। সরকার তাতে বাধা দিয়ে মূলত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলসমূহকে কথা বলতে বাধা দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় না। সরকারের জেনে রাখা দরকার দেশের জনগণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন মেনে নিবে না।
তিনি বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের সেবক। তারা কোনো দলের নয়। তাই তারা নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। আমরা আশা করি, আগামী ৩০ জুলাই জেলা সদরে মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে সমাবেশের কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসন সহযোগিতা করবে। দেশের জনগণ সরকারের জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নেমে এসেছে। জনগণ তাদের দাবি আদায়ের জন্য আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামীর গ্রেফতার সকল নেতা-কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের জনগণের মূল দাবি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে রাতের ভোটে জবরদখলকারী সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি